লাদাখে ভারতীয় সেনা— ফাইল চিত্র।
শুধু পূর্ব লাদাখ নয়। ভারতের উপর চাপ বাড়াতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) জুড়ে দ্রুতগতিতে সামরিক পরিকাঠামো গড়ে তুলছে চিনা ফৌজ। সাম্প্রতিক উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, আকসাই চিনের সঙ্গে কারাকোরাম পাসকে জুড়তে নতুন একটি রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তা বরাবর বানানো হচ্ছে একাধিক সেনাঘাঁটি এবং ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে লেহ্-দৌলত বেগ ওল্ডি (ডিবিও) সড়ক নির্মাণের ফলে এলএসি জুড়ে ভারতীয় সেনার গতিবিধি অনেক বেড়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত সেনা মোতায়েনের লক্ষ্যেই পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-র ওই উদ্যোগ। চিন অধিকৃত আকসাই চিনের সঙ্গে লাদাখের সীমানা বরাবর লম্বা রাস্তা বানিয়েছে ভারত। লেহ্ থেকে শুরু হয়ে কিছুটা দক্ষিণ-পূর্বে গিয়ে দারবুক, শিয়ক হয়ে ডিবিও বায়ুসেনা ঘাঁটি পেরিয়ে থেমেছে ওই রাস্তা। সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তরে এগোলেই ঐতিহাসিক কারাকোরাম গিরিপথ। ওপারে একদা স্বাধীন রাস্ট্র পূর্ব তুর্কিস্তান তথা চল্লিশের দশকে চিন অধিকৃত শিনজিয়াং প্রদেশ।
১৫ জুন পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে ছ’মাস কেটে গেলেও পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দেয়নি বেজিং। বরং একাধিক সূত্রে খবর মিলেছে, লাদাখের ৫৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এলএসি-র ওপারে চিনা ফৌজের সমাবেশ বাড়ছে। প্রায় ১০ মিটার চওড়া আকসাই চিন-কারাকোরাম পাস সংযোগরক্ষাকারী সড়কটি তৈরি হলে ভারতীয় বায়ুসেনার ডিবিও অ্যাডভান্সড ল্যান্ডিং গ্রাউন্ডের দূরত্ব প্রায় দু’ঘণ্টা কমে যাবে। ফলে বিষয়টি চিন্তা বাড়িয়েছে ভারতীয় সেনার।
কারাকোরাম পাসেও ও পারে শিনজিয়াং প্রদেশে ইয়ারকন্দ, কাশগড়, খোটান, শাহিদুল্লার মতো একাধিক ঐতিহাসিক জনপদ রয়েছে। উইঘুর মুসলিমদের বিদ্রোহ দমনে প্রতিটি জায়গাতেই সেনা ঘাঁটি রয়েছে চিনের। এলএসি থেকে ৩২০ কিলোমিটার দূরে হোটানে রয়েছে চিনা বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান ঘাঁটি। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের সময় শিনজিয়াং সেনা কম্যান্ডের সদর দফতরের সঙ্গে কারাকোরাম পাসের সংযোগরক্ষাকারী একটি সড়ক বানানো হয়েছিল। সেটিকে সংস্কার করে দৈর্ঘ্য বাড়ানোর কাজ চলছে।
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর ইস্তফা গ্রহণ করলেন না স্পিকার, সোমবার হাজিরার নির্দেশ
লাদাখে সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পরে আকসাই চিনে মাটির তলার সুড়ঙ্গ এবং জ্বালানি তেলের ট্যাঙ্ক বানিয়েছে পিএলএ। এক সেনা আধিকারিক বলেন, ‘‘তিব্বতের রাজধানী লাসায় রেল যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে আগেই। মূল ভূখণ্ড থেকে দ্রুত সেনা এবং সামরিক সরঞ্জাম পরিবহণের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে চিন।’’ তিনি জানান, লাদাখের পাশাপাশি সিকিম এবং অরুণাচল সীমান্তেও সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক বিমানঘাঁটি, ভূগর্ভস্থ জ্বালানি ভাণ্ডার এবং বাঙ্কার বানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ প্যাংগংয়ে চিনা সেনাকে বোকা বানায় পানাগড়ের ‘পাহাড়ি বাহিনী’