নোট বাতিলের ভোগান্তির ক্ষোভ কমাতে আমজনতাকে খুশি করার উপায় খুঁজছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। বাজেটের দেড় মাস আগেই আয়কর এবং অন্য ক্ষেত্রে করে ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন খোদ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সরকারের একটি সূত্রের খবর, বাজেটের আগেই চাষি, ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য মোদী নিজেই কিছু ঘোষণা করতে পারেন। উত্তরপ্রদেশে ভোটের আগে এই পদক্ষেপ করে মানুষের ক্ষোভ কিছুটা কমানোর চেষ্টা করছে সরকার। নোট জোগানের হাল কী, তার খোঁজ নিতে আজ রাতে মন্ত্রিসভার সতীর্থদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে জেটলি বাজেটে আয়কর ও পরোক্ষ করের বোঝা কমানোর ইঙ্গিত দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, বাজেটে কী হতে চলেছে তা খোদ অর্থমন্ত্রীই কী ভাবে ফাঁস করে দিতে পারেন? অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি, জেটলি মোটেই বাজেটে কর কমানো হবে এমন কথা সরাসরি বলেননি। তিনি জানিয়েছেন, ডিজিট্যাল লেনদেন বাড়লে অনেক বেশি লেনদেন করের আওতায় আসবে। কর আদায় বাড়বে। তখন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুই করের হারই আরও বাস্তবসম্মত করা সম্ভব হবে।
সূত্রের খবর, বাজেট অবধি অপেক্ষা করতে চাইছেন না মোদী। পুরনো নোট জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষ হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তাঁর লখনউতে জনসভা করতে যাওয়ার কথা । সেখানেই তিনি এক গুচ্ছ ঘোষণা করতে পারেন। যার মধ্যে চাষি ও ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণে সুদের হার কমানোর ব্যবস্থা থাকতে পারে। ব্যবসায়ীরা বিজেপির বড় ভোটব্যাঙ্ক। সেই ভোট ধরে রাখা জরুরি বলে মনে করছে দল।
নোট বাতিলের ধাক্কায় ব্যবসা-বাণিজ্যে ধাক্কা লাগায় শিল্পমহলও যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। জেটলির সঙ্গে বৈঠক করে শিল্পমহল কর্পোরেট করের হার এক ধাক্কায় ১৮ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি তুলেছে। এমনিতেই ওই করের হার ধাপে ধাপে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জেটলি।
আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা এখন বছরে আড়াই লক্ষ টাকা। তা বাড়ানোর দাবি রয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি, ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো হলে আরও বেশি মানুষ করের আওতা থেকে বেরিয়ে যাবেন। ফলে করদাতার সংখ্যা আরও কমবে। তার বদলে কর কাঠামোয় বদল এনে মধ্যবিত্তদের কিছুটা সুবিধে দেওয়া যেতে পারে।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের মতে, আয়করে ছাড় দিয়ে গরিব বা চাষিদের সুরাহা দেওয়া যাবে না। অথচ নোট বাতিলের ফলে তাঁরাই সমস্যায় পড়েছেন বেশি। তাই তাঁরা যে সব পণ্য বেশি ব্যবহার করেন, সেই ধরনের পণ্যে বাজেটে কর ছাড় দেওয়া হতে পারে। বিজেপি নেতারাও তেমনটাই চাইছেন। তাঁদের যুক্তি, নোট বাতিলের প্রথম দিকে জনসমর্থন মিললেও এক মাস কেটে যাওয়ার পরেও নগদ জোগানের স্বাভাবিক হয়নি। এই অবস্থায় ডিজিট্যাল লেনদেন নিয়ে প্রচারে নেমেছে মোদী সরকার। কিন্তু কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে মানুষকে বোঝানো যত সহজ, ডিজিট্যাল লেনদেনের উপকারিতা বোঝানো তত সহজ নয়। তাই মানুষকে স্বস্তি দিতে দ্রুত কিছু ঘোষণা চাইছে বিজেপি।