মানিক ফেলে মোদীর তিরে এ বার কংগ্রেস

 মোদীও আজ শান্তিরবাজার এবং আগরতলার জোড়া সমাবেশে একই কৌশল নিয়েছেন। যার ফলে কাল, শুক্রবার প্রচারের শেষ দিনে রাহুল গাঁধীর সফর আরও কৌতূহলের কেন্দ্রে চলে গিয়েছে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

আগরতলা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:০৪
Share:

এক মালায়: ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটের প্রচারে নরেন্দ্র মোদী। পাশে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বিপ্লব দেব। বৃহস্পতিবার আগরতলার বিবেকানন্দ ময়দানে। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।

ভোটে এ বার তাঁদের স্লোগান, ‘চলো পাল্টাই’। ভোটের আগে সাত দিনের মধ্যে নিজের সুরও পাল্টে নিলেন নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

ঠিক এক সপ্তাহ আগে ত্রিপুরায় প্রচারে এসে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিকে সরাসরি আক্রমণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ডাক দিয়েছিলেন আঙুলের অকেজো পাথরের মতো মানিক ফেলে ‘হিরা’ নিয়ে আসার। কিন্তু ভোটের তিন দিন আগে রাজ্যে ফের এসে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণের রাস্তায় আর হাঁটলেন না তিনি। বরং, অনেক বেশি মনোযোগ দিলেন কংগ্রেস-বাম ‘সমঝোতা’কে বিঁধতে!

বিজেপি সূত্রের খবর, ব্যক্তি মানিককে আক্রমণ করে ত্রিপুরার ভোটে হিতে বিপরীত হতে পারে, এই বার্তা পৌঁছেছে মোদীর কাছে। দু’দিন আগে রাজ্যে এসে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ রিপোর্ট পেয়েছেন, কংগ্রেস আসন-পিছু অল্প করে ভোট পেয়ে বামেদের জন্য সহায়ক হয়ে উঠতে পারে! তখন থেকেই কংগ্রেস-তৃণমূলকে ‘ভোট কাটুয়া’ বলে আক্রমণ শুরু করেছেন শাহ। মোদীও আজ শান্তিরবাজার এবং আগরতলার জোড়া সমাবেশে একই কৌশল নিয়েছেন। যার ফলে কাল, শুক্রবার প্রচারের শেষ দিনে রাহুল গাঁধীর সফর আরও কৌতূহলের কেন্দ্রে চলে গিয়েছে।

Advertisement

মোদীর অভিযোগ, কেন্দ্রে বামেদের ‘বন্ধু’ কংগ্রেসের সরকার ছিল বলেই ত্রিপুরায় তারা ২৫ বছর উন্নয়ন না করেও রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে! প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘দিল্লিতে কংগ্রেস-কমিউনিস্ট দোস্তি আর ত্রিপুরায় কুস্তির নাটক! বাংলায় কংগ্রেস আর বামপন্থীরা একসঙ্গে মিলে ভোট করেছিল। এখানে কংগ্রেস ভোটে লড়ার নাটক করছে! বামফ্রন্ট আর কংগ্রেস আলাদা নয়।’’ শান্তিরবাজারের সভায় অতি উৎসাহে মোদী বলে ফেলেছিলেন, কেরলেও তারা একসঙ্গে ভোটে লড়ে! পরে বিজেপি নেতারা ধরিয়ে দেওয়ায় আগরতলায় ‘ভুল শুধরে’ নিয়ে আর কেরল প্রসঙ্গে যাননি মোদী।

ভিড়ে ঠাসা দুই সমাবেশেই প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, বামেদের সরকার কেন্দ্রের কাছ থেকে টাকা পেয়েও উন্নয়নে ব্যর্থ। রোজভ্যালি-সহ নানা দুর্নীতির ঘটনায় বাম নেতারা টাকা লুঠ করেছেন। মোদীর বক্তব্য, ‘‘গণতন্ত্রের নামে বামেরা গান-তন্ত্র (বন্দুকরাজ) চালাচ্ছে! দলতন্ত্র কায়েম করেছে। ভোটের দিন এমন ভাবে এদের ছুড়ে ফেলুন, যাতে আর কখনও ফিরে আসতে না পারে!’’ আগরতলার বিবেকানন্দ ময়দানে প্রধানমন্ত্রীর আরও মন্তব্য, ‘‘এখানে ট্রাফিক সিগন্যাল বসেছে। আপনার যত ভাল কাজই করার থাক, যত তাড়া থাক, লাল বাতিতে আপনাকে আটকাতেই হবে। এখানেও উন্নয়ন হবে, যদি এই দুই রঙের (উত্তরীয়ের সবুজ-কমলা দেখিয়ে) আলো জ্বালাতে পারেন!’’

বামেদের তুলোধোনা করে মোদী বিমানবন্দরের দিকে রওনা হতেই সন্ধ্যায় আগরতলার সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী জবাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। মানিকবাবুর বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলে কথা! ওঁকে তো মিথ্যাবাদী বলতে পারি না। কিন্তু যা বলেছেন, সব অসত্য! কংগ্রেসের সঙ্গে বামফ্রন্টের সমঝোতা হয়েছে, বাম সরকার কোনও কাজ করেনি, দুর্নীতি করেছে, ১০০ দিনের কাজে মজুরি কমিয়ে দিয়েছে— এ সব তথ্যই অসত্য। একটু তথ্য জেনে এলে ভাল করতেন!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement