patna

Coaching Class At Railway Station: আইএএস, আইআইটি-র পরীক্ষায় সফল হতে পড়ুয়াদের দিন-রাতের ক্লাস সাসারাম রেলস্টেশনে

এঁরা পড়াশোনা করেন দল বেঁধে। একে অন্যের সঙ্গে নোট্‌স বিনিময় করেন। এঁদের পড়ানোর জন্য রয়েছেন এক ঝাঁক দক্ষ শিক্ষকও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পটনা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২১ ১৩:০০
Share:

‘ক্লাসরুম’। দিন-রাতের। সাসারাম রেলস্টশেন। -নিজস্ব চিত্র।

হ্যাঁ, অনেকটা বিদ্যাসাগরের মতোই।

Advertisement

তবে রাস্তার নিভু নিভু ল্যাম্প পোস্টের নীচে দাঁড়িয়ে এঁদের পড়াশোনা করতে হয় না একা একা।

এঁদের জন্য রয়েছে ঝাঁ চকচকে রেলওয়ে স্টেশন। সেখানে চারদিকে রয়েছে উজ্জ্বল আলো। এঁরা পড়াশোনা করেন দল বেঁধে। একে অন্যের সঙ্গে নোট্‌স বিনিময় করেন। এঁদের পড়ানোর জন্য রয়েছেন এক ঝাঁক দক্ষ শিক্ষকও।

Advertisement

তবে বিদ্যাসাগরের মতোই এঁরাও বাড়ি ছেড়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে রেলস্টেশনে নিয়মিত পড়াশোনা করতে আসেন আলোর অভাবে।

যদিও বিদ্যাসাগরের চেয়ে এঁরা একটু বেশি সৌভাগ্যবান। কারণ, তাঁরা বিহারের সাসারাম রেলস্টেশন রাতে আলো পান ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত। আর পান অন্য পড়ুয়াদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পড়াশোনার সুযোগ। পান এক ঝাঁক দক্ষ শিক্ষকও। যাঁরা নিয়মিত এসে এই পড়ুয়াদের পড়িয়ে যান।

সাসারাম রেলস্টেশনের এই পড়ুয়াদের বেশির ভাগই আসেন ১৯ কিলোমিটার (বা প্রায় ১২ মাইল) দূরের রোহতাসের কয়েকটি গ্রাম থেকে। মাইলের পর মাইল হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে। গ্রামে দিন-রাতের প্রায় কোনও সময়েই আলো থাকে না যে! তা ছাড়াও মাওবাদী সন্ত্রাসে সব সময়ই ভয়ে থরথর করে কাঁপে রোহতাসের গ্রামগুলি। সেখানে কি আর নিশ্চিন্তে পড়াশোনা করা যায়?

এই পরিস্থিতিতে নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ানোর জন্য খুব শক্তপোক্ত জমি খোঁজেন রোহতাসের গ্রামগুলির পড়ুয়ারা। খোঁজেন নিশ্চিন্ত জীবন। তাঁদের এক ও একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠে সরকারি চাকরি। আমলার চাকরি। আইএএস, আইপিএসের চাকরি। তাই সাসারাম রেলস্টেশনের পড়ুয়ারা প্রস্তুতি নেন সর্বভারতীয় স্তরের আইএএস, আইপিএস, আইএফএস এবং রাজ্যস্তরের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাগুলির জন্য। প্রস্তুতি নেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম)-এর প্রবেশিকা পরীক্ষাগুলিতে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য। ট্রেনের যাত্রীরাও তা দেখে স্টেশনে ট্রেন থামলে বেশি হইচই করেন না। তাতে যদি পড়ুয়াদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে।

শুধুই লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নয়। ওই পরীক্ষাগুলির ইন্টারভিউয়ের প্রশিক্ষণও পড়ুয়াদের দেন তাঁরা, যাঁরা ইতিপূর্বে ওই সব পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছেন। রোজ সকালে ও সন্ধ্যায় ২ ঘণ্টা করে চলে সেই কোচিং ক্লাস। সাসারাম রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মেই পড়ানো হয় ইংরেজি, হিন্দি-সহ বিভিন্ন ভাষা, গণিত, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ও রিজনিং।

দিনে-রাতের দু’ঘণ্টার কোচিং ক্লাস ছাড়াও দিনভর রাতভর সাসারাম রেলস্টেশনে বসে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিতে ৫০০ পড়ুয়ার জন্য আলাদা পরিচয়পত্র বানিয়ে দিয়েছেন সাসারাম রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষ। যাতে স্টেশনে ঢুকতে বা সেখান থেকে বেরতে তাঁদের কোনও অসুবিধা না হয়।

তার ফলে, অনেক পড়ুয়াই রাতের কোচিং ক্লাসের পর আর মাইলের পর মাইল হেঁটে বাড়িতে ফিরে যান না। স্টেশনেই থেকে যান তিন-চার দিন বা দু’-এক সপ্তাহ। যেন আইআইটি বা আইআইএম-এর বোর্ডিং বা হস্টেল।

রোহতাসের মতো আরও কত গ্রাম আছে ভারতে, যেখানে সারা দিন আলো থাকে না বললেই হয়। আছে পশ্চিমবঙ্গেও। সেই সব জায়গায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নানা সমস্যা।

সাসারাম রেলস্টেশন কি আগামী দিনে সেই সব গ্রামের পড়ুয়াদের কাছে পথপ্রদর্শক হয়ে উঠবে?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement