সোনিয়া, রাহুল। ছবি: পিটিআই।
‘‘এমন ভাবে আগে কখনও অপমানিত হতে হয়নি’’— বলতে বলতে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন তামিলনাড়ু প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি কে এস আলাগিরি। ডিএমকে-র সঙ্গে আসন বোঝাপড়া নিয়ে কংগ্রেস নেতারা কথা বলতে গিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁদের এমন অপমানিত হতে হয়েছে।
ডিএমকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, ১৮ থেকে ২০টির বেশি আসন তারা কংগ্রেসকে ছাড়বে না। কিন্তু ডিএমকে-র সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে দলের প্রবীণ নেতাদের যে ভাবে অপমানিত হতে হয়েছে, তাতে কংগ্রেস নেতারা ক্ষুব্ধ। তাঁদের অধিকাংশেরই মত, এর পরে ডিএমকে-র নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বেরিয়ে গিয়ে একা ভোটে লড়া শ্রেয়।
এরই মধ্যে আজ পি চিদম্বরম-পুত্র কার্তি দাবি তুলেছেন, কন্যাকুমারী লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকে প্রার্থী করা হোক। বিধানসভা ভোটের সঙ্গেই ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে। কার্তি সরাসরি কংগ্রেস নেতৃত্ব ও প্রিয়ঙ্কার কাছে আর্জি জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, এতে বিধানসভা ভোটেও কংগ্রেসের ফায়দা হবে।
তামিলনাড়ুতে কংগ্রেস নেতারা যখন ডিএমকে-র সঙ্গে পুরনো জোট ছেড়ে বের হতে চাইছেন, তখন কেরলে রাহুল গাঁধীর নিজের লোকসভা কেন্দ্র ওয়েনাড় থেকে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরাই দল ছেড়েছেন! রাহুল সপ্তাহ খানেক আগেই ওয়েনাড় থেকে ফিরেছেন। তার পরেই সেখানকার জেলা কংগ্রেসের ও প্রদেশ কংগ্রেসের চার জন গুরুত্বপূর্ণ নেতা দল ছেড়েছেন বা দলের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। এর জন্য দলের অন্দরের কোন্দলকেই দায়ী করেছেন তাঁরা।
দুই মিলিয়ে দক্ষিণের দুই রাজ্য নিয়ে কংগ্রেস নতুন করে চিন্তায় পড়েছে। কেরল-তামিলনাড়ুতে প্রচারে গিয়ে রাহুল গাঁধী বলেছিলেন, দক্ষিণ ভারতের মানুষ উত্তর ভারতের তুলনায় অনেক বেশি তলিয়ে ভাবেন। সেই দক্ষিণ ভারতেই কংগ্রেস সঙ্কটে পড়ায় রাহুল-বিরোধী শিবির ফের দলের মধ্যে সরব হয়েছে। তবে কংগ্রেসের কাছে স্বস্তির কথা হল, বিক্ষুব্ধ-গোষ্ঠীর অন্যতম গুলাম নবি আজাদ আজ বলেছেন, কংগ্রেসের জয়ই তাঁর অগ্রাধিকার। পাঁচ রাজ্যের ভোটে দল যেখানে যেতে বলবে, তিনি সেখানেই প্রচারে যাবেন। আর এক বিক্ষুব্ধ বীরাপ্পা মইলি বলেছেন,
জি-২৩ নামে আলাদা কোনও গোষ্ঠী কংগ্রেসে নেই।
কংগ্রেস নেতাদের দাবি, ডিএমকে-র সঙ্গে আসন রফা নিয়ে জট কেটে যাবে। কেরলে ওয়েনাড়ের কিছু নেতার দলত্যাগেও বিশেষ প্রভাব পড়বে না। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কেরলে ফের বামেরা ক্ষমতায় ফিরতে পারেন বুঝেই কি কংগ্রেস নেতারা দল ছাড়ছেন? তামিলনাড়ুকে ডিএমকে-র জোট ত্যাগ করে একা লড়ে কংগ্রেস কী করতে পারবে?
ডিএমকে নেতৃত্বের সাফ যুক্তি, কংগ্রেসের আট জন সাংসদ রয়েছেন রাজ্য থেকে। সেই হিসেবে তাঁরা ২৪টির বেশি আসন কংগ্রেসকে ছাড়বেন না। কারণ দক্ষিণ তামিলনাড়ু ছাড়া কংগ্রেসের বিশেষ প্রভাব নেই। অন্য জায়গায় কংগ্রেসকে আসন ছাড়তে হলে ডিএমকে-র স্থানীয় নেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে এডিএমকে-তে গিয়ে যোগ দেবেন।