ভারতে এই মুহূর্তে করোনা রোগীর সংখ্যা কমতে থাকলেও, বিশ্বের নানা প্রান্তে নতুন করে সংক্রমণ ছড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গতকাল হংকং ও দক্ষিণ কোরিয়াতে যথাক্রমে ১০ ও ৬.২১ লক্ষ ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় চিনের একাধিক প্রদেশে লকডাউন আগেই জারি করা হয়েছিল।
ফাইল চিত্র।
বিশ্বের নানা প্রান্তে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সংক্রমণের নতুন ঢেউ আসার আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। ভারতেও চতুর্থ ঢেউ আসার আশঙ্কায় সব রাজ্যগুলিকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করে দিয়েছে কেন্দ্র। চিঠিতে করোনা পরীক্ষা, নজরদারি বৃদ্ধির সঙ্গেই যাঁদের ইনফ্লুয়েঞ্জা বা শ্বাসকষ্টজনিত উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, তাঁদের করোনা পরীক্ষার সঙ্গেই নির্দিষ্ট সংখ্যক নমুনা জিনোম পরীক্ষার জন্য পাঠানোর নির্দেশ রাজ্যগুলিকে দিয়েছে কেন্দ্র। এবার উদ্বেগের আরও বড় কারণ, স্পাইক প্রোটিন পাল্টে ওমিক্রনের নতুন একটি শাখা দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে।
ভারতে এই মুহূর্তে করোনা রোগীর সংখ্যা কমতে থাকলেও, বিশ্বের নানা প্রান্তে নতুন করে সংক্রমণ ছড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গতকাল হংকং ও দক্ষিণ কোরিয়াতে যথাক্রমে ১০ ও ৬.২১ লক্ষ ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় চিনের একাধিক প্রদেশে লকডাউন আগেই জারি করা হয়েছিল। উদ্বেগ বাড়িয়ে গত এক বছরের মধ্যে প্রথম করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে চিনে। কেবল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেই নয়, মহাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে সংক্রমণ ছড়িয়েছে ইউরোপেও। গত এক সপ্তাহে ইংল্যান্ড ও ইতালিতে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৪২ শতাংশ। ফ্রান্সে ওই বৃদ্ধির হার প্রায় ৩৫ শতাংশ। প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওমিক্রন প্রজাতির একটি ‘সাব ভেরিয়েন্ট’ নতুন করে সংক্রমণের জন্য দায়ী। ‘হু’-র বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ওই ভাইরাসের প্রজাতিতে মিউটেশনের মাধ্যমে স্পাইক প্রোটিনে কিছু চরিত্রগত পরিবর্তন ঘটেছে। যার ফলে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় সেগুলিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ওমিক্রন ভাইরাসের ওই শাখা প্রজাতিটি সংক্রমণের প্রশ্নে মূল ওমিক্রনের মতোই শক্তিশালী কিনা— তা এখনই নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা। তবে যে গতিতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তাতে অন্যান্য দেশেও ওই প্রজাতির ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগবে না বলেই মনে করছেন গবেষকেরা।
ভারতে চতুর্থ ঢেউকে রুখতে তড়িঘড়ি রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ। বিশ্ব পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আজও বৈঠকে বসেছিলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। গোটা পৃথিবীতে নতুন করে সংক্রমণ ছড়ানোর আবহে ২৭ মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা স্বাভাবিক ভাবে শুরু করা উচিত কি না, তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। কেন্দ্রের পাঠানো চিঠিতে আপাতত বিমানবন্দরগুলিতে অধিক সংখ্যায় নমুনা পরীক্ষা ও সেই নমুনাকে ইন্ডিয়ান সার্স কোভ-২ জিনোমিক্স কনর্সোটিয়াম (আইএনএসএসিওজি)-এ পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও রাজ্যের কোনও এলাকায় যদি হঠাৎ করে সংক্রমণের প্রকোপ বেড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে সেখানকার বাসিন্দাদের নমুনারও জিনোম পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, প্রতিটি রাজ্যকে পরীক্ষা ও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। যাঁরা প্রতিষেধক নেননি, টিকাকরণের আওতায় তাঁদের নিয়ে আসার উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের চিঠিতে বলা হয়েছে, আর্থিক ও সামাজিক গতিবিধি স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে কোভিড নিয়মবিধি পালনে যাতে কোনও ঢিলেমি না দেখা যায়, তার দিকে বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে।