দক্ষিণ কাশ্মীরের শোপিয়ানে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপরে সেনার গুলিবর্ষণের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে টানাপড়েন হয়েছে বিস্তর। সেনার বিরুদ্ধে এফআইআরও করেছে জম্মু-কাশ্মীর সরকার। তবে আইএসের পতাকা তোলা নিয়েই যে সেনার সঙ্গে গোলমাল শুরু হয়েছিল তা মেনে নিচ্ছেন শোপিয়ানের গানোপোরার বাসিন্দারাও।
২৪ জানুয়ারি কুলগামের চাইগুন্দে বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় তিন জঙ্গি। তাদের মধ্যে ছিল গানোপোরার বাসিন্দা ফিরদৌস লোনও। ফিরদৌসের অন্ত্যেষ্টির সময়ে আইএসের পতাকা তোলা হয় গানোপোরায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ২৭ জানুয়ারি ছিল ফিরদৌসের জন্য শোকপালনের তৃতীয় দিন। সে দিনই গ্রামে এসে হাজির হয় ৪৪ নম্বর রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের একটি দল। তারা আইএসের পতাকা নামাতে বলে। বাধা দেয় বাসিন্দাদের একাংশ। সেনার দিকে পাথর ছোড়া হয়। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, সেনাই আগে পাথর ছোড়ে। স্থানীয় যুবক মহম্মদ ইশতিয়াকের কথায়, ‘‘দুপুর দু’টো নাগাদ সেনার দল ফিরে আসে। ওদের গাড়িগুলি গ্রামের মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে চলছিল। গাড়ি থেকেই শুরু হয় গুলিবৃষ্টি।’’
সেনার দাবি, এক জওয়ানের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল কয়েক জন। কিন্তু বাসিন্দারা তা মানতে রাজি নন। তাঁরা জানান, প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে গুলি চালায় সেনা। পরে জওয়ানেরা গাড়ি থেকে নেমে গ্রামের সব বাড়ি লক্ষ করে পাথর ছুড়তে শুরু করে। গ্রামের অনেক বাড়িরই জানালা এখনও ভাঙা। রয়েছে
বুলেটের গর্তও।
স্থানীয়দের মতে, এমন গুলিবৃষ্টি জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময়েও হয় না। অনেকে পাশের জলাজমিতে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচান। তবে কয়েক জন স্থানীয় যুবক গুলিবৃষ্টির মধ্যেও পাথর ছুড়ছিল। তাদের মধ্যেই ছিল ফিরদৌসের প্রতিবেশী সুহেল লোন। সুহেলকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেন তার বাবা জাভিদ। কিন্তু কোনও বাধা না মেনে পাথর ছুড়তেই থাকে সে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই মাথায় গুলি লেগে নিহত হয় সুহেল। জাভিদের কথায়, ‘‘সুহেল আগে কখনও পাথর ছোড়েনি। এমনকী অন্যেরা উস্কানি দিলেও ও রাজি হত না। জানি না সে দিন ওর মাথায় কী ভর করেছিল।’’
গানোপোরায় সেনার গুলিতে নিহত হয়েছেন তিন জন। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পাশাপাশি শোপিয়ানের এই ঘটনার সমালোচনা করেছে মূলস্রোতের রাজনৈতিক দলগুলিও। কেবল বিজেপির দাবি, সেনা উচিত কাজ করেছে।