নরেন্দ্র মোদী।
আগামী সোমবার লোকসভায় পেশ হতে চলেছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। সূত্রের খবর, ওই বিল অনুযায়ী পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা অ-মুসলিমরা মাত্র পাঁচ বছর শরণার্থী হিসেবে থাকলেই ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন। তবে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁদের এ দেশে এসে থাকতে হবে। অর্থাৎ, বিল পাশ হলে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪-য় যিনি ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন, তিনি এ মাসটা কাটিয়ে দিলেই নাগরিকত্ব পাওয়ার দাবিদার হবেন।
১৯৫৫ সালের মূল আইনে বলা ছিল নাগরিকত্ব পেতে হলে এ দেশে থাকতে হবে ১১ বছর। কিন্তু প্রথম মোদী সরকারের আমলে আনা বিলটিতে তা কমিয়ে ছ’বছর করা হয়। এ বার কমানো হল আরও এক বছর।
এনআরসি-তে যেখানে প্রমাণ দাখিল করতে গিয়ে কালঘাম ছুটেছে সাধারণ মানুষের, সেখানে নতুন বিলে নিঃশর্ত নাগরিকত্বের কথা বলা হয়েছে। নাগরিকত্ব প্রমাণে কাগজজনিত ঝামেলা যাতে না থেকে সে জন্য শুরু থেকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে দরবার করছিলেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। সংশোধিত আইনে কোনও শরণার্থী অ-মুসলিম হলফনামা দিলেই তাঁকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে বলে দাবি বিজেপি নেতাদের। কিন্তু কোনও মুসলিম যদি নিজেকে হিন্দু বা পার্সি বা বৌদ্ধ হিসেবে দাবি করেন, তা হলে তা আটকানোর কোনও উপায় রয়েছে কি না, তা নিয়ে নীরব বিজেপি শিবির। তবে বিজেপির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিলটি আগে আসুক। তা হলেই সব স্পষ্ট হবে। যে প্রশ্নগুলি উঠছে বিলটির বিস্তারিত আলোচনায় নিশ্চয়ই উঠে আসবে।’’
রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করেন নাগরিকত্ব বিল পাশ হলে পশ্চিমবঙ্গে সব থেকে বেশি ফায়দা হবে মতুয়া সম্প্রদায়ের, যারা দীর্ঘ সময় ধরে নাগরিকত্বের দাবিতে সরব। বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, সেই দাবি পূরণ করতেই বিলটি আনছে মোদী সরকার। মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা তথা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন এমন প্রায় ৭০ লক্ষ মতুয়ার নাগরিকত্ব সংক্রান্ত কাগজপত্র নেই। এঁরা মূলত রয়েছেন নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, মালদহ, কোচবিহার-সহ সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলিতে। বিলটি পাশ হলে তাঁরা সুফল পাবেন।’’ কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে বিল পাশ হওয়া পর্যন্ত যে অ-মুসলিমরা শরণার্থী হিসেবে প্রবেশ করেছেন তাঁদের ভবিষ্যৎ কী হবে? বিলে এ ব্যাপারে কোনও স্পষ্ট উল্লেখ না-থাকায় সংশয় ছড়িয়েছে।
শান্তনুবাবুর অবশ্য দাবি, সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার দিন পর্যন্ত আসা শরণার্থীরা নাগরিকত্ব বিলের সুফল পাবেন।
কিন্তু সে ক্ষেত্রে ন্যূনতম পাঁচ বছর এ দেশে থাকার যে মেয়াদের কথা বলা হয়েছে শুধু সেই শর্তই যে অস্বীকার করা হবে তা নয়, ভিত্তিবর্ষ হিসেবে যে দিনটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে তারও কোনও গুরুত্ব থাকে না। এই বিতর্ক নিয়ে আপাতত নীরব বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু দলের নেতারা মনে করছেন, বিলটি পাশ
হলে ২০২১-এ পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে বিজেপির ভোট বাক্সে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে ধস নামাতে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টিকেই প্রচারের প্রধান অস্ত্র করার লক্ষ্য নিয়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। খাদ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পাল্টা দাবি, ‘‘এনআরসি প্রশ্নে বাংলার মানুষ আতঙ্কিত। তিনটি উপনির্বাচনেই তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। বিজেপি যদি ভাবে যে নাগরিকত্ব বিল আনলেই নমঃশূদ্র বা মতুয়াদের ভোট পাবে, তা হলে ভুল ভাবছে।’’
নতুন বিলে বলা হয়েছে ইনার লাইন পারমিট ও ষষ্ঠ তফশিলভুক্ত এলাকায় ওই আইন প্রযোজ্য হবে না। একই দেশে নাগরিকত্বের প্রশ্নে কেন দু’ধরনের নিয়ম আনা হচ্ছে তা নিয়ে আজ প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। তাঁর যুক্তি, ‘‘আগের অধিবেশনে এক দেশ এক সংবিধানের যুক্তি দেখিয়ে কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা প্রত্যাহার করা হল। আর পরের অধিবেশনে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রশ্নে দ্বৈত নীতি নিচ্ছে সরকার। গোটাটাই হচ্ছে রাজনৈতিক ফায়দার স্বার্থে।’’