ফাইল চিত্র।
পঞ্জাবে ভোটের এখনও এক মাস দেরি। তারও প্রায় এক মাস পরে তার ফল ঘোষণা। অনেক সমীক্ষাই বলছে, কংগ্রেস নয়, আম আদমি পার্টি পঞ্জাবে সব থেকে বেশি আসনে জিততে পারে। কিন্তু কংগ্রেস নেতাদের তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। জয়ের আগেই কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তা নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে লড়াই তুঙ্গে। এক দিকে নভজ্যোত সিংহ সিধু তো অন্য দিকে চরণজিৎ সিংহ চন্নী। আর এক দিকে রয়েছেন কংগ্রেসে থেকে যাওয়া অমরিন্দর সিংহ শিবিরের নেতারা। বৃহস্পতিবার পঞ্জাবের প্রার্থী তালিকা নিয়ে বৈঠকে বসছে কংগ্রেস। তার আগে তিন শিবিরের বিবাদ কংগ্রেস হাইকমান্ডকে চিন্তায় ফেলেছে।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সিধু তাঁর ‘পঞ্জাব মডেল’ তুলে ধরতে সাংবাদিক বৈঠক করছেন। সেই মঞ্চে গান্ধী পরিবারের তিন সদস্যের সঙ্গে শুধুই সিধুর ছবি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চন্নীর ছবিও নেই। স্টেপ-আউট করে ছক্কা মারার ঢঙে সিধু বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা কংগ্রেস হাইকমান্ড ঠিক করবে না। করবেন রাজ্যের মানুষ।”
এখনও পর্যন্ত কংগ্রেসের অবস্থান, ভোটের আগে কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে না। সিদ্ধান্ত হবে ফলপ্রকাশের পরে। কিন্তু সুতোয় ঝুলে থাকা নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বস্তিতে থাকতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী চন্নী। তাঁর যুক্তি, মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম আগেভাগে ঘোষণা করে দেওয়া উচিত। যখন তা করা হয়নি, তখনই দল হেরেছে।
চন্নীকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল অমরিন্দরকে সরিয়ে। অমরিন্দর এর পরে দল ছেড়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলালেও, মণীশ তিওয়ারির মতো অমরিন্দর-ঘনিষ্ঠরা কংগ্রেসে থেকে গিয়েছেন। মণীশ আজ একই সঙ্গে সিধু ও চন্নীকে নিশানা করেছেন। এমনিতেই কংগ্রেসের মধ্যে বিক্ষুব্ধ বলে পরিচিত মণীশের মতে, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ভাবনাচিন্তা করতে সক্ষম কাউকে প্রয়োজন। যাঁরা জাতপাতের রাজনীতি, বিনোদন, বিনামূল্যে উপহারের রাজনীতি করেন, তাঁদের নয়। পরের পর ভোটে হারা উপর মহলের পছন্দের লোকেদেরও নয়। কংগ্রেস হাইকমান্ড বুঝতেই পারছে, মণীশ একই সঙ্গে টিভিতে কমেডি শো-এর পরিচিত মুখ সিধু ও দলিত নেতা চন্নীর খয়রাতির দিকে ইঙ্গিত করছেন। মণীশ অবশ্য মনে করছেন, মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণার দাবি তুলে চন্নী ঠিকই করেছেন। মণীশের যুক্তি, চন্নীকেই যখন ভোটের আগে ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তখন তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করা হবে না কেন?
এমনিতেই সিধু বনাম চন্নীর রেষারেষি, তার মধ্যে মণীশের ‘নারদ নারদ’ বচন— সব মিলিয়ে কংগ্রেস হাইকমান্ড পঞ্জাব নিয়ে চিন্তায় পড়েছে। কংগ্রেসের সামনে প্রশ্ন হল, চন্নীকে কি ভোটের পরে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব? সিধুকে মুখ্যমন্ত্রী করা না হলে তিনি কী করবেন? মণীশের মতো বিক্ষুব্ধ নেতাদের সম্পর্কেই বা কী নীতি নেওয়া হবে?
সিধু বলে দিয়েছেন, তিনি নিজের বিবেক ছাড়া কোনও রাম-শ্যাম-যদুর কাছে দায়বদ্ধ নন। চন্নীর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী দলের স্বার্থেই কথা বলছেন। মণীশের মতো নেতাদের বিরুদ্ধে আবার কংগ্রেসের অনেকেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চাইছেন। অভিযোগ, তিনি দলের ক্ষতি করছেন।
কংগ্রেস পঞ্জাব নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না নিলেও আজ আর এক ভোটমুখী রাজ্য উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কিশোর উপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিজেপির সঙ্গে গোপন আঁতাতের অভিযোগ তুলে তাঁকে দলের সব পদ থেকে বরখাস্ত করেছে। হরিশ রাওয়ত-সহ রাজ্যের নেতারা দলের মধ্যে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছিলেন।