ফাইল চিত্র
একসঙ্গে দুই রাজ্যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল কংগ্রেস হাইকমান্ড। পঞ্জাবের পরে এ বার ছত্তীসগঢ়েও হাইকমান্ড ইঙ্গিত দিল, মুখ্যমন্ত্রীকে সরানোর দাবি উঠলেও তা মানা হবে না।
ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেল আজ দিল্লিতে রাহুল গাঁধীর সঙ্গে দেখা করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়কের সমর্থন তাঁর সঙ্গেই রয়েছে। তিন ঘণ্টার বৈঠকে রাহুলকে ছত্তীসগঢ়ে গিয়ে তাঁর সরকারের কাজকর্ম দেখে আসার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন তিনি। পাঁচ বছরের সরকারে আড়াই বছর পরে তাঁর মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বৈঠকের পরে বঘেলের মন্তব্য, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেই আমি রাহুল গাঁধীকে ছত্তীসগঢ়ে যাওয়ার নিমন্ত্রণ জানিয়েছি।’’ রাতে কংগ্রেস সূত্রে ইঙ্গিত মিলছে, বঘেলই মুখ্যমন্ত্রী থাকছেন।
তুঘলক লেনে রাহুলের বাসভবনে যখন ছত্তীসগঢ়ের জট ছাড়ানোর চেষ্টা চলছে, সেই সময়ে ১০, জনপথে সনিয়া গাঁধী পঞ্জাবের সমস্যা নিয়ে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হরিশ রাওয়তের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। আর জনপথ, তুঘলক লেনের মধ্যে যাতায়াত করেছেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। পঞ্জাবের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নভজ্যোত সিংহ সিধু আজ কংগ্রেস হাইকমান্ডকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, হাইকমান্ড তাঁকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা না দিলে সব ধ্বংস করে ফেলবেন। সিধুর হুঁশিয়ারি, ‘‘ইট সে ইট বজা দেঙ্গে।’’ সনিয়ার চিন্তা বাড়িয়ে রাওয়ত জানিয়েছেন, তাঁকে পঞ্জাবের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। পঞ্জাবে মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ বনাম সিধুর বিবাদ সামলানোর বদলে তিনি নিজের রাজ্যে উত্তরাখণ্ডে আগামী বছরের ভোটে মন দিতে চান।
সিধুর অন্যতম উপদেষ্টা মলবিন্দর সিংহ মালি ‘ভারত ও পাকিস্তান বেআইনি ভাবে কাশ্মীর দখল করে রেখেছে’ বলে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। কংগ্রেস হাইকমান্ড হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, সিধু তাঁর উপদেষ্টাকে না সরালে দলের নেতৃত্বই তাঁকে সরিয়ে দেবেন। মালি আজ নিজেই পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু সিধু প্রকাশ্য সভায় কংগ্রেস হাইকমান্ডকে যে ভাবে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, তাতে কংগ্রেস নেতৃত্ব এর পরে কী ব্যবস্থা নেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সনিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পরে রাওয়ত বলেন, ‘‘আমি সভানেত্রীকে সব জানিয়েছি। উনি যা বলবেন, সবাই তা মেনে নেবে। পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’ সিধুর মন্তব্য নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ওঁর কথা বলার ধরন অন্য রকম।’’ কিন্তু কংগ্রেসের নেতারা মনে করছেন, দলের হাইকমান্ড ‘দুর্বল’ বলেই রাজ্যের নেতারা এ ভাবে চ্যালেঞ্জ ছুড়ছেন।
ছত্তীসগঢ়ে রাজ্যের মন্ত্রী টি এস সিংহদেও দাবি তুলেছিলেন, ২০১৮-য় সরকার গঠনের সময় প্রথম বছর বঘেল মুখ্যমন্ত্রী থাকার পরে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। বঘেল এখন গদি ছাড়তে রাজি হচ্ছেন না। চার দিন আগে বঘেলের সঙ্গে বৈঠকের পরে আজ ফের তাঁকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়। বঘেল নিজের ক্ষমতা দেখাতে অনুগামী মন্ত্রী-বিধায়কদের নিয়ে দিল্লি চলে আসেন। কংগ্রেস নেতৃত্বও বুঝতে পারছিলেন, আদিবাসী প্রধান ছত্তীসগঢ়ে ওবিসি নেতা বঘেলকে সরিয়ে সরগুজার রাজপরিবারের সন্তান, রাজপুত নেতা সিংহদেওকে মুখ্যমন্ত্রী করা কঠিন। এখন বঘেল মুখ্যমন্ত্রী থাকলে সিংহদেওকে কী ভাবে সামলানো হবে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে।
বঘেল যখন রাহুলের সঙ্গে বৈঠক করছেন, সে সময়ে তাঁর অনুগামী বিধায়করা বাস ভাড়া করে কখনও কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপালের বাড়ি, কখনও কংগ্রেস সদর দফতরে গিয়ে জানান দিয়েছেন, পরিষদীয় দলে বঘেলেরই পাল্লা ভারি। বঘেল রাহুলের বৈঠক থেকে বেরিয়ে তাঁদের সঙ্গে কংগ্রেস সদর দফতরেই বৈঠকে বসেন। তার আগে রাহুলের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই ‘আড়াই বছর করে গদি ভাগের চুক্তি’র কথা উড়িয়ে দেন। এআইসিসি-তে রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত পি এল পুনিয়াকে সাক্ষী রেখে তিনি বলেন, ‘‘উনি আগেই বলে দিয়েছেন, এমন কিছু ছিল না। আমি মনের কথা আমার নেতাকে জানিয়ে দিয়েছি। আমি রাহুল গাঁধীকে ছত্তীসগঢ়ে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। উনি আগামী সপ্তাহেই বস্তারে যাবেন।’’