চেষ্টা চলছে, বিচারপতিরা সকলে মিলে বিবৃতি দিয়ে বলুন, সুপ্রিম কোর্টের অন্দরমহলের সব সমস্যা মিটে গিয়েছে।
কিন্তু ‘বিদ্রোহী’ বিচারপতিরা অনড়। তাঁরা চান, কোন বিচারপতির বেঞ্চ কোন মামলা শুনবে, তার স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে— এই সমাধানসূত্রে সিলমোহর দেবেন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র। না হলে তাঁরা এই ধরনের কোনও বিবৃতিতে সই করবেন না।
সুপ্রিম কোর্টের শীর্ষস্তরে ফাটল মেটাতে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র আজ নিজেই চার ‘বিদ্রোহী’, বিচারপতি জাস্তি চেলমেশ্বর, বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি মদন বি লোকুর ও বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিক্ষুব্ধ বিচারপতিদের প্রধান অভিযোগ ছিল, প্রধান বিচারপতি বাছাই করা কিছু বিচারপতির কাছে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মামলাগুলি পাঠাচ্ছেন। প্রবীণ বিচারপতিদের এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানে নির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবও পেশ করেছেন বিক্ষুব্ধ বিচারপতিরা।
সূত্রের খবর, একটি প্রস্তাব হল, মামলার বিষয়ের ভিত্তিতে বেঞ্চ ঠিক হোক। যেমন ফৌজদারি মামলাগুলো যাক একটি বেঞ্চে। জনস্বার্থ মামলা, আর্থিক বা ব্যবসায়িক মামলার জন্যও পৃথক পৃথক বেঞ্চ থাকুক। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোয়িয়েশনও এ বিষয়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া চালুর পক্ষে। আজ প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ আধার-এর মতো জাতীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি সরাসরি সম্প্রচারের দাবি জানিয়েও একটি মামলা করেছেন। আজ দিনের শুনানি শুরুর আগে জাজেস লাউঞ্জে ১৫-২০ মিনিট এই বৈঠক চলে। বিক্ষুব্ধ বিচারপতিদের ঘনিষ্ঠ মহলের ব্যাখ্যা, এমন নয় যে অপেক্ষাকৃত নবীন বিচারপতিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মামলা পাঠানোয় আপত্তি তোলা হচ্ছে। আসল আপত্তি হল, যে সব মামলায় সরকারের স্বার্থ জড়িত, সেগুলো নির্দিষ্ট কয়েক জন বিচারপতির কাছে পাঠানো নিয়ে।
বিক্ষুব্ধ বিচারপতিরা আজকের বৈঠকের আগে বুধবার রাতে অন্য কয়েক জন বিচারপতির সঙ্গেও কথা বলেন। বিচারপতি মদন বি লোকুরের সঙ্গে সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন বিচারপতি ইউ ইউ ললিত, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ও। প্রধান বিচারপতি বুধবারই দূরত্ব মেটাতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। তিনি যে এই ফাটল বাড়াতে চান না, আজও সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
‘বিদ্রোহী’ বিচারপতিদের সাংবাদিক বৈঠক বা সুপ্রিম কোর্টের বিবাদ সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। আদালতের রেজিস্ট্রিও এই মামলা গ্রহণ করতে চায়নি। একই ভাবে প্রশান্ত ভূষণ, দুষ্মন্ত দাভে ও তাঁদের এনজিও-র বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে আরেকটি মামলা সুপ্রিম কোর্ট গ্রহণ করেনি। তাঁরা প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধেও দুর্নীতির তদন্তের দাবি তুলেছিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপালও এ বিষয়ে সম্মত হননি।