গোয়ায় এর আগের বিধানসভা ভোটের অভিজ্ঞতা অবশ্য সুখকর নয় কংগ্রেসের
পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফল প্রকাশের আর সামান্য সময় বাকি। যে সব রাজ্যে ত্রিশঙ্কু হওয়ার সম্ভাবনা, সেখানে ইতিমধ্যেই কংগ্রেস তার প্রার্থীদের হোটেল বা রিসর্ট-এ ‘বন্দি’ রাখার কৌশল নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট দলের শীর্ষ নেতারা পৌঁছে গিয়েছেন যে যার দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্যে। নজরদারি তো চলছেই, তার সঙ্গে চলছে দফায় দফায় বিভিন্ন রাজনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে বৈঠক।
কংগ্রেসের এই তৎপরতা দেখে কটাক্ষ করে গোয়ার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ন্তের বক্তব্য, “এখনও তো ভোটই গোনা হয়নি। কংগ্রেসের এত ভয় পাওয়ার কী হল! তবে ক্ষমতায় আসছি আমরাই।” বিজেপিকে এখনও পর্যন্ত ‘রিসর্ট-কৌশলের’ সাহায্য নিতে দেখা যায়নি। দলীয় নেতৃত্বের দাবি, “আমাদের দল অটুট।”
গোয়ায় এর আগের বিধানসভা ভোটের অভিজ্ঞতা অবশ্য সুখকর নয় কংগ্রেসের। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সত্ত্বেও ঘর ধরে রাখতে পারেনি তারা। এ বারে কি সেই কারণেই অধিকতর সতর্ক সনিয়া গান্ধীর দল? দলের ক্যালাংগুট বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী মাইকেল লোবোকে সকালেই দেখা গিয়েছে বাম্বোলিন সৈকতে। সূত্রের খবর, সেখানকার একটি হোটেলে সমস্ত প্রার্থীদের শুধু নয়, সব গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে নিয়েই দফায় দফায় বৈঠক করা হচ্ছে। তাঁদের ঘরবন্দি করে নজরদারি বহাল রাখছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব।
ভোটের পর ‘ঘোড়া কেনাবেচার’ পরিস্থিতিতে এর আগে দক্ষ হাতে দুর্গ সামলেছেন কর্নাটকের কংগ্রেস প্রধান ডি কে শিবকুমার। তাঁকে বিশেষ পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে গোয়ায়। একই ভাবে মণিপুরে পাঠানো হয়েছে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মুকুল ওয়াসনিক এবং ছত্তীসগঢ়ের নেতা টি এস সিংহ দেওকে। পঞ্জাবে রয়েছেন কংগ্রেসের অজয় মাকেন এবং পবন খেরা। কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ দীপেন্দর সিংহ হুডা জানিয়েছেন, যদি কোনও রাজ্যে ফলাফল ত্রিশঙ্কু হয়, তা হলে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে জয়ী প্রার্থীদের নিয়ে যাওয়া হবে রাজস্থানে।
পঞ্জাবেও সতর্কতা এবং ভোট পরবর্তী ক্ষিপ্রতা বজায় রাখতে চাইছে কংগ্রেস। আজ চণ্ডীগড়ে কংগ্রেস নেতা এবং পর্যবেক্ষকরা বৈঠক করেন। প্রদেশ সভাপতি নভজোৎ সিংহ সিধু জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় কংগ্রেস বিধায়ক দলের প্রথম বৈঠক বসবে দলীয় কার্যালয়ে।
গোয়ার রাজনৈতিক শিবিরের মতে আগামিকালের ভোট-ফলাফলের পর সবচেয়ে চাহিদা বাড়বে মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টি বা এমজিপি-র। তারা তৃণমূল কংগ্রেসের জোট শরিকও বটে। মঙ্গলবারই গোয়া পৌঁছে গিয়েছেন তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও ব্রায়েন এবং ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। অন্য দিকে এমজিপি সূত্রে বলা হয়েছে, কংগ্রেস এবং বিজেপি— উভয়ের সঙ্গেই তারা কথাবার্তা চালাচ্ছে। কিন্তু শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনা করেই। এমজিপি-র নেতা সুদীন ধাভলিকর জানিয়েছেন, তিনি আশাবাদী যে, ফলাফল যা-ই হোক না কেন, সরকার গড়তে মুখ্য ভূমিকা থাকবে তাঁদেরই।
এই প্রসঙ্গেই রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, ভোটের আগে এবং ভোটের পরে এমজিপি-র বক্তব্যের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ করা যাচ্ছে যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আগে তারা বিজেপির সঙ্গে কোনও রকম জোটের সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এখন সুর বদলে বিজেপির সঙ্গে আলোচনার কথা বলছে। ধাভলিকরের কথায়, “আমরা নিশ্চিত দশের বেশি আসন পাব। তৃণমূলের সঙ্গে একত্রে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেব বৃহস্পতিবার বিকেল চারটেয় বৈঠক করে।” অবশ্য এমজিপি-র বিজেপিকে সমর্থন করার সম্ভাবনা সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের বক্তব্য, সরকার গড়তে বিজেপিকে সমর্থন করার কোনও প্রশ্নই উঠছে না।