বিরোধী শিবিরের কিছু দল গোপনে শাসক দলকে সাহায্য করছে বলে নাম না করে তৃণমূলকে নিশানা করেছিলেন কংগ্রেস নেতারা। ফাইল চিত্র।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের মতাদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কংগ্রেস পাল্টা তৃণমূলের বিরোধী চরিত্র নিয়ে সংশয় জানিয়েছিল। দু’দিনের চাপানউতোরের পরে আজ কংগ্রেস ইডি-হানার চাপে স্বর নামাল। উল্টো দিকে তৃণমূল জানাচ্ছে, তারা ‘কাউকে’ বাদ দিয়ে বিরোধী জোটের কথা কখনও ভাবেনি। সেইসঙ্গে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তৃণমূলের অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সার্বিক জোটের প্রস্তাব দিলেও কংগ্রেসের সাড়া মেলেনি।
রবিবারই বিরোধী শিবিরের কিছু দল গোপনে শাসক দলকে সাহায্য করছে বলে নাম না করে তৃণমূলকে নিশানা করেছিলেন কংগ্রেস নেতারা। তাঁরা বলেছিলেন, কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিরোধী জোট সম্ভব নয়। আজ এর জবাবে তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায়ের প্রতিক্রিয়া, “কংগ্রেসকে বাদ দেওয়ার কথা তো তৃণমূল কখনওই বলেনি। বরং নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম দিন থেকে বক্তব্য, প্রয়োজনে তিনি লাইনের একেবারে শেষে দাঁড়াবেন। কিন্তু যে যেখানে শক্তিশালী সেখানে সেই দলকে গুরুত্ব দিয়ে একজোট হওয়ার বার্তাই দিয়েছেন তিনি। কংগ্রেস কিন্তু এই ব্যাপারে তার কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।”
দু’দিন আগে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার কংগ্রেসকে বিরোধী জোট নিয়ে সক্রিয় হতে বলেছিলেন। কংগ্রেস বলেছিল, আগে তাদের দল শক্তিশালী করতে হবে। আজ অবশ্য গত কালের থেকে কিছুটা স্বর নামিয়েছে। দলের মহাঅধিবেশনের চারদিন আগে ছত্তীসগঢ়ে ইডি-র হানার জেরে আজ কংগ্রেসের মুখে নতুন ভাবে বিরোধী জোটের কথা শোনা গিয়েছে। সোমবার ইডি-র হানার পরে কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ, পবন খেরা সব বিরোধী দলকেই ইডি-র হানার প্রসঙ্গ তুলে এক ছাতার তলায় আনার চেষ্টা করেছেন। তাঁদের যুক্তি, ইডি শুধু কংগ্রেস নয়, তৃণমূল-সহ সব বিরোধী দলকেই নিশানা করছে। ২০১৪ থেকে ইডি ২৪ বার কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে তল্লাশি চালিয়েছে। তারপরেই রয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ইডি ১৯ বার তল্লাশি চালিয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী, মুকুল রায় বা হিমন্তবিশ্ব শর্মার মতো নেতাদের বিরুদ্ধে সারদা-নারদ মামলায় অভিযোগ ছিল। বিজেপিতে যোগ দিতেই তাঁদের বিরুদ্ধে সিবিআই-ইডি হাত গুটিয়ে ফেলেছে। অন্য দিকে কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল বলেছেন, কংগ্রেসের একার পক্ষে এই সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব নয়। বিরোধী জোট দরকার।
কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, ‘‘২০১৪ থেকে ইডি ৩,০১০ বার তল্লাশি চালিয়েছে। তার মধ্যে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে যত তল্লাশি হয়েছে তার ৯৫ শতাংশের নিশানায় ছিলেন বিরোধীরা। কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে ২৪ বার ইডি তল্লাশি চালিয়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ১৯ বার ইডি তল্লাশি হয়েছে।’’ জয়রাম রমেশ মনে করিয়েছেন, ইডি-র প্রবল ক্ষমতায় সুপ্রিম কোর্ট সিলমোহর দেওয়ার পরে ১৭টি রাজনৈতিক দল তা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল। তার মধ্যে তৃণমূল, আম আদমি পার্টিও ছিল। বেণুগোপাল বলেন, ‘‘কংগ্রেসও বিরোধী জোট নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গে বারবার বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কংগ্রেস একা লড়তে পারবে না। বিরোধী ঐক্য প্রয়োজন।’’
তৃণমূল মুখপাত্র সুখেন্দুশেখরের এই নিয়ে বক্তব্য, “দেরিতে হলেও কংগ্রেসের যে বোধোদয় হয়েছে সেটা ইতিবাচক দিক।” তবে সেইসঙ্গে মতাদর্শের প্রশ্নে তৃণমূলের বিজেপি-র সঙ্গে অতীতে হাত মেলানোর কংগ্রেসি অভিযোগকে তিনি খন্ডন করেছেন। তাঁর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিজেপি-র সমর্থন নিতে হয়েছিল কারণ কংগ্রেস সিপিএমের বি টিম হিসাবে কাজ করছিল। পশ্চিমবঙ্গে বামকে ক্ষমতাচ্যূত করতে হলে শত্রুর শত্রুর সঙ্গেও বন্ধুত্ব করতে হয়। এটা কোনও আদর্শগত নয়, কৌশলগত বিষয়।”