কংগ্রেসের ১৩৬তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদ্যাপন। ছবি পিটিআই।
প্রশ্নটুকু করতে যতক্ষণ। যেন দেশলাইয়ের কাঠি পড়ল জমে থাকা ক্ষোভের বারুদের পাহাড়ে!
কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসে রাহুল গাঁধী কেন গরহাজির—এই জিজ্ঞাসার উত্তরে রাজ্যসভায় দলের নেতা গুলাম নবি আজাদ সটান বলে দিলেন, ‘‘কেউ উপস্থিত থাকুন বা না-থাকুন, ১৩৬ বছর ধরে কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবস উদ্যাপন হচ্ছে।’’ বিরক্তি স্পষ্ট।
সকলে এমন প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। কিন্তু রাহুল গাঁধীর ফের আচমকা বিদেশযাত্রা নিয়ে কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসেই ঘরোয়া আলোচনায় ক্ষোভ উগরে দিলেন দলের বেশ কয়েক জন নেতা। দিল্লি সীমানায় কেন্দ্রকে চাপে ফেলা কৃষক আন্দোলন, দলের প্রতিষ্ঠা দিবস, তার উপরে সামনে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন—এই সমস্ত কিছুর মধ্যে রাহুলের ফের বিদেশযাত্রা নিয়ে প্রশ্ন করতেই আর এক নেতার উত্তর, ‘‘ছাড়ুন তো। দেশে থেকেই বা রাহুল কী করছিলেন? শুধু সকালে একটি করে টুইট? সে তো বিশ্বের যে কোনও শহরে বসে করা যায়।’’
অগস্টে ২৩ জন কংগ্রেস নেতা দলের হাল শোধরানোর দাবি জানিয়ে সনিয়া গাঁধীকে চিঠি লিখেছিলেন। গুলাম নবি ছিলেন তাঁদের অন্যতম মুখ। সনিয়া নয়, অভিযোগের তির ছিল রাহুলের দিকেই। তার জেরে পরে রাহুল অনুগামীদের পাল্টা নিশানার মুখেও পড়তে হয়েছে ওই ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতাদের। এ দিন প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে কংগ্রেসের সদর দফতরে দাঁড়িয়ে যেন তারই শোধ নিয়ে গেলেন গুলাম। বাকিরাও বোঝাতে চাইলেন, অভিযোগ অযৌক্তিক ছিল না।
‘বিক্ষুব্ধ’ ২৩ জন নেতার মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা এক সময় রাহুলের আস্থাভাজন বলে পরিচিত ছিলেন। এমনই এক নবীন প্রজন্মের নেতার মন্তব্য, ‘‘নেতাই দলের প্রধান মুখ। তাঁর সম্পর্কেই যদি আমজনতার মনে এমন ধারণা তৈরি হয় যে, তাঁর রাজনীতিতে মন নেই, তা হলে সেটি দলের জন্য সমস্যা।’’ আর এক প্রবীণ নেতার বক্তব্য, ‘‘রাহুল সভাপতি হতে না-ই চাইতে পারেন। তাঁর পুরোদস্তুর রাজনীতিতে থাকার ইচ্ছেও না থাকতে পারে। তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু মুশকিল হল, তিনি সভাপতি পদের দায়িত্ব না-নিয়ে পিছন থেকে সব নিয়ন্ত্রণ করছেন।’’ দায়িত্ব কাঁধে না-নিয়ে ক্ষমতা ভোগের এই অভিযোগ রাহুলের বিরুদ্ধে নতুন নয়।
উদাহরণ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোটে এআইসিসি-র আনুষ্ঠানিক সিলমোহরের ঘটনা তুলে ধরা হচ্ছে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়ার আগে রাহুল এআইসিসি-র লনে বসেই বাংলার পর্যবেক্ষক জিতিন প্রসাদ, প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেন। তারপরেই সিলমোহর দেন জোটে। অথচ দলের তরফে বলা হয়েছে, রাহুল প্রাথমিক আলোচনা করলেও, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সনিয়ারই। এআইসিসি-র এক সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘সনিয়া গাঁধী অন্তর্বর্তী সভানেত্রী ঠিকই। কিন্তু আমরা তো রাহুলকে রিপোর্ট করি।’’ এখানেই প্রশ্ন উঠছে, রাহুল এ ভাবে পিছন থেকে দল চালানোর চেষ্টা করছেন কেন?
রবিবার দুপুরে হঠাৎ রাহুলের বিদেশযাত্রার খবর মিলেছিল। রাতে দলের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা জানিয়েছিলেন, রাহুল ব্যক্তিগত কারণে কিছু দিনের জন্য বিদেশে গিয়েছেন। কিন্তু কোথায় বা কেন, তা রণদীপ জানাননি। আজ রাহুলের আর এক ‘আস্থাভাজন’, এআইসিসি-তে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল জানান, রাহুল দিদাকে দেখতে গিয়েছেন। তিনি গুরুতর অসুস্থ। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘রাহুলকে পার্টি যে দায়িত্ব দেয়, যে অনুষ্ঠানে যেতে বলে, উনি দলের নেতা হিসেবে সেখানে যান। উনি ছোট ব্যক্তিগত সফরে গিয়েছেন। তা-ও পরিবারের এক জন গুরুতর অসুস্থকে দেখতে। তা নিয়ে কেন নীচু স্তরের রাজনীতি করছে বিজেপি?’’
সমালোচকদের ব্যাখ্যা, রাহুল দিদাকে দেখতে ইটালি যেতেই পারেন। কিন্তু প্রতিবারই তিনি এমন সময়ে বিদেশ চলে যান যে, তাঁর নিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মানুষের মনে ভুল ধারণা তৈরি হয়। এই কারণে আরও সতর্ক হওয়া দরকার।
বিদেশে থাকলেও রাহুল এ দিন দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের পাশাপাশি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে টুইট করেছেন। বিজেপি নেতা তথা মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের কটাক্ষ, ‘‘যিনি কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন, যাঁকে ফের সভাপতি পদের জন্য ভাবা হচ্ছে, তিনিই দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে নেই। কতখানি দুর্ভাগ্যজনক!’’ বেণুগোপালের জবাব, ‘‘বিজেপির কাজই হল, রাহুলকে আক্রমণ করা।’’