Opposition Alliance

যার যেখানে শক্তি বেশি, সে সেখানেই লড়ুুক, মমতার জোটের সূত্র ‘অবাস্তব’, মনে করছে কংগ্রেস

মমতার শর্ত ‘আজগুবি’ বলে মনে করছেন এআইসিসি-র নেতারা। অবাস্তব শর্তের পিছনে প্রথমেই বিজেপি-বিরোধী জোট ঘেঁটে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কি না, তা নিয়েও কংগ্রেসের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী, অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৩ ০৬:৫৭
Share:

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস মাত্র ২০০টি আসনে লড়বে, এমন ভাবনা ‘অবাস্তব’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisement

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত কাল কংগ্রেসকে বিরোধী জোটের যে সূত্র দিয়েছেন, তা শুনে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা বলছেন, লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস নিজে মাত্র ২০০ আসনে লড়ে আঞ্চলিক দলগুলিকে প্রায় সাড়ে তিনশো আসন ছেড়ে দেওয়ার অর্থ, কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, তেলঙ্গানা বা অন্ধ্রপ্রদেশে কোনও প্রার্থীই দেবে না। সেটা কোনও ভাবেই হতে পারে না। একই ভাবে, তৃণমূল কর্নাটকে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার ডাক দিয়েছিল বলে কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে না— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন শর্তও ‘আজগুবি’ বলে মনে করছেন এআইসিসি-র নেতারা। অবাস্তব শর্তের পিছনে প্রথমেই বিজেপি-বিরোধী জোট ঘেঁটে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কি না, তা নিয়েও কংগ্রেসের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন।

তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোট সূত্র নিয়ে যা বলেছেন, তা তাঁর একার স্বর নয়। অরবিন্দ কেজরীওয়াল, অখিলেশ যাদব কিংবা কে চন্দ্রশেখর রাওয়েরাও একই ভাবে ভাবছেন। গত কাল মমতা বলেছিলেন, যেখানে যে আঞ্চলিক দল শক্তিশালী, সেখানে তারাই লড়াই করুক। কংগ্রেসের উচিত সেখানে তাদের সমর্থন করা। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবও আজ কার্যত একই সুরে বলেছেন, ‘‘নীতীশ কুমার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কে চন্দ্রশেখর রাও ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিরোধী ঐক্যের রাস্তা খোঁজার চেষ্টা করছেন। যেখানে যে দল মজবুত, সেখানে তার নেতৃত্বে নির্বাচনে লড়াই হবে।’’

Advertisement

তৃণমূলের হিসাব অনুযায়ী, আম আদমি পার্টি, সমাজবাদী পার্টি, বিআরএস-এর মতো আঞ্চলিক দলগুলি যে হেতু নিজ নিজ রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াই করে, তাই তারা লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের তৈরি করা মঞ্চে দাঁড়াতে স্বচ্ছন্দ নয়। কংগ্রেসের সঙ্গে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা রয়েছে। তারা বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দলের নেতাদের সঙ্গে বিজেপি-বিরোধী কৌশল রচনায় উৎসাহী। কর্নাটক বিধানসভার ফলাফলের আগে ও পরে এই আঞ্চলিক দলগুলি নিজেদের মধ্যে এবং তৃণমূলের সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে আলোচনা চালাচ্ছে বলে রাজনৈতিক সূত্রের খবর।

উল্টো দিকে কর্নাটকে সরাসরি লড়াইয়ে বিজেপিকে হারিয়ে উজ্জীবিত কংগ্রেস নেতৃত্বের মত, এক সময় তারা একাই লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ৪৫০টিতে লড়েছে। পরে পরিস্থিতি খারাপ হলেও অন্তত ৩৯০টি আসনে লড়েছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী ঐক্যকে অগ্রাধিকার দিলেও কংগ্রেসকে অন্তত ৩৭০টি আসনে লড়তে হবে। কারণ, শক্তি কমলেও সিংহভাগ রাজ্যেই কংগ্রেসের সংগঠন রয়েছে। শশী তারুর, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, মণীশ তিওয়ারির মতো কিছু নেতা মমতার তত্ত্বকে সমর্থন করেন। কিন্তু কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, তৃণমূল বেশ কিছু দিন ধরেই যে তত্ত্ব আওড়াচ্ছে, গত কাল মমতা সেটাই বলেছেন। কিন্তু কংগ্রেস নিজের লোকসান করে আঞ্চলিক দলগুলিকে ময়দান ছেড়ে দিতে পারে না।

তৃণমূলের পাল্টা বক্তব্য, কর্নাটকের জয়ের ফলে কংগ্রেসের বাড়তি শ্লাঘা বোধ করার কারণ নেই। মমতা সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন। কারণ, এর পরে রাজস্থানে কংগ্রেস হেরে যেতে পারে। গত কাল মহারাষ্ট্র, বিহারের প্রসঙ্গও তুলেছেন মমতা। তৃণমূলের বক্তব্য, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র এবং বিহারে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে লড়ছে যথাক্রমে ডিএমকে, এনসিপি-শিবসেনা, জেডিইউ-আরজেডি। এই রাজ্যগুলিতে কোথাও কংগ্রেস নেতৃত্বে নেই, বরং তারা জোটের ‘বি’ দল।

কংগ্রেসের পাল্টা যুক্তি, তৃণমূলেরও পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কোনও শক্তি নেই। তবুও তৃণমূল গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয়ে গিয়ে মূলত কংগ্রেসের দল ভেঙে ভোটে লড়েছে। এখন সেই কাজটা তিনি কর্নাটকে করেননি যুক্তি দিয়ে মমতা চাইছেন, কংগ্রেস সব আসন তৃণমূলকে ছেড়ে দিক। স্বাভাবিক ভাবেই অধীর চৌধুরীর পক্ষে তা মানা সম্ভব নয়। তাই তিনি এর বিরোধিতা করছেন।

কংগ্রেস শীর্ষনেতারা মনে করছেন, মমতা আসলে দর কষাকষি করতে চাইছেন। তাই দু’শো আসনের কথা বলে বলে প্রথমেই একটা চরম অবস্থান থেকে শুরু করেছেন। সেটা বুঝেই কংগ্রেস নেতারা মমতার জোটসূত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাইছেন না। তৃণমূল অবশ্য বলছে, একমাত্র অধীর চৌধুরী ছাড়া কংগ্রেসের কোনও নেতা এখনও মমতার জোট প্রস্তাব নিয়ে কোনও বিরূপ মন্তব্য করেননি। বরং সূত্রের খবর, মমতা জয়ের জন্য অভিনন্দন জানানোর পর কর্নাটকের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডি কে শিবকুমার তাঁকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। সবাই অপেক্ষা করছেন একসঙ্গে বসে জোট আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সে ক্ষেত্রে আগে থেকে জলঘোলা করলে আলোচনার পরিবেশই নষ্ট হয়ে যাবে। তৃণমূলের দাবি, অধীরের এহেন আচরণ কংগ্রেসের ভিতরেই অনেক নেতা পছন্দ করছেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement