অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
গত কাল লোকসভায় অনায়াসে পাশ হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি)। আগামিকাল রাজ্যসভায় তা পাশ করানোর পরীক্ষা অমিত শাহদের। শাসক শিবির অবশ্য আশাবাদী যে, বিল পাশে কোনও সমস্যা হবে না। তবে লোকসভার মতো ‘ফাঁকা মাঠ’ রাজ্যসভা নয়। সেখানে শাসক শিবির ও বিরোধীদের সংখ্যার ব্যবধান অনেক কম। ফলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বিরোধীরাও।
রাজ্যসভার মোট আসন ২৪৫। বর্তমানে সাংসদ রয়েছেন ২৪০ জন। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য অমিত শাহদের প্রয়োজন ১২১টি ভোট। এই মুহূর্তে রাজ্যসভায় বিজেপির নিজস্ব সাংসদ-সংখ্যা ৮১। আর সব মিলিয়ে এই বিলের পক্ষে সাংসদ আছেন ১২৮ জন। যা সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে মাত্র সাত জন বেশি। অন্য দিকে, বিরোধীদের পক্ষে রয়েছে ১০৯টি ভোট। ব্যবধান কম হওয়ার ছবিটি যে কোনও সময়ে পাল্টাতে পারে বলে ঘরোয়া মহলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন একাধিক বিজেপি নেতা।
বিজেপির চিন্তা আরও বাড়িয়েছে শিবসেনা। লোকসভায় শিবসেনা নাগরিকত্ব বিলের পক্ষে ভোট দিলেও, রাজ্যসভার ভোটে বিরোধী শিবিরের সঙ্গে হাত মেলানোর ইঙ্গিত দিয়েছে উদ্ধব ঠাকরের দল। তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের দাবি, ‘‘শিবসেনার এক শীর্ষ নেতাও জানিয়েছেন রাজ্যসভায় বিলের বিরোধিতা করবেন তাঁরা। সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন শিবসেনা নেতা।’’
আরও পড়ুন: মুসলিম হব, বলছেন প্রাক্তন আমলারা
মহারাষ্ট্র থেকে বিলের বিরোধিতার ইঙ্গিত মিলেছে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের গলাতেও। তিনি বলেছেন, ‘‘বিল ঘিরে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।’’ তবে শিবসেনাকে নিয়ে আশঙ্কা থাকলেও শরিক জেডিইউ, অকালি এবং অগপ পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে। এনডিএ-র বাইরে থাকলেও বিলকে সমর্থন করার কথা জানিয়েছে বিজু জনতা দল। তবে নাগা পিপলস ফ্রন্টের সমর্থন সরকারের পক্ষে থাকবে বলে বিজেপি আশা করলেও, তাদের চূড়ান্ত অবস্থান নিয়ে সংশয় রয়েছে। মেঘালয়ে আগাথা সাংমার দল জানিয়ে দিয়েছে, তারা ভোটাভুটিতে অংশ নেবেন না।
প্রথম মোদী সরকারের একেবারে শেষ পর্বে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে নাগরিকত্ব বিল সংসদে পেশ করে সরকার। সে সময়েও এ বারের মতো লোকসভায় বিলটি পাশ হয়ে যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজ্যসভার অঙ্ক পক্ষে না থাকায় বিলটি পেশ করার ঝুঁকি নেয়নি সরকার। এ বার সংখ্যা অনুকূল হলেও কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে শেষ মুহূর্তে বেশ কিছু ছোট দলকে পাশে পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন: বিল-বিরোধী ত্রিপুরা অশান্ত, শূন্যে গুলি পুলিশের
অন্য দিকে, পাল্টা লড়াইয়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বিরোধীরা। বিশেষ করে টিআরএস লোকসভায় বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় উজ্জীবিত বিরোধী শিবির। একা তৃণমূলই বিলে কুড়িটি সংশোধনীর প্রস্তাব জমা দিয়েছে। গত কাল লোকসভায় ৩৩৪-১০৬ ভোটে সরকার জিতলেও, রাজ্যসভায় দুই শিবিরের ব্যবধান কম হওয়ায় লড়াই প্রবল হওয়ার আশঙ্কা করছে দু’পক্ষই। কাল নাগরিকত্ব বিলের ভোটাভুটিতে সাংসদদের উপস্থিত থাকার জন্য হুইপ জারি করেছে শাসক-বিরোধী সব দলই।