Congress

Congress-BJP: বিজেপিতে এলেই ৪০ কোটি, গোয়ায় কংগ্রেসে ভাঙনের নেপথ্যে গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক নেতা!

শনিবার রাতে পরিষদীয় দলের বৈঠকে দিগম্বর কামাত গরহাজির ছিলেন। রবিবার পরিষদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে ১১ জনের মধ্যে মাত্র পাঁচ জন ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২২ ০৬:৪৯
Share:

গোয়ার কংগ্রেস বিধায়করা। ছবি টুইটার।

এক জন কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং গান্ধী পরিবারের আস্থাভাজন বলে পরিচিত। অন্য জন বিধানসভায় কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা। দিগম্বর কামাত ও মাইকেল লোবো—গোয়ার এই দুই শীর্ষ কংগ্রেস নেতা মিলে দলের বিধায়কদের ভাঙিয়ে নিয়ে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ‘ষড়যন্ত্র’ করছিলেন। এক এক জন কংগ্রেস বিধায়ককে বিজেপি ৪০ কোটি টাকা করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। আজ কংগ্রেস নেতৃত্বই দলের দুই নেতার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ জানিয়েছেন।

Advertisement

গোয়ায় এখন বিজেপিরই সরকার। তা সত্ত্বেও বিজেপি গোয়ায় কংগ্রেসের ১১ জন বিধায়কের সিংহভাগকে ভাঙিয়ে নেওয়ার ছক কষেছিল বলে কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ। এআইসিসি-তে গোয়ার ভারপ্রাপ্ত নেতা দীনেশ গুন্ডু রাও নিজেই দলের দুই নেতার ‘ষড়যন্ত্র’-র কথা জানিয়ে মাইকেল লোবোকে বিরোধী দলনেতার পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। তাঁর দাবি, বিজেপির হয়ে কামাত ও লোবোর কংগ্রেস ভাঙানোর চেষ্টা আটকানো গিয়েছে। ১১ জনের মধ্যে ৬ জন বিধায়ক কংগ্রেসের সঙ্গেই রয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেস সূত্রের খবর, বেশ কিছু কংগ্রেস নেতা বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাবন্তের সঙ্গে দেখা করে বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন। সন্ধ্যায় লোবো ও তাঁর স্ত্রী সাবন্তের সঙ্গে দেখা করেন। কংগ্রেস সূত্রের মতে, পাঁচ জন বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। রাতে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল জানান, গোয়ার পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে সাংসদ মুকুল ওয়াসনিককে পাঠাচ্ছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী।

শনিবার রাতে কংগ্রসের পরিষদীয় দলের বৈঠকে দিগম্বর কামাত গরহাজির ছিলেন। রবিবার পরিষদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে ১১ জনের মধ্যে মাত্র পাঁচ জন ছিলেন। ফলে বৈঠক বাতিল করতে হয়। এর পরে পাঁচ জন বিধায়ককে নিয়ে বৈঠক করেন এআইসিসি-র নেতা রাও।

Advertisement

গোয়ার বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস প্রার্থীরা কেউ গির্জায় গিয়ে, কেউ মন্দিরে বা দরগায় গিয়ে শপথ করেছিলেন, বিধায়ক হয়ে জিতে এলে তাঁরা অন্য দলে যাবেন না। তার পরেও গোয়ার শীর্ষ কংগ্রেস নেতারাই বিজেপির দিকে পা বাড়িয়েছেন। গোয়ার কংগ্রেস নেতা গিরিশ চোড়াণকরের অভিযোগ, কংগ্রেস বিধায়কদের দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য ৪০ কোটি টাকা করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিধায়কেরাই এ কথা জানিয়েছেন। বিজেপির হয়ে গোয়ার শিল্পপতি, কয়লা মাফিয়ারা কংগ্রেস বিধায়কদের ফোন করে এই প্রস্তাব দেন। গোয়ার বিজেপি রাজ্য সভাপতি সদানন্দ তানাভড়ে অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কিন্তু এআইসিসি নেতা রাওয়ের বক্তব্য, ‘‘দিগম্বর কামাত ও মাইকেল লোবো, বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করেই কাজ করছিলেন। কামাতের বিরুদ্ধে বিজেপি সরকার এত মামলা করেছে যে তিনি নিজেকে বাঁচাতে চাইছেন। অন্য দিকে লোবো ক্ষমতা ও পদের জন্য দল ভাঙাচ্ছিলেন।’’

সম্প্রতি শিবসেনার বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের সঙ্গে জোট করে বিজেপি মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করেছে। পাশের রাজ্য গোয়াতেও বিজেপি কংগ্রেসের বিধায়কদের ভাঙানোর চেষ্টা করছে বলে গত দু’দিন ধরেই জল্পনা চলছিল। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছিল, মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেসের সরকার ফেলতে বিজেপি বিক্ষুব্ধ শিবসেনা বিধায়কদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। কিন্তু গোয়াতে তো বিজেপিরই সরকার চলছে। চলতি বছরেই গোয়ার বিধানসভা নির্বাচনে ৪০টির মধ্যে ২০টি আসনে জিতে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে। বিরোধী দল কংগ্রেসের বিধায়ক মাত্র ১১ জন। সেই কংগ্রেসের বিধায়ক ভাঙিয়ে বিজেপির কী লাভ?

কংগ্রেস নেতারাও শনিবার থেকে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দলের মধ্যে ভাঙনের কথা অস্বীকার করেছিলেন। খোদ লোবো বলেছিলেন, ‘‘এ সব বিজেপির রটনা। কেউ কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যাচ্ছেন না।’’ কংগ্রেসের দাবি ছিল, কামাত-লোবোর পরিকল্পনা ছিল কংগ্রেসের বিধায়ক দলের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যকে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া। যাতে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর না হয়। কোনও বিধায়ককেই পদত্যাগ করতে না হয়। গোয়াকে বিরোধী শূন্য করে দিয়ে ২০১৯-এর ভোটে গোয়ার দুটি লোকসভা আসনে জয় নিশ্চিত করতে চায় বিজেপি। এআইসিসি-র নেতার দাবি, যাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যাবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে বিধায়ক পদ খারিজের দাবি জানানো হবে।

চলতি বছরের গোড়ায় গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলও লড়াই করেছিল। তৃণমূল নিজে কিছু করতে না পারলেও কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, কংগ্রেসের ভোট কেটে তৃণমূল বিজেপির সুবিধে করে দিয়েছে। আজ গোয়ার কংগ্রেস বিধায়কেরা বিজেপির দিকে পা বাড়ানোর সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেছেন, ‘‘বিজেপি ও কংগ্রেস সমান সমান। গোয়ার মানুষ, আপনারা কয়েক মাস আগে গোয়ার ভোটের আগে তৃণমূলের এই সাবধানবাণীতে কান দেননি।যা-ই হোক, আমরা গোয়ার মানুষের পাশে থাকব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement