সচিবালয়ে মালা পরিয়ে কম্পিউটার বাবাকে স্বাগত জানাচ্ছেন দিগ্বিজয় সিংহ। ছবি: পিটিআই
সর্বক্ষণের সঙ্গী ল্যাপটপ। সেই জন্যই নাম ‘কম্পিউটার বাবা’। কিন্তু সেই কম্পিউটার বাবা-ই এ বার দাবি করে বসলেন হেলিকপ্টারের। মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ সরকারের নর্মদা-শিপ্রা-মন্দাকিনী রিভার ট্রাস্টের চেয়ারম্যান নামদেব দাস ত্যাগী ওরফে কম্পিউটার বাবা সচিবালয়ে যোগ দিয়েই বললেন, এবার তাঁর চাই আধুনিক ‘অস্ত্রশস্ত্র’। আকাশপথে নদীর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য সাত দিনের মধ্যে চাই একটি হেলিকপ্টার। মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ বা সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বাবার এই দাবি নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
এ বছরের গোড়ার দিকেই মধ্যপ্রদেশে বিজেপিকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা কমল নাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরই নামদেব দাস ত্যাগীকে নর্মদা-শিপ্রা-মন্দাকিনি রিভার ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করেন। কিন্তু তখন কাজে যোগ দেননি কম্পিউটার বাবা। মঙ্গলবারই প্রথম সচিবালয়ে আসেন তিনি। রীতিমতো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করে অফিসে যোগ দেন নামদেব।
আনুষ্ঠানিক ভাবে কাজে যোগ দেওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন আর এক কংগ্রেস নেতা তথা মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংহ। ছিলেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী পি সি শর্মাও। লোকসভা ভোটে এই দু’জনের হয়েই প্রচার করেছেন কম্পিউটার বাবা। দায়িত্ব নেওয়ার ফাঁকেই দিগ্বিজয় সিংহকে তিনি বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে একটি হেলিকপ্টার চাই। যাতে তিনি নর্মদা-সহ তিন নদী আকাশপথে পরিদর্শন করে পরিস্থিতি বুঝে নিতে পারেন এবং প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু করতে পারেন।
একই সঙ্গে পূর্বতন শিবরাজ সিংহ চৌহান সরকারের বিরুদ্ধে নর্মদার ধারে গাছ লাগানোয় দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছেন কম্পিউটার বাবা। নির্দেশ দিয়েছেন গোটা বিষয়ের তদন্ত করতে। ঘোষণা করেছেন একটি হেল্পলাইন নম্বর, যেখানে ফোন করে সাধারণ মানুষও এই তিন নদীর কোনও বিষয়ে জানাতে পারবেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, নর্মদা রক্ষায় গ্রামের যুবকদের নিয়োগ করে ‘নর্মদা সেনা’ গঠন করা হবে।
আরও পডু়ন: সারদার পর নারদ কাণ্ডেও সক্রিয় সিবিআই, আইপিএস অফিসার মির্জাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব
আরও পড়ুন: ‘আমরা কথা রেখেছি, ইদ মুবারক’, পাক কর্তার ফোন ইন্ডিগোর দফতরে
নর্মদার দুই পাড়ে গাছ পোঁতা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ মধ্যপ্রদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। সেই ইস্যু ধরেই কার্যত রাজনীতিতে পদার্পণ কম্পিউটার বাবার। ২০১৮ সালের মার্চে নর্মদার ধারে গাছ লাগানোয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে ৪৫ দিনের নর্মদা রথযাত্রার ঘোষণা করেন এই নামদেব এবং যোগেন্দ্র মহন্ত। কিন্তু ওই বছর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান তাঁদের বৈঠকে ডাকেন। তার পরই সেই যাত্রা স্থগিত করে দেন কম্পিউটার বাবা। এর পর চৌহান সরকার নদীতীরে গাছ লাগানো, সাফাই এবং সংরক্ষণের তদারকিতে একটি কমিটি গঠন করে। প্রতিমন্ত্রীর সমান পদমর্যাদা দিয়ে সেই কমিটির মাথায় বসানো হয় কম্পিউটার বাবাকে।
কিন্তু এ বছরের গোড়ায় মধ্যপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের মুখে ওই পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে শিবির পাল্টান কম্পিউটার বাবা। চৌহান সরকারকে ‘অপবিত্র’ বলেও মন্তব্য করেন বাবা। তার পর ভোটে কংগ্রেসের জয়ের পরই তাঁকে তিন নদীর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করেন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ। তারও প্রায় পাঁচ মাস পর কাজে যোগ দিয়েই এ বার হেলিকপ্টার চেয়ে বসলেন কম্পিউটার বাবা।