এক টাকায় পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। দাম কম হতে পারে, তবে মানে সমঝোতার জায়গা নেই। প্রায় নতুন সম্ভার থেকে পছন্দসই বেছে নেওযা যাবে। বেছে নিতে পারবেন তাঁরা, যাঁরা চাইলেই ভাল পোশাকের জন্য খরচ করতে পারেন না। এক টাকায় তাঁরা ভাল পোশাক কিনতে পারবেন। পরতে পারবেন। অযাচিত দান বাধ্য হয়ে মেনে নেওয়ার বিড়ম্বনা ছাড়াই।
এক টাকায় ওই পোশাক পাওয়া যাচ্ছে বেঙ্গালুরুতে। পোশাক জোগাবে এক ‘পোশাক ব্যাঙ্ক’। বেঙ্গালুরুতেই সেই ‘ব্যাঙ্ক’-এর দফতর। তবে ‘ব্যাঙ্ক’-এর দরজা খোলে সপ্তাহে এক বার। রবিবার।
নাম ‘ইমাজিন ক্লোদ ব্যাঙ্ক’। ‘ক্লোদ ব্যাঙ্ক’ আসলে কোনও ব্যাঙ্ক নয়, একটি দোকান। দোকানটি পরিচালনা করে বেঙ্গালুরুর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
পুরদস্তুর জামা কাপড়ের দোকানের মতোই সব বয়সের মানুষের ভাল জামা কাপড় পাওয়া যায় ইমাজিনে। তবে এই দোকানে সব পোশাকেরই এক দাম। এক টাকা।
ঝোঁকের মাথায় পোশাক কিনে ফেলার স্বভাব অনেকেরই থাকে। বেহিসেবে কেনা সেই পোশাক অনেক সময় গায়েও ওঠে না। দীর্ঘদিন পরে থেকে থেকে এক সময় বাতিল হয়ে যায়। ‘ইমাজিন’-এর স্বেচ্ছাসেবীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে সেই সব আনকোরা পোশাক সংগ্রহ করেন। আকার এবং বয়স অনুযায়ী সাজিয়ে রাখেন দোকানে। সপ্তাহান্তে সেই পোশাক কেনার সুযোগ তাঁরা পান, যাঁদের সত্যিই প্রয়োজন।
পোশাক বিক্রির টাকাও সংস্থাটি নেয় না। ওই টাকা কাজে লাগানো হয় দুঃস্থ পরিবারের সন্তানদের শিক্ষা এবং তাঁদের চিকিৎসা খাতে গড়া তহবিলে।
ইমাজিনের ক্লোদ ব্যাঙ্কের যাত্রা শুরু ২০০২ সালে। কলেজ পড়ুয়া দুই বন্ধু নীতিন কুমার এবং বিনোদ প্রেম লোবো মেঙ্গালুরুতে প্রথম ‘ক্লোদ ব্যাঙ্ক’ চালু করেছিলেন। নীতিন-বিনোদের ক্লোদ ব্যাঙ্কে পোশাক দান করতেন বিভিন্ন কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা। কিন্তু কলেজ শেষ হওয়ার পর দুই বন্ধু নিজেদের পেশায় ব্যস্ত হয়ে শহর বদলান। থমকে যায় ‘ক্লোদ ব্যাঙ্ক’-এর কাজও।
প্রায় ১৭ বছর পর সেই উদ্যোগ ফের মাথা চাড়া দেয় অতিমারির সময়ে। নীতিন-বিনোদ বেঙ্গালুরুতে নতুন করে শুরু করেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আরও দুই বন্ধু। মেলিশা নোরোনহা এবং ভিগনেশ।
প্রত্যেকেই কর্পোরেট সংস্থার কর্মী। তবে সেই কাজ সামলে তাঁরা সময় দেন সংস্থাকে। মেলিশা জানিয়েছেন, প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১৫০টি পরিবার আসে তাঁদের দোকানে।
ইদানীং পোশাকের সঙ্গে বিছানার চাদর, পর্দা, তোয়ালেও রাখা থাকে। মেলিশা বলেছেন, ‘‘প্রথমে পর্দা রাখার ব্যাপারে দ্বিধায় ছিলাম। মনে হয়েছিল পর্দা তো ঘর সাজানোর কাজে ব্যবহার হয়। আর আমরা যাঁদের কথা ভাবছি, তাঁদের কাছে ঘর সাজানো বাহুল্য নয় কি! কিন্তু দেখলাম, এক টাকায় সেই পর্দাও বিক্রি হচ্ছে। বুঝলাম, একটা দরিদ্র পরিবারে পর্দা কত গুরুত্বপূ্র্ণ।’’
ইমাজিনের কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন বহু স্বেচ্ছাসেবী। তাঁরাই বাড়ি বাড়ি ঘুরে সংগ্রহ করেন পোশাক। তবে ইদানীং অনেকে নিজে থেকেই পোশাক দিয়ে যান। বিদেশে থেকেও অনেকে ইমাজিনকে পোশাক দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মেলিশা।
তবে ইমাজিন শুধু পোশাক ব্যাঙ্কের কাজেই থেমে থাকতে চায় না। আগামী দিনে দুঃস্থ শিশুদের জন্য ‘খেলনা ব্যাঙ্ক’ করারও ইচ্ছে রয়েছে তাঁদের।