কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ছবি পিটিআই।
জিএসটি ক্ষতিপূরণ মেটানো নিয়ে মোদী সরকারের সঙ্গে বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলির বিবাদ সুপ্রিম কোর্টে গড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সেই আইনি সংঘাতের আগে আজ সন্ধির বার্তা দিল কেন্দ্র। নিজের অবস্থান অনেকখানিই বদলে ফেলে মোদী সরকার জানাল, তারাই ১.১ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নেবে। কিন্তু তার পরে রাজ্যগুলিকে তা ঋণ হিসেবেই দেওয়া হবে।
এত দিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের অবস্থান ছিল, লকডাউনের জন্য জিএসটি থেকে রাজ্যগুলির আয় কম হলেও সেই ক্ষতি পূরণ করা কেন্দ্রের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, জিএসটি সেস থেকে যথেষ্ট আয় হয়নি। অতএব রাজ্যগুলি ঋণ নিয়ে ক্ষতি মেটাক। উল্টো দিকে পশ্চিমবঙ্গ, কেরলের মতো বিরোধী দল এবং রাজস্থান, পঞ্জাবের মতো কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যগুলির দাবি ছিল, কেন্দ্র নিজে ঋণ নিয়ে ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিক। কিন্তু কেন্দ্র তা মানতে রাজি হয়নি। উল্টে যে ২১টি রাজ্য সীতারামনের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে, তাদের সুরাহা পাইয়ে দিয়ে অন্য রাজ্যগুলির উপরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছিল।
আজ সকালেই কেরলের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাক হুঁশিয়ারি দেন, জিএসটি ক্ষতিপূরণ নিয়ে কেন্দ্রের পক্ষপাতদুষ্ট এবং বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে কিছু রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে যেতে চলেছে। আগামিকাল মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও তিনি জানান। এর পরেই সন্ধ্যায় অবস্থান বদলায় কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক।
আরও পড়ুন: গত আড়াই মাসে সর্বনিম্ন দৈনিক মৃত্যু
প্রাথমিক ভাবে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের মতে, কেন্দ্র কিছুটা নিজের অবস্থান বজায় রেখে, কিছুটা রাজ্যের কথা মেনে নিয়ে একটা মধ্যপন্থা নিল। নবান্ন সূত্রের খবর, কেন্দ্রের নতুন প্রস্তাব নিয়ে শুক্রবার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ও অন্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, সব রাজ্য রাজি হবে ধরে নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, চলতি অর্থ-বছরে জিএসটি থেকে রাজ্যগুলির যে ১.১ লক্ষ কোটি টাকা কম আয় হবে বলে অনুমান, তার সবটাই কেন্দ্র ঋণ নেবে। কিন্তু সরাসরি ক্ষতিপূরণ না-করে সেই টাকা রাজ্যগুলিকে ঋণ দেওয়া হবে। এতে কেন্দ্রের রাজকোষ ঘাটতি বাড়বে না। রাজ্যের মূলধনী আয়ের খাতায় কেন্দ্রের ঋণ দেখানো হবে। তবে রাজ্যের রাজকোষ ঘাটতি বা দেনার বোঝা বেড়ে যাবে। কিন্তু রাজ্যকে এই ঋণের সুদ বা আসল শোধ করতে হবে না। কারণ, ২০২২-এর জুলাইয়ের পরেও জিএসটি সেস বসিয়ে তা শোধ হবে। তা ছাড়া, রাজ্যগুলি আলাদা ভাবে ঋণ নিতে গেলে এক একটি রাজ্যের জন্য সুদের হার এক এক রকম হত। কেন্দ্র ঋণ নিলে তা হবে না।
আরও পড়ুন: এক বছরে ৩৬ লক্ষ টাকার সম্পত্তি বেড়েছে মোদীর, কমেছে শাহের
এত দিন সীতারামনের যুক্তি ছিল, কেন্দ্র ধার করলে সুদের হার বেড়ে যাবে। এখন অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, কেন্দ্র এখানে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে। ফলে কেন্দ্রের নয়, রাজ্যেরই দেনা বাড়ছে। তবে তা নেহাতই খাতায়-কলমে। কারণ, আখেরে সেই দেনা রাজ্যকে শোধ করতে হচ্ছে না।