গ্রাফিক: তিয়াসা দাস
অবসরের আগেই ঐতিহাসিক অযোধ্যা মামলার রায় দিয়ে যাবেন, জানিয়েছিলেন তিনি। কয়েক শতাব্দীর বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে রামমন্দির তৈরিতে সিলমোহর দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। এখানেই শেষ নয়, অবসরের আগে আরও দুই বহুচর্চিত মামলার নিষ্পত্তি হতে চলেছে রঞ্জন গগৈ-এর হাতে। শবরীমালা এবং রাফাল মামলার রিট পিটিশনের রায় আগামিকাল, বৃহস্পতিবার।
কেরলের শবরীমালা মন্দিরে ১০ বছরের কম এবং ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে অর্থাৎ ঋতুমতী মহিলাদের প্রবেশাধিকার ছিল না। শতাব্দীপ্রাচীন এই প্রথা তুলে দিয়ে সব বয়সের মহিলাদের প্রবেশাধিকার দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের সেই ঐতিহাসিক রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতেই রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন মন্দিরের পরিচালন কর্তৃপক্ষ— ত্রিবাঙ্কুর দেবস্থানম বোর্ড। বোর্ডের দাবি ছিল, সাধারণ মানুষের শতাব্দীপ্রাচীন প্রথা বা বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করতে পারে না আদালত। তাই রায় পুনর্বিবেচনা করুক শীর্ষ আদালত।
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। কেরল সরকার রায় সমর্থন করে বলেছিল, কোনও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান মানুষের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী হলে তাতে আদালত হস্তক্ষেপ করতেই পারে। নারী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একাধিক সংগঠনও এই মামলায় পক্ষ হয়। তারাও রায়কে স্বাগত জানায়। তাঁদের যুক্তি ছিল, শুধুমাত্র ঋতুমতী হওয়ার কারণে মন্দিরে ঢোকা নিষিদ্ধ করা মহিলাদের প্রতি বৈষম্যের সামিল এবং সংবিধান বিরোধী। সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর গত ৬ ফেব্রুয়ারি এই মামলার রায় সংরক্ষিত রাখে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
আরও পড়ুন: এ বার তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় প্রধান বিচারপতির দফতরও, রায় সুপ্রিম কোর্টের
শুধু দুর্নীতির অভিযোগ নয়, রাজনৈতিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাফাল মামলা। ফ্রান্সের দাসোঁ এভিয়েশনের কাছ থেকে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয় বিরোধীরা। সিবিআই তদন্তের দাবিতে মামলা দায়ের হয় শীর্ষ আদালতে। কিন্তু সেই আর্জি খারিজ করে কেন্দ্রকে ক্লিন চিট দেয় শীর্ষ আদালত। এর পর রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে রিট পিটিশন দাখিল করেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশোবন্ত সিনহা ও অরুণ শৌরি এবং সমাজকর্মী ও আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ।
এই রিট পিটিশনের শুনানিও শেষ হয়েছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে। শুনানিতে মামলাকারীদের অভিযোগ ছিল, রাফাল চুক্তির সব তথ্য কেন্দ্র সামনে আনেনি। তাই আগের রায় পুনর্বিবেচনা করে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিক শীর্ষ আদালত। অন্য দিকে কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, মামলাকারীরা সংবাদ মাধ্যমের বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে রিট পিটিশন দাখিল করেছেন। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর গত ১০ মে রায় সংরক্ষিত রাখে।
আরও পড়ুন: বিজেপির যুব মোর্চার পুরসভা অভিযানে ধুন্ধুমার, লাঠিচার্জ-জলকামান-কাঁদানে গ্যাস পুলিশের
প্রধান বিচারপতির পদ থেকে রঞ্জন গগৈ-এর অবসরের দিন ১৭ নভেম্বর। কিন্তু ওই দিন রবিবার হওয়ায় তাঁর অফিসের শেষ দিন ১৫ নভেম্বর শুক্রবার। তার আগেই দেশের ইতিহাসে সাড়া জাগানো এই দুই গুরুত্বপূর্ণ মামলার রিট পিটিশনের রায় দেবেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।