ছবি: সংগৃহীত।
অতিমারি করোনার প্রাদুর্ভাব প্রশমিত হওয়া তো দূরের কথা, ক্রমশ তা বেড়েই চলেছে। কিন্তু দফায় দফায় দীর্ঘ লকডাউনের পরে চলছে আনলক পর্ব। অর্থনৈতিক দুরবস্থার এই আবহে মানব পাচার প্রতিরোধে বিশেষ উদ্যোগ দরকার বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকার। মানুষ পাচার রুখতে এবং এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে নতুন পন্থা অবলম্বন করতে চাইছে তারা। সেই জন্য সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফ থেকে সব ক’টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির জন্য একটি ‘অ্যাডভাইজ়রি’ বা পরামর্শ-নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রের ওই অ্যাডভাইজ়রিতে বলা হয়েছে: রাজ্যগুলিকে তাদের স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, পুলিশ, শ্রম, নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতর, জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড, শিশু কল্যাণ সমিতি ছাড়াও রেল এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে নিয়ে একটি কো-অর্ডিনেশন কমিটি বা সমন্বয় সমিতি তৈরি করতে হবে। যাতে কোনও মানুষ, বিশেষত মেয়ে পাচার হলে বা তার আশঙ্কা দেখা দিলে আগে থেকেই রাজ্যের স্পর্শকাতর এলাকাগুলির উপরে কড়া নজর রাখা যায় এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো যায়। রাজ্যের তরফে পুরো বিষয়টির উপরে নজর রেখে সংশ্লিষ্ট শিবিরের সঙ্গে পর্যালোচনাও করতে বলা হয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, মানব পাচার রোধে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকেও যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় পরামর্শ-নির্দেশিকায়। একেবারে নিচু তলা থেকে এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই জন্য নতুন কে বা কারা গ্রামে আসছে, তারা কোথায় যাচ্ছে— তার খতিয়ান রাখার জন্য একটি ‘রেজিস্টার বুক’ তৈরি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই সব বিষয়ে পঞ্চায়েতগুলিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এই অ্যাডভাইজ়রিতে। জোর দেওয়া হয়েছে পুলিশের প্রশিক্ষণের উপরেও। বলা হয়েছে, যে-সব পুলিশকর্মী মানব পাচার সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করেন, বিশেষ করে শিশুদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সেই সঙ্গে ‘সায়েন্টিফিক ডেটা কালেকশন’ বা বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে মানুষ পাচার সংক্রান্ত আইনকানুন নিয়ে নিয়মিত বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে ওই সব পুলিশকর্মীর জন্য।
কেন্দ্রের এই অ্যাডভাইজ়রিকে স্বাগত জানিয়ে দিল্লির স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফ থেকে ঋষিকান্ত বলেন, মানব পাচার রোধেই এই পদক্ষেপ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওই পরামর্শ-নির্দেশিকা প্রকাশের আগেই অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের শিশু রক্ষা কমিশন বলেছিল, অতিমারি করোনা এবং ঘূর্ণিঝড় আমপানের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির পঞ্চায়েত, পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে নিয়ে মানব পাচার রোধের জন্য একজোট হয়ে সচেতনতা প্রচার করতে হবে এবং নজরদারি চালাতে হবে।