Chandigarh Airport

ভগত সিংহের নামে চণ্ডীগড় বিমানবন্দর, ‘মন কি বাত’-এ ঘোষণা নরেন্দ্র মোদীর, লক্ষ্য পঞ্জাব?

প্রধানমন্ত্রী আজ ‘মন কি বাত’-এ চণ্ডীগড় বিমানবন্দরের নাম ভগত সিংহের নামে রাখার সিদ্ধান্তকে ইন্ডিয়া গেট চত্বরে সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৫৭
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কংগ্রেসের মহাত্মা গান্ধী, সর্দার বল্লভভাই পটেল, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে নিজের ‘আইকন’ হিসেবে প্রায় করায়ত্ত করে ফেলেছেন। এ বার নরেন্দ্র মোদীর লক্ষ্য আম আদমি পার্টির নতুন ‘আইকন’ ভগত সিংহ।

Advertisement

আজ মোদী ঘোষণা করলেন, চণ্ডীগড় বিমানবন্দরের নামকরণ হবে ভগত সিংহের নামে। ২৮ সেপ্টেম্বর ভগত সিংহের জন্মবার্ষিকী। তার ঠিক তিন দিন আগে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ‘মন কি বাত’-এ এই ঘোষণা করে আসলে পঞ্জাবে আম আদমি পার্টির নতুন আইকন ভগত সিংহকে করায়ত্ত করার চেষ্টা বলেই রাজনীতিকরা মনে করছেন। কারণ পঞ্জাবের আম আদমি পার্টির সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান নিজেকে ভগত সিংহের অনুগামী হিসেবেই তুলে ধরেন। সেই পঞ্জাবে কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে বিজেপি প্রধান বিরোধী দল হয়ে ওঠার চেষ্টা শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নিজের মুখে চণ্ডীগড়ের বিমানবন্দরের নামকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা সেই প্রচেষ্টারই অঙ্গ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।

প্রধানমন্ত্রী আজ ‘মন কি বাত’-এ চণ্ডীগড় বিমানবন্দরের নাম ভগত সিংহের নামে রাখার সিদ্ধান্তকে ইন্ডিয়া গেট চত্বরে সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে তুলনা করেছেন। একই সঙ্গে ভগত সিংহের জন্মবার্ষিকীর দিনই যে তাঁর সরকারের আমলে পাকিস্তানে ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ হয়েছিল, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘আমি জানি, সার্জিকাল স্ট্রাইক, এই দুটি শব্দ বললেই সকলের জোশ বা উৎসাহ চার গুণ বেড়ে যাবে।’’ স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে ভগত সিংহের জন্মবার্ষিকীর সঙ্গে সার্জিকাল স্ট্রাইকের বর্ষপূর্তিও উদযাপন করার কথা বলেছেন মোদী।

Advertisement

চণ্ডীগড় বিমানবন্দরের নামকরণ নিয়ে গত সাত বছর ধরেই পঞ্জাব ও হরিয়ানা সরকারের মধ্যে বিবাদ চলছে। আম আদমি পার্টি, কংগ্রেস, হরিয়ানা থেকে একইসঙ্গে এই বিমানবন্দরের নাম ভগত সিংহের নামে রাখার দাবি উঠেছিল। কিছু দিন আগে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মান ও হরিয়ানার উপমুখ্যমন্ত্রী দুশ্যন্ত চৌটালা এ বিষয়ে বৈঠক করে কেন্দ্রের কাছে দাবি করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আজ সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে চণ্ডীগড়, পঞ্জাব ও হরিয়ানার মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা আজই দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ‘মন কি বাত’-এ কোনওদিন রাজনীতির প্রসঙ্গ আসেনি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা কিন্তু মোদীর আজকের ঘোষণাকে রাজনৈতিক পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন। কারণ দিল্লির পরে পঞ্জাবের ক্ষমতা দখলের পরে আম আদমি পার্টির মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হয়েছিল ভগত সিংহের খটকর কলান গ্রামে। ভোটের প্রচারের সময়ে নিজেকে বি আর অম্বেডকর ও ভগত সিংহের অনুগামী বলেই প্রচার করেছিলেন মান। ভগত সিংহকে সম্মান জানাতে নিজের মাথায় সবসময়ই বাসন্তী রঙের পাগড়ি পরেন পঞ্জাবের আম আদমি পার্টির সরকারের মুখ্যমন্ত্রী।

এই পঞ্জাবে বিজেপি এখন প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠতে চাইছে। বিধানসভা ভোটে হারের পরে কংগ্রেসের এখন ভাঙা সংসার। আগেই দল ছাড়া ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সুনীল জাখরের মতো নেতাও বিজেপিতে। নভজ্যোৎ সিংহ সিধু জেলে। যে দলিত নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করে কংগ্রেস ভোটে গিয়েছিল, সেই চরণজিৎ সিংহ চন্নী কার্যত নিরুদ্দেশ। উল্টো দিকে এনডিএ ছাড়ার পরে অকালি দলেরও দুর্বল অবস্থা। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখে ভগত সিংহের স্তুতি ও বিমানবন্দরের নামকরণ পঞ্জাবের মাটিতে তাঁদের রাজনৈতিক ফায়দা দেবে।

চণ্ডীগড় বিমানবন্দরের নামকরণ ভগৎ সিংহের নামে করার পাশাপাশি তাঁর লেখা পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নামে চেয়ার চালু করার দাবি পাঁচ বছর আগে তুলেছিল পঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ ও রাজস্থানের এসএফআই। ওই দাবিতে ২০১৭ সালের মার্চে চণ্ডীগড়ে এসএফআইয়ের মিছিলে লাঠি, জল-কামান চালিয়েছিল পুলিশ। শেষ পর্যন্ত বিমানবন্দর ভগতের নামে হওয়ায় দীর্ঘ আন্দোলনের জয় হল বলে এসএফআইয়ের কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে দাবি করেছেন সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস ও সর্বভারতীয় সভাপতি ভি পি সানু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement