ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার)।
আলোর উৎসবেও ওদের জীবন অন্ধকার। ঘরে তেল নেই। দু’বেলা হাঁড়িই চড়ে না হয়তো। তাই যে প্রদীপ জ্বালিয়ে গোটা দেশ দীপাবলির উৎসবে মাতে, সেই প্রদীপের তেল ওরা অলক্ষ্যে ঢেলে নেয় বাড়ি থেকে আনা বোতলে, কৌটোর ভিতরে। পাত্র ভরলেই বাড়ির পথে ছুট।
অযোধ্যায়, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের খাস তালুকে ধরা পড়েছে এই দৃশ্য। যে অযোধ্যায় আর দু’মাস পরেই রামমন্দিরের জমকালো উদ্বোধন, সেখানে বেঁচে থাকার রসদ জোগাতে ব্যবহৃত প্রদীপ থেকে খাওয়ার তেল সংগ্রহ করতে হচ্ছে শিশুদের! দৃশ্যটি দেখে প্রশ্ন উঠছে, এই কি তবে প্রদীপের তলায় জমাট বাঁধা অন্ধকার?
৪১ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়োয় ধরা পড়েছে ওই দৃশ্য। আর ভিডিয়োটি পোস্ট করেছেন উত্তরপ্রদেশের বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। ভিডিয়োর বিবরণে অখিলেশ লিখেছেন, ‘‘দেবত্বের পাশে দারিদ্র’’। আনন্দবাজার অনলাইলন ওই ভিডিয়ো যাচাই করেনি।
সপা প্রধান জানিয়েছেন, দৃশ্যটি অযোধ্যার সরযূ নদীর তীরের। এই সরযূর ঘাটে গত সাত বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে দীপোৎসব। প্রতিবছরই দীপাবলির আগের রাতে লক্ষ লক্ষ মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয় সরযূর বাঁধানো ঘাটের দুই পারে। তবে এ বছর রেকর্ড ছুঁয়েছে প্রদীপের সংখ্যা। মোট ২২ লক্ষ মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়েছিল এ বছরের দীপোৎসবে। অখিলেশ লিখেছেন, ভিডিয়োয় সেই প্রদীপ থেকেই তেল ঢেলে নিতে দেখা যাচ্ছে জনা তিরিশেক শিশুকে। শুধু নিভে যাওয়া প্রদীপ নয়। প্রজ্জ্বলিত প্রদীপকেও অনায়াসে হাতে তুলে কাত করে হাতের প্লাস্টিকের কৌটোয় তেল ঢেলে নিতে দেখা যায় তাদের।
অখিলেশ ভিডিয়োটি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘যখন দারিদ্র তোমায় বাধ্য করে প্রদীপ থেকে তেল ঢেলে নিতে, তখন উৎসবের আলো তো স্তিমিত হবেই।’’
রবিবারই উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় সরযূ নদীর ঘাটে জ্বালা ওই ২২ লক্ষ ২৩ হাজার প্রদীপ গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তুলেছে। গত বছরের থেকে এ বছরের প্রদীপের সংখ্যা আরও ছ’লক্ষ ৪৭ হাজার বেশি। সরযূর তীরে রাম কি পিন্ডির ৫১টি ঘাটে এই প্রদীপ জ্বালিয়েছিলেন ২৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবী। ড্রোনের সাহায্যে ওই প্রদীপ গোনার পর যখন গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের প্রতিনিধিরা ঘোষণা করেন, অযোধ্যার ঘাটে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের বিশ্ব রেকর্ড হওয়ার কথা, তখন অযোধ্যা জুড়ে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি উঠেছিল শনিবার। তবে তার অনতিবিলম্বেই প্রকাশ্যে এল একেবারে বিপরীতমুখী ওই দৃশ্য।
অখিলেশ ভিডিয়োর বিবরণে লেখেন, ‘‘আমাদের একমাত্র ইচ্ছে এই যে, এমন উৎসব আসুক যাতে শুধু নদীর ঘাট নয়, প্রতিটি দরিদ্রের বাড়িও আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।’’