গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
পেট্রল ও ডিজেলের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি এবং তা নিয়ে সোমবার দেশ জুড়ে বন্ধের সঙ্গেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বেড়ে চলেছে টুইট যুদ্ধের উত্তাপ। সোমবার থেকে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে এ নিয়েই চলছে লাগাতার টুইট ও পাল্টা টুইট। লড়াইয়ের বিষয়বস্তু, পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য আসলে কে দায়ী, ইউপিএ নাকি এনডিএ?
সোমবার দিনের শুরুতেই বিষয়টি নিয়ে বিশেষ কিছু করার নেই বলে কেন্দ্রের তরফে দায় সেরেছিলেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। সরকারের যুক্তি ছিল উৎপাদন শুল্ক না কমালে তেলের দাম কমবে না। কিন্তু আর্থিক বর্ষের মাঝামাঝি এসে উৎপাদন শুল্ক কমালে সরকারকে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে হবে। ডলারের তুলনায় টাকার দাম যে ভাবে পড়ছে, তাতে এই ক্ষতি সামাল দেওয়া সরকারের ক্ষমতার বাইরে।
এই উৎপাদন শুল্ক বাড়ানোর জন্য বিজেপিকেই দায়ী করছে কংগ্রেস। তাঁদের দাবি, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১২ দফায় বাড়ানো হয়েছে উৎপাদন শুল্ক। সাধারণ মানুষের পকেট কেটে এই ভাবে প্রায় ১১ লক্ষ কোটি ঘরে তুলেছে তারা।
কংগ্রেসের এই পাল্টা যুক্তির পরই সোশ্যাল মিডিয়ার যুদ্ধে নামে বিজেপি। আর শুরুতেই ফুলটস বল দিয়ে বসে গেরুয়া ব্রিগেডের আইটি সেল। একটি ভুল ইনফোগ্রাফিক টুইটারে দিয়ে সবার হাসির খোরাক হয়ে ওঠে তারা। ২০১৪ থেকে ২০১৮, এনডিএ আমলের এই চার বছরে ডিজেলের দাম ৫৬.৭১ টাকা থেকে বেড়ে ৭২.৮৩ টাকা হলেও ইনফোগ্রাফিকে দাম কমেছে বলে দেখায় বিজেপি।
বন্ধের পরিবেশে এই ফুলটস বল পেয়ে ছক্কা মারতে ছাড়েনি কংগ্রেস শিবির। বিজেপি টুইট করা মাত্রই তারা সামনে নিয়ে আসে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আসল চিত্র। একই সঙ্গে বিশ্ববাজারে অশোধিত তেলের মূল্য কমলেও ভারতের ক্রেতারা সেই সুযোগ কেন পাচ্ছেন না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তারা।
দেখে নেওয়া যাক, গত ১৫ বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দামের ওঠাপড়ার সঙ্গে কী ভাবে ভারতে তেলের দামে পরিবর্তন এসেছে। বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন হারে ভ্যাট নেওয়া হয়, তাই ইউপিএ ও এনডিএ আমলে পেট্রোপণ্যের মূল্যের তুল্যমূল্য ওঠা পড়া দেখা হয়েছে নয়াদিল্লির নিরিখে।
দেখা যাচ্ছে, প্রথম ইউপিএ সরকারের সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম ৬১ শতাংশ বাড়লেও পেট্রলের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ২০.৫ শতাংশ। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে বিশ্ববাজারে অশোধিত তেলের দাম ৮৪ শতাংশ বাড়লেও নয়াদিল্লিতে পেট্রলের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ৭৫.৮ শতাংশ।
আরও পড়ুন: গডকড়ীর ফর্মুলা, ৫৫ টাকায় পেট্রল, ৫০ টাকায় ডিজেল, যদি...
অন্য দিকে বর্তমান এনডিএ সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে ৩৪ শতাংশ। কিন্তু নয়াদিল্লিতে পেট্রলের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ।
শেষ বাজারে অবশ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের একটি সিদ্ধান্তকে হাতিয়ার করেছে বিজেপি। ২০০৮ সালে পেট্রোপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে ২.১৪ লক্ষ কোটি টাকার বন্ড বাজারে ছাড়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। একইসঙ্গে জানিয়েছিলেন, এই বন্ড ছাড়ার ফল ভুগতে হবে ভারতের পরবর্তী প্রজন্মকেই, কারণ বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত কোনও দীর্ঘমেয়াদী সিদ্ধান্ত নয়। বিজেপি শিবিরের পাল্টা, মনমোহন সরকারের রেখে যাওয়া এই বোঝার ১.৩ লক্ষ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই সুদ সমেত শোধ করে দিয়েছে এনডিএ সরকার। তা সত্ত্বেও সব সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে মোদী সরকারকেই।
আরও পড়ুন: কিছু একটা করুন! টাকার পতন নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে বলল মোদী সরকার
বন্ডের বিষয়টি এনে কিছুটা মুখরক্ষা করলেও সব মিলিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার যুদ্ধে এখনও ব্যাকফুটে বিজেপি ব্রিগেড। যদিও নিন্দুকেরা বলছেন, আসল তাস তাঁরা এখনও লুকিয়ে রেখেছেন। সেই তাস বেরোবে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ আর ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা নির্বাচনের আগে। ভোটারদের মন জয় করতে ভোটের ঠিক আগেই উৎপাদন শুল্ক কমাতে পারে কেন্দ্র। একই সঙ্গে বিজেপি শাসিত এই রাজ্যগুলিও কমাতে পারে ভ্যাটের হার। সেক্ষেত্রে এই জোড়া অস্ত্রে অনেকটাই কমবে পেট্রলের দাম। হয়তো সেই সুযোগের অপেক্ষাতেই এখন গেরুয়া শিবির।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)