প্রতীকী ছবি।
বন্ধুদের সঙ্গে স্কুলব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোয় ছোট্ট পড়ুয়া। কিন্তু স্কুলের কাছাকাছি যেতেই তার মনের মধ্যে শুরু হয়ে যায় অশান্তি। ক্লাসরুমে তার পছন্দ একদম শেষ বেঞ্চ। সমস্ত পড়া জানা থাকলেও শিক্ষকদের মুখোমুখি হতে ভয় পায় সে। ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ বলতে কেউ নেই। এ ভাবে কয়েক বছর চলার পরে পুরোপুরি হারিয়ে যায় খুদে পড়ুয়াটি। জীবনে আর কোনও দিনই মূল স্রোতে ফিরে আসা হয় না তার।
এটি বিশেষ একটি পড়ুয়ার সমস্যা নয়। অনেক স্কুলেই বিভিন্ন ক্লাসে এ ভাবেই ছড়িয়ে রয়েছে খুদে পড়ুয়ারা। কোনও পড়ুয়া হয়তো অকারণ অবসাদের শিকার। কেউ বা সব জেনেও অজানা ভয়ে শিক্ষকের প্রশ্নের জবাব দিতে পারে না। কেউ কেউ সহপাঠীদের সঙ্গে সহজ ভাবে মিশতে না-পেরে ক্লাসঘরের কোণে কুঁকড়ে থাকে। কারও কারও মধ্যে অল্প বয়সে জাঁকিয়ে বসেছে হরেক বিকৃতি। রুপোলি পর্দায় এই ধরনের পড়ুয়াদের দিকে শিক্ষকদের হাত বাড়িয়ে দিতে দেখা গেলেও বাস্তবে সেই সহায়তা যে খুব সুলভ নয়, তা মেনে নিচ্ছেন বিভিন্ন স্কুলের কর্তৃপক্ষ।
তাই এ বার শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে উদ্যোগী হয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব স্কুলস ফর ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট। যাতে শিক্ষকেরা ওই সব পড়ুয়ার পাশে দাঁড়াতে পারেন। অবসাদ-সহ নানান সমস্যায় ভুগতে থাকা পড়ুয়াদের দিকে শক্ত হাত বাড়িয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছে কাউন্সিল ফর দ্য ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট এগজামিনেশন বা আইএসসিই-র ওই সংগঠন। ২৯ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর রাজস্থানের জয়পুরে বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করেছে তারা।
সংগঠনের উত্তর-পূর্ব ভারত শাখার সম্পাদক তথা বরাহনগরের সেন্ট্রাল মডার্ন স্কুলের অধ্যক্ষ নবারুণ দে জানান, সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নানান চাপে শিশুর শিশুসুলভ আচরণই যেন লোপ পেয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি স্কুলের প্রত্যেক শিক্ষককে এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। এক জন পড়ুয়ার প্রতি শিক্ষকের ভুল আচরণ গোটা সমাজ ব্যবস্থায় মারাত্মক আঘাত হানতে পারে। সেই প্রবণতা রুখতেই বিশেষ কর্মশালা।
‘হ্যাপি ক্লাসরুম, হ্যাপি চাইল্ড’ নামে ওই কর্মশালায় যোগ দিচ্ছেন কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুরের ১২৫টি স্কুলের অধ্যক্ষেরা। থাকছেন গোটা দেশের ওই সংগঠনের অধীনে থাকা ১৬০০ স্কুলের কর্তৃপক্ষ। কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞ, মনোবিদ ছাড়াও মানসিক রোগে আক্রান্ত শিশুদের পড়াতে অভিজ্ঞ শিক্ষক এবং শিশুদের উন্নয়নে যুক্ত অভিজ্ঞদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে স্কুলের অধ্যক্ষদের।
কী ভাবে ক্লাসভর্তি ছেলেমেয়ের মধ্য থেকে অবসাদে ভুগতে থাকা পড়ুয়াকে বেছে নিতে হয়, প্রশিক্ষণে সেই কৌশল রপ্ত করার উপরে জোর দেওয়া হবে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা কী ভাবে শিশুদের কাছের মানুষের জায়গা নিতে পারবেন, সেটাই দেখানো হবে ওই কর্মশালায়। পড়ুয়ার চুপচাপ বসে থাকা, পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া ইত্যাদি জটিলতা আসলে কীসের উপসর্গ, কী ভাবে তার মোকাবিলা সম্ভব— কর্মশালায় তা-ও দেখাবেন মনোবিদেরা। প্রশিক্ষণের পরে অধ্যক্ষেরা স্কুলে ফিরে সব শিক্ষককে সেই পাঠ দেবেন। সংশ্লিষ্ট পড়ুয়াদের জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা হবে।
মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল বলেন, ‘‘এটা ভাল উদ্যোগ। মানসিক সমস্যা বুঝতে গেলে কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। শিক্ষকেরা শিশুদের মানসিক সমস্যাগুলো ধরে ফেলতে পারলে অনেকটাই সুবিধা হবে।’’