ফাইল চিত্র।
সংসদে নিশানায় ছিল দেশের নিরাপত্তার ঝুঁকি ও বিদেশনীতির গাফিলতি। এ বার ‘অমর জওয়ান জ্যোতি’ নিভিয়ে দিয়ে নিহত জওয়ানদের ‘অপমানের’ প্রতিকারে ছত্তীসগঢ়ে নতুন অমর জওয়ান জ্যোতির শিলান্যাস করলেন রাহুল গান্ধী।
ইন্দিরা গান্ধীর আমলে একাত্তরের যুদ্ধের পরে ইন্ডিয়া গেটে তৈরি অমর জওয়ান জ্যোতি নিভিয়ে দেওয়ার পরেই রাহুল গান্ধী তার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। বলেছিলেন, ফের অমর জওয়ান জ্যোতি জ্বালানো হবে। এ বার ছত্তীসগঢ়ের কংগ্রেস সরকার রায়পুরে অমর জওয়ান জ্যোতি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাহুল আজ তার শিলান্যাস করেছেন। তারই মধ্যে বুধবার তাঁর সংসদের বক্তৃতা নিয়ে মোদী সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ, বিজেপি নেতা, এমনকি বিজেপিশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও রাহুলকে টানা আক্রমণ করে গিয়েছেন।
বুধবার সন্ধ্যায় রাহুল সংসদে বিজেপির ‘এক রাষ্ট্র’ তত্ত্বকে সমালোচনা করে বলেছিলেন, ভারত কোনও ‘এক রাষ্ট্র’ নয়, রাজ্যসমূহের সঙ্ঘ। বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে তার জন্য রাহুলের বিরুদ্ধে অধিকারভঙ্গের নোটিস এনেছেন। তাঁর নালিশ, ভারত ‘এক রাষ্ট্র’ নয় বলে রাহুল অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছেন।
মোদী জমানায় বিদেশনীতির গাফিলতির ফলে চিন-পাকিস্তান এককাট্টা হয়ে যাওয়ায় দেশের নিরাপত্তার বিপদ বেড়েছে বলেও রাহুল অভিযোগ তুলেছিলেন। তার পরেই বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, মোদী জমানায় চিন-পাকিস্তান এককাট্টা হয়েছে, এ কথা ভুল। সত্তরের দশক থেকেই চিন-পাকিস্তান এককাট্টা। আজ ইউপিএ সরকারের বিদেশমন্ত্রী নটবর সিংহও একই কথা বলেছেন।
উল্টো দিকে লোকসভায় কংগ্রেসের সচেতক মানিকম টেগোর যুক্তি দিয়েছেন, রাহুল গত কাল যা বলেছিলেন, আজ তা-ই ফুটে উঠেছে। কারণ পাক-প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বেজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিক্সে যোগ দিতে গিয়েছেন। চিনা নেতৃত্বের সঙ্গেও বৈঠক করছেন।
রাহুল নিজে আজও ফের টুইট করে বলেছেন, “চিন প্রথমে আমাদের দেশের জমি দখল করেছিল। এ বার আমাদের নাগরিকদের অপহরণ করে অত্যাচার করছে। মোদীজি চুপচাপ অচ্ছে দিনের অপেক্ষা করছেন। লজ্জাজনক!’’
এতেই শেষ নয়। নরেন্দ্র মোদী শাহেনশাহর মতো সাম্রাজ্য চালানোর ধাঁচে দেশ শাসনের চেষ্টা করছেন বলে আক্রমণ শানিয়ে গত কাল রাহুল বলেছিলেন, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন ও পেগাসাসকে হাতিয়ার করা হচ্ছে। আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু আজ তার পাল্টা বলেছেন, রাহুল ও কথা বলে বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশনকে অপমান করেছেন। হিমন্তবিশ্ব শর্মার মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও রাহুলকে নিশানা করেছেন।
কংগ্রেস নেতারা অবশ্য এই আক্রমণে বিচলিত নন। তাঁদের বক্তব্য, বিজেপি নেতারা এত দিন ভাব করতেন, তাঁরা রাহুলকে গুরুত্বই দিতে চান না। দেখা যাচ্ছে, সংসদে একটা বক্তৃতাই বিজেপি নেতৃত্বের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে। যুব কংগ্রেসের জাতীয় সভাপতি শ্রীনিবাস বি ভি বলেন, ‘‘মোদীজি টেলিপ্রম্পটার দেখে মিথ্যে পড়ে, মিথ্যে বলেন। রাহুল চোখে চোখ রেখে সত্যি বলেছেন বলেই এই অবস্থা।’’