ছবি: সংগৃহীত।
ফরাসি যুদ্ধবিমান রাফাল কেনার চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত দাবি করল কংগ্রেস।
শুক্রবার কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর সরকারকে দেশের কাছে রাফাল নিয়ে জবাবদিহি করতে হবে। জানাতে হবে, কেন সরকারি কোষাগার থেকে রাফাল কিনতে বাড়তি ২১,০৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হল। টুইট করে তোপ দেগেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীও। সম্প্রতি ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ অনুষ্ঠানে পড়ুয়াদের উদ্বেগমুক্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন মোদী। সেই প্রসঙ্গ টেনে টুইটে রাহুল লিখেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভয় ও উদ্বেগ সরিয়ে পরীক্ষা দিতে। তাঁকেও একই ভাবে এই প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে বলা হোক— (১) রাফাল কেলেঙ্কারিতে কে টাকা নিয়েছিল? (২) রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তিতে কে দুর্নীতি সংক্রান্ত শর্তটি বাদ দেয়? (৩) প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের গুরুত্বপূর্ণ নথি কে ‘মিডল্ম্যানের’ হাতে তুলে দিয়েছিল?
মূলত এই প্রশ্নগুলি সামনে রেখে আজ সাংবাদিক বৈঠক করে কংগ্রেস। আগেই রাহুলের অভিযোগ ছিল, ইউপিএ-সরকার যে রাফাল ৫২৬ কোটি টাকায় কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, মোদী সরকার তা ১,৬০০ কোটি টাকায় কিনেছে। ওই বিমান তৈরির জন্য ফরাসি সংস্থা দাসো-র কাছ থেকে বরাত পাওয়ায় বঞ্চিত হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যাল। তার বদলে অনিল অম্বানীর সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ কংগ্রেস ফের এই রহস্য সমাধানের জন্য তদন্ত দাবি করেছে। কংগ্রেস মুখপাত্রের দাবি, এ এক বিরাট দুর্নীতি। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, রাজ্যে ভোটের ভরা মরসুমে রাফাল-কাণ্ড থেকে রাজনৈতিক ‘মাইলেজ’ আদায় করতে আরও বেশি করে ঝাঁপাতে চলেছে কংগ্রেস। বিষয়টিকে নির্বাচনী প্রচারেও কাজে লাগানো হবে।
ফরাসি সংবাদমাধ্যমের দাবি, দাসো ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুতকারী সংস্থা এমবিডিএ ভারত এবং ফ্রান্সের সরকারের মধ্যে রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতি-বিরোধী শর্ত বাদ দিতে চাপ দিয়েছিল। ওই শর্ত অনুযায়ী, যদি বিমান নির্মাতার তরফে কোনও মধ্যস্থতাকারীকে টাকা দিয়ে চুক্তিতে প্রভাব খাটানোর কিংবা ভারত সরকারের কাছে ওই সংস্থাকে সুপারিশ করানোর প্রমাণ মিলত, তবে ভারত চুক্তি বাতিল করতে পারত। সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, এই শর্ত বাতিলের পিছনে কে রয়েছেন এবং এই শর্ত বাতিলের উদ্দেশ্য কী, তার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা রাজনৈতিক শীর্ষ পদে রয়েছেন, তাঁরা কেন নিজেদের দায়বদ্ধতা এবং দুর্নীতির প্রমাণ অস্বীকার করছেন?’’
ফরাসি সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ২০১৫ সালের জুলাইয়ে বিমানের অস্ত্র সংক্রান্ত চুক্তিতে ওই দুর্নীতি-বিরোধী শর্ত কার্যকর হবে না বলে জানান ফরাসি প্রতিনিধিরা। কিন্তু ভারতীয় প্রতিনিধিরা রাজি হননি। ২০১৬ সালের ১৩ জানুয়ারি রাফাল বিমান সরবরাহ করার চুক্তিতেও ফরাসি প্রতিনিধিরা দুর্নীতি-বিরোধী শর্ত কার্যকর করতে রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের নেতৃত্বে এক বৈঠকে ওই শর্ত কার্যকর না-করার সিদ্ধান্ত মেনে নেয় দিল্লি। কংগ্রেসের প্রশ্ন, এমন কী ঘটল, যাতে প্রথমে রাজি না-হয়েও পরে সিদ্ধান্ত বদলালেন ভারতীয় প্রতিনিধিরা? কিছু আড়াল করার জন্যই কি ওই মতবদল?