সেনা বাঙ্কার। ডোকা লা-য়। নিজস্ব চিত্র।
দু’টি বাঙ্কার গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ। দু’বার ফ্ল্যাগ মিটিং। তার পরেও কাটছে না ২২ দিনের অচলাবস্থা। সিকিম-তিব্বত-ভুটান সীমান্তে ডোকা লা এলাকায় চোখে চোখ রেখে এখন হাজার আষ্টেক সেনা। এ পারে চার ব্যাটেলিয়ন ভারতীয় সেনা, তো ও পারে সমসংখ্যক চিনা সেনা।
এক সেনাকর্তার কথায়, ‘‘নো ওয়ার-নো পিস অবস্থা। কিন্তু পরিস্থিতি যে কোনও সময় অন্য দিকে ঘুরে যেতে পারে।’’ পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে বৃহস্পতিবার সিকিম যাচ্ছেন খোদ সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত।
জানা যাচ্ছে, ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধের পর ১৪ হাজার ফুট উপরে ভারত, ভুটান ও চিন সামান্তে ডোকা লা মালভূমি এলাকায় ইন্দো টিবেটান বর্ডার পুলিশ (আইটিবিপি) মোতায়েন থাকে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে তাদের শিবির ১৫ কিমি ভিতরে। কিন্তু সেনাও ওই চত্বরে নিয়মিত লং রুট পেট্রলিং করে। সম্প্রতি সেনার ইঞ্জিনিয়াররা ডোকা লা (পাস বা গিরিবর্ত্ম) পর্যন্ত সুন্দর রাস্তাও তৈরি করে ফেলেছেন। সেনা সূত্রের দাবি, ডোকা লা ভারতীয় সীমান্তের মধ্যে হলেও চিন ওই এলাকায় রাস্তা নির্মাণের ছক কষেছে। ফলে ওই সীমান্তে টহলদারি বাড়াতে হয়েছে ভারতীয় সেনাকে। ’৬২ যুদ্ধের পর থেকেই ওই অঞ্চলে অনেক অস্থায়ী বাঙ্কার রয়েছে। টহলদারির সময় সেখানে জওয়ানরা বিশ্রাম নেন। মাস দু’য়েক আগে চিনা ফৌজ এসে ডোকা লা-র লালটেন এলাকার বাঙ্কারগুলি ভেঙে দিতে বলে। ভারত তাতে পাত্তা দেয়নি।
আরও পড়ুন: ঢিল পড়তেই গর্জন শুরু ড্রাগনের
সেনা সূত্রের খবর, তার পর থেকেই দুই বাহিনীর মধ্যে তৎপরতা বাড়তে থাকে। একেবারে উত্তরের ‘ফিঙ্গার টিপ’ অঞ্চল ছাড়া সিকিম সীমান্তে আর কোথাও কখনও আগে যা হয়নি। দু’পক্ষের সেনা ডোকা লা অঞ্চলে বার বার সামনাসামনি চলে আসতে থাকায় উত্তেজনা বাড়ে। ভারত সীমান্তে প্রবেশ করে চিন কেন রাস্তা তৈরি করছে, তা নিয়েও প্রতিবাদ জানায় ফোর্ট উইলিয়াম। ৬ জুন এ নিয়ে ফ্ল্যাগ মিটিংও হয়।
কিন্তু তার দু’দিন পরেই ৮ জুন চিনা সেনা ভারতের ভূখণ্ডে ঢুকে দু’টি বাঙ্কার গুঁড়িয়ে দেয়। এর পরেই গ্যাংটকের ১৭ নম্বর ব্ল্যাক ক্যাট ডিভিশন থেকে এবং পরে সুকনার কোর কম্যান্ডারের অফিস থেকে বাড়তি সেনা পৌঁছয় ওই এলাকায়। সব মিলিয়ে চার ব্যাটেলিয়ন সেনা জমায়েত করে ফেলা হয় কয়েক দিনের মধ্যেই। পৌঁছে যান ওই তল্লাটের দুই ব্রিগেডিয়ারও। মাউন্টেন ডিভিশনের এক মেজর জেনারেলও এলাকা পরিদর্শনে যান। চিনও বাড়তি সেনা নিয়ে আসে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ভারত ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের অনুরোধ করে। কিন্তু কোনও জুনিয়র অফিসারের উপস্থিতিতে বৈঠক করতে চায়নি চিন। শেষ পর্যন্ত ২০ জুন ভারতের এক ব্রিগেডিয়ার এবং চিনের এক মেজর জেনারেল উপস্থিতিতে সেই বৈঠক হয়। কিন্তু তাতেও সমস্যা মেটেনি। কারণ, চিন কোনও মতেই আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে পিছিয়ে যেতে নারাজ। ফলে ভারতীয় সেনাও পূর্ণ প্রস্তুতি বজায় রাখছে।