প্রতীকী ছবি।
রাজ্য রাজনীতিতে দু’দলের অহি-নকুল সম্পর্কের জের এসে পড়ল জাতীয় রাজনীতির মঞ্চেও। সিপিএমের আসন্ন পার্টি কংগ্রেস উপলক্ষে আলোচনা-সভায় অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করল কেরলের কংগ্রেস। এমনকি, জাতীয় স্তরের বিষয় বলে আলোচনায় যোগ দিতে উৎসাহী কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরকেও সিপিএমের ওই মঞ্চে যেতে নিষেধ করেছেন দলের সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী। কেরল প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের আপত্তির কারণেই সনিয়ার এমন পরামর্শ। যা মেনে নিয়ে তারুর সিপিএম নেতৃত্বকে তাঁর অপারগতার কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
দক্ষিণী ওই রাজ্যে গত বছর বিধানসভা ভোটে ইউডিএফের বিপর্যয়ের পরে কেরল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন কান্নুরের সাংসদ পি সুধাকরণ। সেই কান্নুরেই আগামী ৬ থেকে ১০ এপ্রিল হবে সিপিএমের ২৩তম পার্টি কংগ্রেস। কট্টর বাম-বিরোধী সুধাকরণের সঙ্গে তারুরের দ্বন্দ্বও চরমে। পাশাপাশি, দ্রুতগামী রেল প্রকল্প ‘সিলভার লাইন’ বা কে-রেল নিয়ে শাসক সিপিএম এবং বিরোধী কংগ্রেসের মধ্যে তুলকালাম চলছে। সংসদ চত্বরে বৃহস্পতিবারই ওই রেল প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে দিল্লি পুলিশের হাতে হেনস্থার অভিযোগ করেছেন কেরলের ইউডিএফ সাংসদেরা। এমন পরিস্থিতিতেই সিপিএমের আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিতে এআইসিসি ‘বাধ্য’ হয়েছে বলে কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যা।
পার্টি কংগ্রেসের অবসরে বিভিন্ন বিষয়ে একাধিক আলোচনাসভার আয়োজন করে সিপিএম। কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্পর্ক বিষয়ে এমনই একটি আলোচনাসভায় তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কংগ্রেসের দুই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কে ভি টমাস ও তারুর এবং প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা রমেশ চেন্নিতালাকে। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সুধাকরণ কড়া হুলিয়া জারি করেন, ‘প্রতিপক্ষ’ শিবিরের মঞ্চ থেকে দলের নেতা-কর্মীদের দূরে থাকতে হবে। বিতর্ক তৈরি হওয়ায় কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলেন তারুর। সনিয়া তিরুঅনন্তপুরমের সাংসদকে পরামর্শ দিয়েছেন, প্রদেশ কংগ্রেসের যখন প্রবল আপত্তি, তা হলে সিপিএমের ওই আলোচনায় না যাওয়াই ভাল।
তারুরের বক্তব্য, ‘‘আমি ওই আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে রাজি ছিলাম, কারণ কেন্দ্র-রাজ্যের সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতীয় স্তরে আমাদের দল এবং সিপিএমের অবস্থান একই। রাজ্যের জন্য স্পর্শকাতর কোনও বিষয় এটা নয়। কিন্তু দলের সভানেত্রীর মতকে সম্মান জানিয়ে উদ্যোক্তাদের আমার অংশগ্রহণ করতে না পারার কথা জানিয়ে দিয়েছি।’’
ব্যক্তিগত ভাবে তারুরের মত, রাজ্য এবং জাতীয় রাজনীতির সমীকরণকে প্রথমত এক করে দেখা ঠিক নয়। তা ছাড়া, প্রতিপক্ষ হলে তাদের সঙ্গে আলোচনাও বন্ধ রাখতে হবে— এমন অবস্থান সংসদীয় গণতন্ত্রে ঠিক নয়। তবে ‘সিলভার লাইন’ প্রকল্পের এক তরফা বিরোধিতা না করে উন্নয়নের স্বার্থও দেখা উচিত, এই কথা বলে প্রদেশ কংগ্রেসে শো-কজ়ের মুখে পড়ার পরে তারুর এ বার আর ঝুঁকি নেননি। ব্যক্তিগত অবস্থান থেকেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘পার্টি কংগ্রেস সিপিএমের সর্বোচ্চ নীতি নির্ণয়ের মঞ্চ, যার আয়োজন করে ওদের কেন্দ্রীয় কমিটি। সেখানে গিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে মত বিনিময় করাই যেত। কিন্তু দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না। তবু দলের কেউ কেউ এই নিয়ে প্রকাশ্যে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করছেন!’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ বিজয়রাঘবনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তার পরে এটা কংগ্রেসের বিষয়। আলোচনায় অংশ নেওয়া বা নেওয়া ওদেরই দলীয় সিদ্ধান্ত।’’
দিল্লিতে কেরলের কংগ্রেস-সহ ইউডিএফ সাংসদেরা যে দিন ‘সিলভার লাইনে’র প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন, সে দিনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে প্রকল্প সম্পর্কে আলোচনা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। কেন্দ্রের তরফে প্রধানমন্ত্রী সহায়তার ‘আশ্বাস’ দেওয়ায় তাঁকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন।