মোদীকে তোপ দাগলেও ব্যাঙ্কের লাইনে নেই কংগ্রেসের নেতারা

নোট-বাতিলে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়লেও বরাক উপত্যকার কংগ্রেস নেতাদের ব্যাঙ্ক বা এটিএমের লাইনে দেখা যায়নি। প্রাক্তন মন্ত্রী সিদ্দেক আহমেদ বলেন, ‘‘নিজে টাকা তুলতে না গেলেও পরিবারের সদস্যরা লাইনে দাঁড়িয়েই নোট সংগ্রহ করেছেন।’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর ও করিমগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০৪:০১
Share:

নোট-বাতিলে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়লেও বরাক উপত্যকার কংগ্রেস নেতাদের ব্যাঙ্ক বা এটিএমের লাইনে দেখা যায়নি।

Advertisement

প্রাক্তন মন্ত্রী সিদ্দেক আহমেদ বলেন, ‘‘নিজে টাকা তুলতে না গেলেও পরিবারের সদস্যরা লাইনে দাঁড়িয়েই নোট সংগ্রহ করেছেন।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি কর্ণেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমি কখনওই ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে যাইনি। চেক সই করে ব্যাঙ্কে পাঠাতাম। অন্যরাই টাকা তুলে আনতেন। এখনও তাই চলছে।’’

তবে তাঁরা দাবি করেন, মানুষের দুর্ভোগ টের পান বলেই নোট-বাতিলের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। সিদ্দেকবাবু জানান, তাঁর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী এক দিন সকাল ১০টায় ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। বিকেল ২টোয় তাঁকে জানানো হয়— টাকা ফুরিয়ে গিয়েছে। সে দিন আর হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘নোট বাতিলের জেরে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত মানুষ দিশাহারা। দিনমজুররা ব্যাঙ্কে লাইন দিতে গিয়ে অনেক দিন কাজ করতে পারছেন না। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিক্রি কমে গিয়েছে। সিদ্দেকবাবু অভিযোগ করেন— কংগ্রেস নয়, বিজেপি নেতারাই কালো টাকা জমিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে কালো টাকা নিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু মুদ্রা-বদলের পর যে সব বড় কেলেঙ্কারি ধরা পড়েছে, তাতে জড়িতরা সবাই গেরুয়া সংগঠনে সক্রিয়। কেউ পুরনো ৫০০, ১ হাজার টাকার বিশাল বান্ডিল সরাতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। কেউ ২ হাজার টাকার নোটের তীব্র সঙ্কটের মধ্যেও কোটি টাকা মজুত করে ধরা পড়েছেন।’’ উদাহরণ হিসেবে তিনি মহারাষ্ট্রের বিজেপি মন্ত্রী পঙ্কজা মুণ্ডে ও তাঁর বোন সাংসদ প্রীতম মুণ্ডের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ১০ কোটি টাকার পুরনো ও ১০ লক্ষ টাকার নতুন নোট
উদ্ধারের কথা বলেন। টেনে আনেন সে রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী সুভাষ দেশমুখের গাড়িতে ৯১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পাওয়াপ কথাও।

Advertisement

নোট কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত পশ্চিমবঙ্গের মনীশ শর্মা এবং মধ্যপ্রদেশের সুশীল বাসানিকেও বিজেপি ঘনিষ্ট বলে অভিযোগ করেন সিদ্দেকবাবু। তাঁর অভিযোগ, কোনও ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত হচ্ছে না। বিজেপির কেন্দ্রীয় তহবিল স্ফীতির রহস্য উদ্ঘাটনেরও দাবি করেন কংগ্রেস নেতারা। শিলচর কংগ্রেস অফিসে আজ এ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন জেলা সভাপতি কর্ণেন্দু ভট্টাচার্য, পার্থরঞ্জন চক্রবর্তী, দীপন দেওয়ানজি, শরিফুজ্জামান লস্কর।

তাঁদের দাবি, ব্যাঙ্ক বা এটিএম থেকে টাকা তোলার উর্ধ্বসীমা তুলে দিতে হবে। ডিজিটাল লেনদেনে ‘চার্জ’ আদায় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। পার্থবাবু জানতে চান, সরকার দেশবাসীকে ডিজিটাল লেনদেনে বাধ্য করছে, সেখানে তাঁরা কেন ‘চার্জ’ দেবেন। পেটিএম-এর মতো অ্যাপ ব্যবহারে প্রতিটি লেনদেনে যে বাড়তি টাকা কাটা যায়, তা কোথায় যায়। ব্যাঙ্ক বা সরকারের ঘরে কি? নিজেই জবাব দিয়ে বলেন, ‘‘চার্জ হিসেবে কেটে নেওয়া অর্থ পায় ওই অ্যাপের পরিচালক বেসরকারি সংস্থা।’’ দীপনবাবুর অভিযোগ, গরিবের পকেট কেটে ব্যবসায়িক সংস্থাগুলিকে সন্তুষ্ট করার জন্য প্রধানমন্ত্রী একের পর এক পরিকল্পনা ঘোষণা করে চলেছেন।

অন্য দিকে, প্রদেশ কংগ্রেসের নির্দেশে রাজ্যের সব জেলায় নোট-বাতিলের বিরুদ্ধে সরব হলেন কংগ্রেসিরা।

আজ করিমগঞ্জের ইন্দিরা ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে স্বাধীনতার পর ভারতের ইতিহাসের নোট-বাতিলকে ‘সর্ববৃহৎ কেলেঙ্কারি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

শিলচরের কংগ্রেস নেতা সঞ্জীব রাই বলেন, ‘‘নোট বদল যদি সত্যি দুঃস্থদের কথা চিন্তা করেই করা হয়ে থাকে, তা হলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন সংসদে গিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন না?’’ তিনি অভিযোগ করেন, ৮ নভেম্বর নোট-বাতিলের কথা ঘোষণার দিনই কলকাতায় বিজেপি ৫০০ এবং ১ হাজার টাকার নোট মিলিয়ে ৩ কোটি টাকার ব্যাঙ্কে জমা দিয়েছে। তা ছাড়াও বিজেপি এবং আরএসএস মিলে কয়েকশো কোটি টাকার জমি কিনেছে। বিহারে ৮টি জমি কেনা হয়েছে ৩.১৪ কোটি টাকায়। ওড়িশাতেও ১৮টি জায়গায় জমি কিনেছে বিজেপি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী গরিবদের পেটের ভাত কেড়ে নিতে চাইছেন।’’ সাংবাদিক বৈঠকে জেলা কংগ্রেস সভাপতি সতু রায় ছাড়াও অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement