ছবি: এএফপি।
চন্দ্রযান-২ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্যত ‘যুদ্ধ’ বেধে গেল ভারত-পাকিস্তানের নেট-জনতার।
চাঁদের মাটি থেকে ২.১ কিমি উপরে বিক্রম ল্যান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরে শনিবার সকাল থেকেই টুইটারে #ইন্ডিয়াফেলড্ বলে বিদ্রুপ শুরু করেন পাকিস্তানের অনেকে। ছড়িয়ে পড়ে নানা মিম। এমনকি এই আক্রমণে যোগ দেন পাকিস্তানের বিজ্ঞানমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধরিও। তবে চুপ করে থাকেননি ভারতীয়রাও। তাঁরাও পাল্টা জবাব দেন #ওয়ার্থলেসপাকিস্তান হ্যাশটাগে পাল্টা আক্রমণে গিয়ে, যা টুইটার ট্রেন্ডিংয়ে শীর্ষে ছিল দীর্ঘক্ষণ।
কেবল বিদ্রুপকে উড়িয়ে দেওয়াই নয়, ইসরোর জন্যও সহমর্মিতা, সমর্থনের বাঁধ ভাঙে টুইটারে। কান্নায় ভেঙে পড়া ইসরো চেয়ারম্যান কে শিবনকে বুকে জড়িয়ে ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সান্ত্বনা দেওয়ার ভিডিয়োও ভাইরাল হয় সকাল থেকে। ট্রেন্ডিং তালিকায় সন্ধে অবধি দাপিয়েছে #ইসরোপরগর্বহ্যায়, #প্রাউডঅবইসরো-র মতো হ্যাশট্যাগ। অমিত শাহ, পীযূষ গয়াল, নির্মলা সীতারামনের মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা তো বটেই, রাহুল গাঁধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীবাল, এম কে স্ট্যালিনের মতো বিরোধী নেতারাও ইসরোর বিজ্ঞানীদের পক্ষে সমর্থন উজাড় করে দেন টুইটারে।
চন্দ্রযান ২-এর যাত্রা শুরু হওয়ার আগে অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী এই অভিযান থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছেন কি না। সেই প্রশ্নে তরজা বাধে বিজেপি ও বিরোধী শিবিরের। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি-বিরোধীরা অনেকে কটাক্ষের সুরে বলেছিলেন, মোদী এই অভিযান থেকে নিজের প্রচার করতে চাইছেন। তাই তিনি বিক্রমের সঙ্গে একেবারে ‘বেতাল’-এর মতো জুড়ে রয়েছেন। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রকে বিঁধে বলেছিলেন, ‘‘দেশের আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে মানুষের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘোরানোর জন্য চন্দ্রযান ২-এর প্রচার চলছে।’’ অভিযানের শেষ লগ্নে ছন্দপতনের পরেও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘চমক’ দিতে নতুন সরকারের ঠিক একশো দিনের মাথাতেই চাঁদে বিক্রমকে নামাতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করা হল না তো? অভিযানের শুরুতেই যখন এক বার বিপত্তি ঘটে যাত্রা পিছিয়ে গিয়েছিল, তখন কি সরকারের ইসরোকে আরও সময় দেওয়া উচিত ছিল?
বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে রাজনীতিকে জড়িয়ে ফেলায় মোদী-সরকারকে নিশানা করা হলেও দল-মত নির্বিশেষে ভারত ইসরোর বিজ্ঞানীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আঁকা হয়েছে ছবি— ভারতের মানচিত্রটাই জড়িয়ে ধরেছে ইসরো চেয়ারম্যান শিবনকে। অভিনেত্রী স্বরা ভাস্করের মতো ঘোষিত বিজেপি-বিরোধী ব্যক্তিত্বও টুইটারে লিখেছেন, ইসরোর জন্য গর্বিত। যারা চেষ্টা করে, তারা হারে না। টুইটারে অভিনন্দন জানিয়েছেন মমতাও। শিবনকে মোদীর সান্ত্বনা দেওয়ার ভিডিয়ো তুলে ধরে বিজেপি সমর্থকেরা প্রধানমন্ত্রীর হয়ে সুর চড়িয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মোদী অত্যন্ত মানবিক বলেই এ ভাবে বিজ্ঞানীকে বুকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিয়েছেন, উৎসাহ জুগিয়েছেন।
এর মধ্যেই ইসরো চেয়ারম্যানকে নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট করায় পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়কে খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুমালার শ্রীবেঙ্কটেশ্বর মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শিবনের ছবি শনিবার সকালে ফেসবুকে পোস্ট করে অনিকেত লেখেন ‘‘আমি এই চন্দ্রযান-পাঠানো বিজ্ঞানী (?) কে নিয়ে লজ্জিত। গর্বিত হওয়ার প্রশ্নই নেই।’’ অনিকেতের অভিযোগ, এর পরেই তাঁর কাছে হুমকি দিয়ে ফোন ও মেসেজ আসতে শুরু করে। পরিচালকের অভিযোগ, এক জন তাঁকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে ইউএপিএ আইনে অভিযুক্ত করার কথা বলেছেন। পোস্ট মুছে না-ফেললে গণপিটুনি দিয়ে প্রাণে মারার হুমকিও দিয়েছেন। কলকাতা পুলিশের ফেসবুকে পেজে তিনি অভিযোগ করেছেন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, রাত পর্যন্ত তারা কোনও অভিযোগ পায়নি।
এমন মিশ্র আবেগের বন্যাতেও হারায়নি বাঙালির রসবোধ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরেছে টিনটিনের চাঁদে অভিযানের কাহিনি থেকে ক্যাপ্টেন হ্যাডক ও প্রফেসর ক্যালকুলাসের কথোপকথন। কার্টুনিস্ট ‘মালি’ শেয়ার করেছেন একটি কার্টুন, যেখানে বিক্রম আর চাঁদ— দু’জনেই হাসছে। সঙ্গে লেখা, বিক্রম হয়তো ‘চাঁদমামা’র বাড়িতে এতই মজা করছে যে, সে কথা কাউকে জানতে দিতে চায় না।