বিচারবিভাগ নিয়ে সম্মেলনের চা চক্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজস্ব চিত্র
কুশল বিনিময় হল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতার প্রশংসাও করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে আজ বিচারবিভাগ নিয়ে সম্মেলনের শেষে মুখ্যমন্ত্রীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নৈশভোজ তিনি এড়িয়ে গেলেন। তা সত্বেও শনিবার দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীকে তাঁর বক্তৃতার জন্য মমতার প্রশংসাকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছে রাজনীতিকরা। কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার ও দুই শাসক দলের মধ্যে গত কয়েক দিনের সংঘাতের আবহে এই প্রশংসা ‘কিঞ্চিৎ বেমানান’ বলেও অনেকের মত। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এই প্রশংসাকে নিছক সৌজন্য বলে দাবি করেছে।
গত সপ্তাহে কোভিড নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই প্রধানমন্ত্রী পেট্রল-ডিজ়েলের চড়া দামের জন্য পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিকে দোষারোপ করেছিলেন। বিচারবিভাগ নিয়ে আজকের সম্মেলনে যোগ দিতে গতকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি পৌঁছন। সে দিনই দিল্লিতে আইনজীবীদের একটি সংগঠন পশ্চিমবঙ্গে হিংসার ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল করেছে। যার পিছনে বিজেপির প্রত্যক্ষ মদতের অভিযোগ উঠেছে। গত নভেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিতে এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তখনই এপ্রিলে কলকাতায় রাজ্যের শিল্প সম্মেলনে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদীকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যাননি। বিজেপি রাজ্যের হিংসা ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিটি গড়ে রাজ্যে পাঠিয়েছে। উল্টো দিকে প্রয়াগরাজের ঘটনা নিয়ে তৃণমূল মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জানাতে গিয়েছে। মোদী সরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলি ধ্বংস করছে অভিযোগ তুলে মমতা বিরোধী দলের নেতা, মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লিখে এক হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
এই আবহে আজ সকালে বিজ্ঞান ভবনে প্রারম্ভিক অনুষ্ঠানের পরে চা-চক্রে মোদী, মমতার দেখা হয়। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণাও সেখানে হাজির ছিলেন। মমতা দু’জনকেই উত্তরীয় পরিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তাঁর বক্তৃতা ভাল হয়েছে। মোদী ধন্যবাদ জানান। এরপরে দু’জনের সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রীর একান্তে কিছু ক্ষণ কথাবার্তা হয়। তবে তা নিয়ে কেউই মুখ খুলতে চাননি। কিন্তু মমতা, মোদীর কী কথা হল, তা নিয়ে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। মমতার সঙ্গে এই সফরে রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, বিদ্যুৎ ও যুব-ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসওএসেছেন। পুরভোট ও উপনির্বাচনের আগে ইডি মলয়কে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে বিচারবিভাগীয় সম্মেলনে নিয়ে এসে মমতা বার্তাও দিলেন বলে রাজনীতিকরা মনে করছেন।
আজ বিজ্ঞান ভবনে রাজ্যের নামের ইংরেজি আদ্যাক্ষর মেনে মুখ্যমন্ত্রীদের বসার বন্দোবস্ত হয়েছিল। মমতার আসন ছিল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের আসনের একটি আসন পরেই। দু’জনের মাঝখানে, মমতার বাঁ দিকে ছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামি।
যোগীর বসার সময় ঢোকার জায়গা করে দিতে মমতাকে নিজের চেয়ার সরিয়ে উঠে দাঁড়াতে হয়। চিত্রগ্রাহকদের অনুরোধে যোগী, ধামি, মমতা একসঙ্গে ছবি তোলেন। তবে দু’জনের কথাবার্তা হয়নি। মমতার ডান দিকে বসেছিলেন চণ্ডীগড়ের প্রশাসক বানোয়ারিলাল পুরোহিত। মমতা পুরনো পরিচিতির সুবাদে পুরোহিতের সঙ্গে গল্পগুজব করেন। পঞ্জাবের আপ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানের সঙ্গেও তাঁর বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা হয়।