২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর মোদী সরকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ফাইল চিত্র।
নোটবন্দির পাঁচ বছর পূর্তিতে গতকালই নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকারকে নিশানা করেছিল কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। আজ, মঙ্গলবার ফের এ বিষয়ে সুর চড়াল তারা। অভিযোগ, বিশ্বের অর্থনীতির ইতিহাসে জঘন্যতম নীতি-বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর মোদী সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত।
নোটবন্দির যৌক্তিকতা নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে প্রশ্ন তুলে গিয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, শিবসেনা, বাম দলগুলি। বিরোধী শিবিরের জিজ্ঞাসা, যে সমস্ত লক্ষ্য পূরণের জন্য সাধারণ মানুষকে প্রবল সঙ্কট ও দুর্দশার মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, যার জন্য এত দিন ধরে এতখানি ধাক্কা খেল দেশের অর্থনীতি, তার ধারেকাছে আদৌ পৌঁছনো গেল কি? কোথায় ফেরানো গিয়েছে কালো টাকা? সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির হাতে পুঁজির জোগানই বা বন্ধ হল কোথায়? আজও একই ভাবে আক্রমণ শানিয়েছেন কংগ্রেসের শীর্ষ এবং প্রবীণ নেতারা।
মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং জয়রাম রমেশ যেমন আজ একযোগে মোদীর অর্থনীতির সমালোচনা করেছেন। জয়রামের কথায়, “মোদীজির নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে পাঁচ বছর পূর্ণ হল। বেকারত্ব বেড়েছে। ক্ষুদ্র শিল্প ধাক্কা খেয়েছে, অনেকগুলি ক্রমশ বন্ধও হয়ে গিয়েছে। উনি (মোদী) দেশের সুস্থ অর্থনীতিকে বিগড়ে দিয়েছেন নোট বাতিলের মাধ্যমে। এই সিদ্ধান্ত বিশ্বের অর্থনীতির ইতিহাসে জঘন্যতম নীতি-বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।”
বিরোধীদের বরাবরের অভিযোগ, নোটবন্দির হঠকারিতা এবং তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর কারণে মোদী জমানায় জোর ধাক্কা খেয়েছে ভারতীয় অর্থনীতি। এ দিন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম ফের বলেছেন, “নোট নাকচ এবং জিএসটি ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড গুঁড়িয়ে দিয়েছে। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্পের।’’ দীর্ঘ দিন ধরেই বিরোধীদের অভিযোগ, নোটবন্দি এবং জিএসটির ‘মুনাফা’ ঘরে তুলেছেন শুধু গুটিকয় ‘মোদী সরকার ঘনিষ্ঠ’ শিল্পপতি।
রাজ্যসভায় বিরোধী দল নেতা খড়্গে ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন তাঁর টুইটার হ্যান্ডলে। সেখানে তাঁর প্রশ্ন, “বিজেপির নেতা-মন্ত্রী ছাড়া এমন এক জনেরও নাম করতে পারবেন, যিনি নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে উপকৃত?” কংগ্রেস তার দলীয় টুইটার হ্যান্ডেলেও লিখেছে, ‘গত পাঁচ বছরে নোট বাতিলের ঘটনা শুধু সমস্ত লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হয়েছে তা-ই নয়, আমাদের অর্থনীতি, জীবনযাপন এবং ভবিষ্যৎকেও অন্ধকার করে দিয়েছে। সময় এসেছে, প্রধানমন্ত্রীকে এর জবাবদিহি করতে হবে।’
নোট নাকচের পরে খোদ মোদী বলেছিলেন, পরে এই সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হলে, তিনি শাস্তি মাথা পেতে নিতে রাজি। তাঁর দাবি ছিল, এর সুফল বোঝা যাবে দীর্ঘ মেয়াদে। কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়ে এ দিন কংগ্রেসের কটাক্ষ, ‘মোদীর জমানায় সব চেয়ে বেশি কী চোখে পড়ে? জাল নোট, জাল প্রতিশ্রুতি, জাল জাতীয়তাবাদ! ৫০ বা ৫০০ দিন নয়, নোট বাতিলের পরে পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। অথচ এমন দুর্নীতি চলছে, যা আগে দেখা যায়নি।’
উল্লেখ্য, গতকালই কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা টুইটে এই সিদ্ধান্তকে বিঁধেছিলেন। তাঁর প্রশ্ন ছিল, “নোট বাতিলের নীতি যদি সফলই হবে, তা হলে দুর্নীতি কেন শেষ হচ্ছে না? কালো টাকা কেন ফেরত এল না? কেন সন্ত্রাসবাদ এখনও চলছে? মূল্যস্ফীতিকেই বা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না কেন?’’ এ বিষয়ে মুখ খুলেছিলেন রাহুল গাঁধীও। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের মুখে এখন নোটবন্দির পাঁচ বছর পূর্তিতে এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ উস্কে দিতে তৎপর বিরোধীরা।