মাত্র দেড় মাসেই বিপ্লবের গুগলিতে দিশাহারা বিজেপি

মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের কথার তোড়ে মাত্র দেড়় মাসেই বেজায় বিড়ম্বনায় বিজেপি নেতৃত্ব! একে তো তিনি প্রতি দিনই নতুন কিছু বলে হাসির খোরাক জোগাচ্ছেন।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:২১
Share:

রকমারি মন্তব্যের বেলাগাম ঘোড়া ছুটিয়ে ইতিমধ্যেই সর্বভারতীয় স্তরে চর্চার কেন্দ্রে চলে এসেছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব।

তিনি মুখ খুললেই লোকে বলছে, ‘বিপ্লব’ হচ্ছে!

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের কথার তোড়ে মাত্র দেড়় মাসেই বেজায় বিড়ম্বনায় বিজেপি নেতৃত্ব! একে তো তিনি প্রতি দিনই নতুন কিছু বলে হাসির খোরাক জোগাচ্ছেন। তার উপরে ভিন্ রাজ্য থেকে এক জন ওএসডি এবং দিল্লি থেকে ব্যক্তিগত সচিব নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত ঘিরে দলের অন্দরেই গোল বেধেছে।

অল্প দিনেই পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, ত্রিপুরায় গেরুয়া সাফল্যের অন্যতম কারিগর সুনীল দেওধর পর্যন্ত দিশাহারা! বিজেপি সূত্রের খবর, পর্যবেক্ষক হিসেবে তিনি আর ত্রিপুরায় থাকতে বিশেষ আগ্রহী নন। দলের অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে, সংসদীয় রাজনীতিতে একেবারেই অনভিজ্ঞ বিপ্লবের বদলে প্রশাসন বা পরিষদীয় রীতিনীতিতে অভিজ্ঞ কাউকে আনা হোক। তবে কর্নাটকের বিধানসভা ভোটে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ব্যস্ত থাকায় এখনই রদবদলের সম্ভাবনা ক্ষীণ। যদিও বিপ্লবকে শীঘ্রই দিল্লিতে তলব করা হতে পারে।

Advertisement

গত কয়েক দিনে রকমারি মন্তব্যের বেলাগাম ঘোড়া ছুটিয়ে সর্বভারতীয় স্তরেও চর্চার কেন্দ্রে চলে এসেছেন উত্তর-পূর্বের এই ছোট্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। চিত্র পরিচালক ও প্রয়োজক অনুরাগ কাশ্যপ যেমন মন্তব্য করেছেন, ‘‘ওঁকে ‘রিপলে’জ বিলিভ ইট অর নট’ সিরিজে নিয়ে গেলে কেমন হয়?’’

বিপ্লবের ‘অবিশ্বাস্য’ মন্তব্যের তালিকা বলতে গেলে রোজই বাড়ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ত্রিপুরার বিধানসভা ভোটের জন্য যে ‘ভিশন ডকুমেন্ট’ প্রকাশ করেছিলেন অরুণ জেটলি, সেখানে পরিবারপিছু এক জনের চাকরির প্রতিশ্রুতি ছিল। চাকরির আকাল মেটাতে না পারা তাদের হারের অন্যতম বড় কারণ বলে মেনে নিয়েছিল সিপিএমও। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব এখন বলছেন, ‘‘চাকরির জন্য নেতা বা সরকারের পিছনে না ঘুরে গরু পোষা ভাল। পানের দোকানও দিতে পারে। দুধ ৫০ টাকা লিটার। যে পড়াশোনা করে ১০ বছর ধরে চাকরির জন্য ঘুরছে, একটা গরু কিনে পালন করলে এত দিনে ১০ লক্ষ টাকা তার রোজগার হয়ে যেত!’’

এর আগে সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিজয়ী ডায়না হেডেনকে নিয়ে মন্তব্য করে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু তার মধ্যেই তাঁর আরও বলা হয়ে গিয়েছে— সিভিল ইঞ্জিনিয়ারেরা সিভিল সার্ভিসে এলে ভাল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে না বসলে কীসের বড় ডাক্তার? এখন অলরাউন্ডারের যুগ, সকলকে চেষ্টা করতে হবে সচিন তেন্ডুলকর হওয়ার! মুখ্যমন্ত্রী রবিবার অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমি কী বলতে চেয়েছি, তার পুরো রেকর্ডিং শুনে সাংবাদিক বন্ধুরাই বিষয়গুলি স্পষ্ট করে দিলে ভাল।’’

মুখ্যমন্ত্রীর এমন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন করলে দেওধর অবশ্য সবিনয় এড়িয়ে যাচ্ছেন। তিনি কি ত্রিপুরায় থাকছেন? দেওধরের জবাব, ‘‘এখনও তো আছি। তবে কত দিন থাকব, জানি না!’’ আর বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, ‘‘বিপ্লব অনভিজ্ঞ। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে উন্নয়নের পথে রাজ্যকে নিয়ে যাওয়ার যে দায়িত্ব তিনি পেয়েছেন, সেটা পালন করলেই ভাল করবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement