রাহুল গান্ধী। ফাইল চিত্র।
নীতীশ কুমারকে এখনই বিরোধী শিবিরের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মেনে নেওয়ার প্রশ্ন খারিজ করে দিল কংগ্রেস। দলীয় নেতৃত্বের সাফ বক্তব্য, রাহুল গান্ধীই আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। কংগ্রেস কখনও বলেনি যে, নীতীশকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে সমর্থন করা হবে।
বিহারে নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে জেডিইউ, আরজেডি, কংগ্রেস, বাম দলগুলি এককাট্টা হওয়ার পর থেকেই নীতীশ ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী শিবিরের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হয়ে উঠতে পারেন বলে জল্পনা শুরু হয়েছে। কিন্তু বুধবার কংগ্রেসের সদর দফতরের মঞ্চ থেকে বিহারের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মদনমোহন ঝা বলে দিয়েছেন, ‘‘যখন এ রকম সরকার তৈরি হয়, তখন এমন ধারণাও তৈরি হয়। বিহারে অনেক বলেন, উনি হবেন। স্লোগানও উঠে যায়। কিন্তু নীতীশ কুমার কখনও বলেননি যে, তিনি প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী। আমরাও কখনও বলিনি যে, উনি আমাদের প্রার্থী। আমাদের প্রার্থী রাহুল গান্ধীই।’’
তবে ভবিষ্যতে এমন কোনও সম্ভাবনার কথা পুরোপুরি উড়িয়েও দিচ্ছেন না কংগ্রেস নেতারা। মদনমোহন ঝা বলেন, ‘‘এখনও লোকসভা নির্বাচনের অনেক দেরি। প্রায় দু’বছর। রাহুল গান্ধী সে সময়ে তখনকার প্রেক্ষিতে যাঁকে বলবেন, পুরো কংগ্রেস দল তাঁকেই সমর্থন করবে।’’ কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, এ কথা ঠিকই যে, বিহারে অ-বিজেপি সরকার গঠনের ফলে গোটা দেশেই ইতিবাচক বার্তা গিয়েছে। বিজেপিকে হারানো যায় বলে বোঝানো গিয়েছে। এখন মূলত আঞ্চলিক দলগুলি নীতীশ কুমারকে বিরোধী জোটের মুখ হিসেবে দেখতে চাইছে। সবটাই নির্ভর করছে লোকসভা নির্বাচনে কে কতগুলি আসনে জিতে আসছে, তার উপরে। যদি সত্যিই বিরোধীরা একজোট হয়ে সরকার গঠনের সম্ভাবনা তৈরি হয় এবং কংগ্রেসের ঝুলিতে সেই জোটে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যথেষ্ট আসন থাকে, তা হলে কংগ্রেস থেকেই কেউ প্রধানমন্ত্রী হবেন।
কংগ্রেসের অন্দরমহলে অবশ্য এখন যে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হল রাহুল গান্ধী না হয় কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। কিন্তু তিনি কি কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন? কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচনের সূচি অনুযায়ী, ২১ অগস্ট থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন হওয়ার কথা। তারই মধ্যে ৭ সেপ্টেম্বর কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু হচ্ছে। রাহুল সভাপতি হলে তার আগেই নির্বাচন সেরে ফেলতে হবে বলে কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন। কারণ রাহুল নিজে পদযাত্রায় অংশ নেবেন। ভারত জোড়ো যাত্রা-র আগে রাহুল ২২ অগস্ট নাগরিক সমাজের সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করবেন। কিন্তু রাহুল যে ফের সভাপতি হতে রাজি হয়েছেন, এখনও এমন দাবি কেউই করছেন না।
এই জটিলতার মধ্যেই বৃহস্পতিবার দিল্লিতে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক বসছে। বৈঠকে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত ও ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেল হাজির থাকবেন। কংগ্রেসের একাধিক নেতার মত, রাহুল একান্তই সভাপতি হতে না চাইলে গহলৌত সভাপতি হতে পারেন। রাহুলের সভাপতিত্বে তিনি সংগঠনের দায়িত্ব সামলেছেন। এ ক্ষেত্রেও রাহুল দলের মুখ হলেও গহলৌত সভাপতি হিসেবে সংগঠনের ভার সামলাতে পারেন। নরেন্দ্র মোদী, নীতীশ কুমারের মতো তিনিও ওবিসি নেতা। মুশকিল হল, গহলৌত রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পদ সচিন পাইলটকে ছেড়ে দিয়ে দিল্লিতে আসতে রাজি নন। এই পরিস্থিতিতে দলিত নেত্রী কুমারী শৈলজার মতো কারও নাম উঠে আসতে পারে বলে অনেকের ধারণা। কিন্তু এমন কাউকে কংগ্রেসের অনেকেই মানতে চাইবেন না। সে ক্ষেত্রে সনিয়াকেই সভানেত্রী হিসেবে রেখে দেওয়া হতে পারে। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, এর সবটাই জল্পনা। শীঘ্রই ছবিটা স্পষ্ট হবে।