মল্লিকার্জুন খড়্গে। —ফাইল চিত্র।
গান্ধী পরিবার তথা কংগ্রেস হাই কমান্ডের কোনও সমস্যা নেই। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী মঞ্চের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মল্লিকার্জুন খড়্গের নাম প্রস্তাব করায় নীতীশ কুমার অখুশি হতে পারেন বলে কংগ্রেস নেতৃত্ব আশঙ্কা করছেন। তার ফলে বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’-তে ফাটল ধরবে কি না, সেই আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
নীতীশই প্রথম বিরোধী মঞ্চ গঠনে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরা তো দূরের কথা, ‘ইন্ডিয়া’-র আহ্বায়ক হিসেবেও কেউ তাঁর নাম প্রস্তাব করেননি। তার উপরে খড়্গের নাম এসে পড়ায় নীতীশের নাম পিছনে চলে গিয়েছে। নীতীশের দলের নেতা আজ থেকেই ‘ইন্ডিয়া’ নিয়ে বেসুরো গাইতে শুরু করেছেন। মঙ্গলবারের বৈঠকের আগে পটনায় নীতীশকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার দাবিতে পোস্টার পড়েছিল। জেডিইউ সাংসদ সুনীল কুমার পিন্টু আজ বলেছেন, ‘‘মঙ্গলবার ইন্ডিয়া-র বৈঠকে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হবে ভেবে সবাই গিয়েছিলেন। কিন্তু চা-বিস্কুট খাওয়া ছাড়া আর কিছুই হয়নি।’’
মঙ্গলবার ‘ইন্ডিয়া’-র বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আচমকাই বিরোধী শিবিরের পদপ্রার্থী হিসেবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। আজ খড়্গের নাম প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘সবাই জিজ্ঞাসা করে, বিরোধী মঞ্চের মুখ কে? আমি খড়্গের নাম প্রস্তাব করেছিলাম। অরবিন্দ কেজরীওয়াল সমর্থন করেন। মল্লিকার্জুন খড়্গে বিরোধী মঞ্চের মুখ হলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।’’ এ নিয়ে নীতীশ কুমার অখুশি বলে জল্পনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মমতা বলেন, কেউ অসন্তুষ্ট কি না, তা তাঁর জানা নেই। খড়্গে নিজে মঙ্গলবারের বৈঠকে এই প্রস্তাবে বলেছিলেন, এ সব ভোটের পরে পরিস্থিতি তৈরি হলে ঠিক হবে। আম আদমি পার্টির নেতা রাঘব চাড্ডা বলেন, ‘‘আমাদের ধারণা, পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব নিয়ে এ বার আলোচনা, ভাবনাচিন্তা হবে। তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’’
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, মমতা কি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাহুল গান্ধীর নাম তাঁর অপছন্দ বুঝিয়ে দিতেই খড়্গের নাম প্রস্তাব করেছিলেন?
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত ‘ইন্ডিয়া’-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে সরাসরি কেউ কারও নাম বলেননি। এই প্রথম কারও নাম বলা হল। সেটা কংগ্রেস সভাপতির নাম। তাতে কংগ্রেসের কোনও আপত্তি থাকার কথাই নয়। বরং কোনও আঞ্চলিক দলের নেতার নাম প্রস্তাব করা হলে জটিলতা তৈরি হতে পারত। এতে রাহুলের কোনও সমস্যা নেই বলেও তাঁর ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতাদের দাবি। কারণ, রাহুল কোনও ভাবেই ২০২৪-এর ভোটে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন না। ২০১৯-এ কংগ্রেস এক বার তাঁর নেতৃত্বে লোকসভা ভোটে হেরেছে। ২০২৪-এ তাঁকে মুখ করে বিরোধী মঞ্চ পরাজিত হলে ফের গোটা দায় রাহুলের উপরেই এসে পড়বে। যদিও কংগ্রেসের নীতি হল, কাউকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রাথী না করে ‘ম্যায় নহি, হম’-এর নীতি নিয়ে ভোটে যাওয়া। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য স্বস্তির কথা হল, কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, প্রায় এক ডজন দল খড়্গের নামে সমর্থন জানিয়েছিলেন।
প্রশ্ন উঠেছে, ভোটের পরে কংগ্রেস বিরোধী জোটের বড় দল হলে তাদের কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেটা কি অন্য কেউ ঠিক করতে দিতে পারেন? সমাজবাদী পার্টির এক নেতার মন্তব্য, জোটের ক্ষেত্রে সেটা হতেই পারে। যুক্তফ্রন্ট সরকারের সময় যেমন বিরোধী নেতারা প্রথমে জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী করতে চেয়েছিলেন। তার সঙ্গে তাঁর দলের সম্পর্ক ছিল না। সিপিএম পরে প্রস্তাব নাকচ করে দেয়।
তবে মমতা, কেজরীওয়ালের এই প্রস্তাবের পিছনে বিরোধী জোটে ফাটল ধরানোর উদ্দেশ্য রয়েছে বলে বাম নেতাদের মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। কারণ, এত দিন যাবৎ এই দু’জনেরই কংগ্রেস সম্পর্কে ‘অ্যালার্জি’ ছিল। কংগ্রেস, এনসিপি, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার নেতারা অবশ্য তা মনে করছেন না বলে প্রকাশ্যে দাবি করছেন। এনসিপি-র এক নেতা বলেন, মমতা, কেজরীওয়াল সরাসরি খড়্গের নাম করেছিলেন। আরও পাঁচ-ছয়টি দল বিরোধী মঞ্চের কোনও মুখ বা নিদেনপক্ষে আহ্বায়ক থাকা প্রয়োজন বলে সওয়াল করেছিলেন।
এরই মধ্যে নীতীশ কুমারের নাম প্রস্তাব না হওয়ায় তাঁর গাত্রদাহ শুরু হয়েছে কি না, তা নিয়ে চর্চা শুরু। নীতীশ এমনিতেই মঙ্গলবারের বৈঠকে মেজাজ হারান। কারণ, নীতীশ হিন্দিতে বলার সময়ে ডিএমকে নেতারা তাঁর বক্তব্যের ইংরেজি অনুবাদ চেয়ে বসেন। পরিস্থিতি সামলাতে আরজেডি-র মনোজ ঝা বলেন, তিনি অনুবাদ করে দিচ্ছেন। চিরাগ পাসোয়ান আজ কটাক্ষ করে বলেছেন, নীতীশ দলিত বিরোধী। তাই তিনি রামবিলাস পাসোয়ানের বিরোধিতা করতেন। খড়্গে দলিত বলে নীতীশের তাঁর নাম পছন্দ হচ্ছে না। জেডিইউ সূত্রে খবর, নীতীশ ২৯ ডিসেম্বর দলের সাংগঠনিক বৈঠক ডেকেছেন। সেখানে ‘ইন্ডিয়া’ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।