তোড়জোড়: বাজেটের প্রস্তুতি পর্বে সমস্ত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে। ছবি: পিটিআই
কোভিড-কাতর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কেন্দ্রীয় বাজেটে সাধারণ মানুষের হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করল পশ্চিমবঙ্গ। আজ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, সাধারণ মানুষের হাতে টাকা দিলে ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। বাজারে চাহিদা বাড়বে। অর্থনীতির এই নিয়ম মেনে রাজ্য সরকার ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মতো একাধিক প্রকল্প নিয়েছে। তার সুফলও মিলেছে।
বাজেটের প্রস্তুতি পর্বে আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সমস্ত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রাজ্যের তরফে চন্দ্রিমা দাবি তুলেছেন, কোভিডের ধাক্কায় রাজ্যগুলি অর্থ সঙ্কটে পড়েছে। অতিমারির মোকাবিলা ও অর্থনীতি চাঙ্গা করতে বেশি টাকা খরচের প্রয়োজন। তা মাথায় কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে অর্থসাহায্য করুক। রাজ্যের জিডিপি-র ৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনা শর্তে ঋণ নিতে দেওয়া হোক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে এম কে স্ট্যালিনের তামিলনাড়ু সরকারও।
বৈঠকের পরে চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের প্রায় ৯৩ হাজার কোটি পাওনা রয়েছে। তার মধ্যে আমপান-বুলবুল-ইয়াসের ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওনাও রয়েছে।’’ ঘটনাচক্রে আজই কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গে ইয়াসের ক্ষতিপূরণে কেন্দ্রীয় সাহায্য বাবদ ৫৮৬.৫৯ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে।
আজ চন্দ্রিমা জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্যের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ারও দাবি তুলেছেন। অর্থ মন্ত্রকের হিসাবেই গত অর্থ বছরে জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ১৭০০ কোটি টাকা পাওনা বকেয়া রয়েছে। রাজ্যের হিসাবে অবশ্য বকেয়ার পরিমাণ আরও বেশি। প্রায় ২০৮০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় করের ভাগ হিসাবে রাজ্যগুলিকে যে অর্থ বিলি করা হয়, তা এখন কেন্দ্র মাসের ২০ তারিখে রাজ্যের কোষাগারে পাঠায়। চন্দ্রিমার দাবি, ওই টাকা মাস পয়লাতেই পাঠানো হোক। তা হলে বেতন-পেনশন দেওয়ার পরে রাজ্যের নগদ অর্থের সঙ্কট তৈরি হয় না।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ আজ বেশ কিছু রাজ্য অভিযোগ তুলেছে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে মোদী সরকার নিজের ব্যয়ভার কমিয়ে ফেলছে। খাদ্য সুরক্ষা, সমগ্র শিক্ষা অভিযান, সীমান্তবর্তী এলাকা উন্নয়ন, দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনায় কেন্দ্র আগে কোথাও ১০০ ভাগ অর্থ দিত, কোথাও ৭৫ ভাগ। এখন কেন্দ্র নিজের দায় কমিয়ে ৬০ ভাগে নিয়ে এসেছে। রাজ্যকে দিতে হচ্ছে ৪০ ভাগ। রাজ্যগুলি কেন্দ্রের ভাগ বাড়ানোর দাবি তুলেছে।
কোভিডের জেরে গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে ৩ শতাংশের বদলে ৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যে মাত্র ০.৫ শতাংশ ছিল শর্তহীন। বাকি পরিমাণ ঋণ নিতে গেলে রাজ্যগুলিকে মোদী সরকারের নানা কর্মসূচি রূপায়ণ করতে হত। আজ রাজ্যের হয়ে চন্দ্রিমা দাবি তুলেছেন, বিনা শর্তে ৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নিতে দেওয়া হোক রাজ্যগুলিকে। যাতে রাজ্যগুলি কোভিড মোকাবিলা, উন্নয়ন ও মানুষকে সুরাহা দিতে আরও বেশি খরচ করতে পারে।