ফাইল চিত্র।
বিক্ষোভ-বিতর্কের মধ্যেই সোমবার লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করতে চলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই বিল পাশ করা নিয়ে সরকার পক্ষের সংশয় তেমন নেই। কিন্তু বিলকে ঘিরে শাসক-বিরোধী দুই শিবিরই নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানে শান দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আগামিকাল এই বিল পেশের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর কংগ্রেসের সাংসদ রাহুল গাঁধী দিল্লিতে থাকছেন না। দু’জনেই প্রচার করবেন ভোটমুখী ঝাড়খণ্ডে। কিন্তু আজ সন্ধ্যায় দশ জনপথে সনিয়া গাঁধী দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে স্থির করেছেন, তাঁরা এই বিলের বিরোধিতা করবেন। বৈঠকের পরে লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা এই বিলের পুরোপুরি বিরোধিতা করব। আমাদের সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্য, সংস্কৃতি লঙ্ঘিত হবে এই বিলের মাধ্যমে।’’ উত্তর-পূর্ব গণতান্ত্রিক জোটের দলগুলিকে কংগ্রেসের সাংসদ গৌরব গগৈ আবেদন করেছেন, বিজেপির সঙ্গে না গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে।
সিপিএমও ঠিক একই অবস্থান নিয়ে বিলে দু’টি সংশোধনী দিচ্ছে। যেখানে ‘আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান’ বাক্যটি মুছে দিয়ে শুধু ‘প্রতিবেশী দেশগুলির’ কথা জুড়তে বলা হয়েছে। সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘এটি আরএসএস ও বিজেপির বিভাজনের রাজনীতি। কেন শুধু তিনটি প্রতিবেশী দেশের কথা উল্লেখ থাকবে? কোনও বৈষম্য না রেখে সব ধর্মের ব্যক্তিদের সমান সুযোগ দেওয়া উচিত।’’
আরও পড়ুন: কয়েক জনের হাতে এত ক্ষমতা ভাল নয়, বললেন রাজন
তৃণমূলও বিল নিয়ে আলোচনার সময় সব রকম বিরোধিতার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলীয় সূত্রের খবর, আপাতত লোকসভায় বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে এ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সিদ্ধান্ত সংসদীয় নেতাদের শেষ মুহূর্তে জানাবেন। আপাতত স্থির হয়েছে, এই বিল নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগার। সুর চড়িয়ে কংগ্রেসের সাংসদ শশী তারুরও আজ বলেছেন, ‘‘এই বিল পাশ হওয়ার অর্থ, গাঁধীর উপরে জিন্নার আদর্শের জয়। ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দিলে ভারত ‘পাকিস্তানের হিন্দু সংস্করণ’ হয়ে যাবে।’’
লোকসভায় গরিষ্ঠতা থাকায় নিম্নকক্ষে বিল পাশ নিয়ে চিন্তায় নেই বিজেপি। রাজ্যসভায় জয় মসৃণ করতে ঘুঁটি সাজাচ্ছে তারা। কারণ, সেখানে এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই এনডিএর। তবে দলের এক নেতা দাবি করেন, ‘‘রাজ্যসভায় এই মুহূর্তে বিল পাশের জন্য প্রয়োজন ১২০ জনের সমর্থন। আমরা সংখ্যাটিকে ১৩০-১৪০ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’’
বিজেপি ইতিমধ্যেই হুইপ জারি করেছে। জোট ছাড়লেও শিবসেনা সরকারের সমর্থনেই ভোট দেবে। টিআরএস, এডিএমকে, বিজেডির সমর্থনও চাইছে বিজেপি। তারা চেষ্টা করছে, বিরোধী কিছু দল বিরুদ্ধে ভোট না দিক বা সভাকক্ষ ত্যাগ করুক। ধর্মনিরপেক্ষতা, বৈষম্য, জনজাতিদের বিরোধকে সামনে রেখে এনডিএর বাইরের দলগুলিকে পাশে পাওয়ার পাল্টা চেষ্টা চালাচ্ছে বিরোধীরাও।