লাদাখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র
পূর্ব লাদাখের প্যাংগং লেকে ফের চিনা আগ্রাসনের খবর সামনে আসতেই সরকারপক্ষকে তীব্র আক্রমণ শানাল কংগ্রেস। রবিবার প্রধানমন্ত্রীর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর খেলনা হাব ও দেশীয় সারমেয় মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে কটাক্ষ করলেন কংগ্রেস নেতা জয়বীর শেরগিল। খেলনা আর পথকুকুরের প্রতি ভালবাসা শুধু দেশবাসীর নজর ঘুরিয়ে দিতে পারে— আক্রমণ শেরগিলের। তীব্র সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালাও। ‘কংগ্রেসই চিনের প্রতি নমনীয়’ বলে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র।
গালওয়ান উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষের পর দু’পক্ষের সামরিক ও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত সংঘাত অনেকটাই থিতিয়ে এসেছিল। কিন্তু ফের চিনা বাহিনী প্যাংগং লেক এলাকায় আগ্রাসনের চেষ্টা চালায় বলে সোমবার খবর মেলে। ভারতীয় সেনার তরফে জানানো হয়, নয়াদিল্লি-বেজিং সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার মাধ্যমে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে একটা ঐকমত্যে পৌঁছনো গিয়েছিল। কিন্তু ২৯-৩০ অগস্ট রাতে সেই স্থিতাবস্থা লঙ্ঘনের চেষ্টা করে। উস্কানিমূলক সামরিক পদক্ষেপ করে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। যদিও ভারতীয় সেনা তা রুখে দিয়েছে।
এই খবর সামনে আসতেই ফের মোদী সরকারের দুর্বলতা নিয়ে আক্রমণ শুরু করেন কংগ্রেস নেতারা। পঞ্জাবের কংগ্রেস নেতা তথা কংগ্রেসের মিডিয়া সেলের মুখপাত্র জয়বীর শেরগিলের টুইট, ‘‘ক্রমাগত স্থিতাবস্থা নষ্ট করে আগ্রাসনের চেষ্টা চালাচ্ছে চিন। কিন্তু বিজেপি সরকার সেটা স্বীকার করতেও দ্বিধাগ্রস্ত। আত্মনির্ভর, খেলনা আর ভারতীয় কুকুরপ্রীতি জনতার নজর ঘুরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু চিনকে তাড়ানোর কৌশল ও পরিকল্পনার সঙ্গে সেটা গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়।’’
আরও পড়ুন: প্যাংগংয়ে ফের ঢোকার চেষ্টা চিনের, আটকে দিল ভারতীয় সেনা
গতকাল রবিবারই রেডিয়োতে মাসিক ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ভারতের খেলনা হাব হয়ে ওঠার মতো সম্ভাবনা রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীতে সারমেয়দের ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে দেশীয় কুকরদের প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। আবার করোনাভাইরাস ও লকডাউনের জেরে দেশের অর্থনীতির হাল ফেরাতে ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’ প্রকল্পে ২০ লক্ষ কোটির আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন মোদী। এই তিন প্রসঙ্গকেই লাদাখের পরিস্থতির সঙ্গে জুড়ে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেসের এই আইনজীবী নেতা।
কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, আর কবে রক্তচক্ষু দেখাবেন মোদী? তিনি লিখেছেন, ‘‘ভারতীয় ভূখণ্ড দখলের চেষ্টার আরও এক ঘৃণ্য নজির। প্রতিদিন চিন নতুন নতুন অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে— গোগরা ও গালওয়ান উপত্যকা, দেপসাং, লিপুলেখ, ডোকলাম, নাকুলা গিরিপথ। ভারতমাতাকে রক্ষা করতে সেনার কোনও নড়চড় নেই। কিন্তু মোদিজী আর কখন তাঁর রক্তচক্ষু দেখাবেন?’’
আরও পড়ুন: চিন কখনও সীমা লঙ্ঘন করে না, ভারতের অভিযোগ উড়িয়ে দাবি বেজিংয়ের
তবে কংগ্রেসের আক্রমণের জবাবে বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদী দেশের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে কখনও সমঝোতা করবেন না। আমাদের রক্তচক্ষু আছে। কিন্তু কংগ্রেস কেন চিনের প্রতি নমনীয় মনোভাব দেখায়?’’ অন্য দিকে কেন্দ্রের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ভারতীয় সেনা সব সময়ই শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রেখে আলোচনায় বিশ্বাসী। একই সঙ্গে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে বদ্ধপরিকর।’’