বিহারে দলিত মহিলাদের পরিচালিত একটি ব্যান্ড। —ফাইল ছবি
বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণ। রামবিলাস পাসোয়ান, রামদাস আঠওয়ালের মতো শরিক নেতাদের হুমকি। চাপ বিজেপির দলিত সাংসদদেরও। সর্বোপরি দেশ জুড়ে বাড়তে থাকা দলিতদের ক্ষোভ। ২০১৯-এ দলিত ভোটের দায়ে এই সম্মিলিত চাপের মুখে মাথা নোয়াতে বাধ্য হল নরেন্দ্র মোদী সরকার। তফসিলি জাতি-জনজাতি নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের যে সব ধারার ফাঁস আলগা করার রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট, আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সেই সব ধারা ফের আইনে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিল।
সংসদের চলতি অধিবেশনেই এ নিয়ে বিল আনবে সরকার। বিলটি পাশ হলে তফসিলি জাতি-জনজাতির উপর নির্যাতনে অভিযুক্তদের প্রাথমিক তদন্ত ছাড়াই গ্রেফতার করা যাবে। উচ্চপদস্থ অফিসারের অনুমতির প্রয়োজন হবে না। আগাম জামিনও মিলবে না। গত ২০ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট ১৯৮৯ সালে তৈরি আইনের এই ধারাগুলি খারিজ করেছিল। সেগুলিই ফিরিয়ে আনা হবে।
দলিত নির্যাতন রোধের আইনকে লঘু করার বিরুদ্ধে ৯ অগস্ট দলিত সংগঠনগুলি ভারত বন্ধ ডেকে রেখেছে। ওই বন্ধে ও বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন মোদী সরকারের শরিক লোক জনশক্তি পার্টির প্রধান রামবিলাস পাসোয়ান। আজ মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের পরে তিনি বলেন, ‘‘খুব শীঘ্রই সংসদে বিল আসবে। আশা করি, সকলেই সমর্থন করবে। যারা করবে না, রাজনীতি থেকে তারা উধাও হয়ে যাবে।’’
সুপ্রিম কোর্টের গত ২০ মার্চের ওই রায়ের পরেই দলিতদের বিক্ষোভ শুরু হয় দেশের বিভিন্ন অংশে। মোদী সরকার ‘আদালতের রায়’ বলে যুক্তি দিলেও অভিযোগ ওঠে, কেন্দ্রের আইনজীবীরা আদালতে সুর নরম করেছিলেন। বিচারপতি আদর্শ কুমার গয়ালের বেঞ্চ এই রায় দিয়েছিল। পরে ওই রায় পর্যালোচনার আর্জিও খারিজ করে দেয় বেঞ্চ। অবসরের দিনেই বিচারপতি গয়ালকে জাতীয় পরিবেশ আদালতের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করায় আরও ক্ষোভ বাড়ে। পাসোয়ানরা বিচারপতি গয়ালকে সরানোর দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু আইনি জটিলতায় তা সম্ভব নয় বলেই সুপ্রিম কোর্টের রায় পাল্টে দিতে বিল আনার পথে হাঁটতে হচ্ছে সরকারকে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের যুক্তি, ‘‘দলিত, আদিবাসীদের সুরক্ষায় আমরা দায়বদ্ধ। এতে তা প্রমাণিত।’’ তাঁকে স্বস্তি দিয়ে পাসোয়ানও জানিয়েছেন, তিনি আর বিচারপতি গয়ালকে জাতীয় পরিবেশ আদালতের পদ থেকে সরানোর দাবি তুলবেন না।
সরকারি সূত্রের খবর, প্রথমে অধ্যাদেশ আনার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু তা থেকে সরে আসতে হয়। কারণ অধ্যাদেশ আনতে হলে ১০ অগস্ট সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার পরেই আনতে হত। কিন্তু বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে তার আগের দিন। বন্ধের আগে অধ্যাদেশ জারি করতে হলে ৭ তারিখেই অধিবেশন শেষ করে দিতে হত। কোনওটাই সম্ভব নয় দেখে বিল আনার সিদ্ধান্ত হয়। প্রশ্ন উঠেছে, সুপ্রিম কোর্টের রায় খারিজ করে দিয়ে তৈরি নতুন আইনের বিরুদ্ধে ফের যদি মামলা হয় এবং শীর্ষ আদালত ফের তা খারিজ করে দিলে, কী হবে? এ নিয়ে মুখ খোলেননি আইনমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার ওই সিদ্ধান্তের পরেও সর্বভারতীয় অম্বেডকর মহাসভার নেতৃত্বে দলিত সংগঠনগুলি বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে সরে আসবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। কারণ, দলিত আইন ছাড়াও আরও একগুচ্ছ দাবি রয়েছে তাদের।