রাহুল, সনিয়া এবং প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। ফাইল চিত্র।
গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কার্যত কোমর বেঁধে নেমে পড়ল।
সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বাধীন রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে বিজেপি চিনের থেকে অনুদান নেওয়ার অভিযোগ তোলার পরে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গাঁধী পরিবারের তৈরি তিনটি ট্রাস্টের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করছে। আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তদন্ত পরিচালনার জন্য একটি আন্তঃমন্ত্রক কমিটি তৈরি করেছে।
রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশন, রাজীব গাঁধী চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও ইন্দিরা গাঁধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট—এই তিনটি ট্রাস্টের বিরুদ্ধে বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন, আয়কর আইন ও আর্থিক তছরুপ প্রতিরোধ আইন ভাঙার তদন্ত হবে। ইডি-র একজন স্পেশ্যাল ডিরেক্টর তদন্তের নেতৃত্বে থাকবেন। আন্তঃমন্ত্রক কমিটির কাজ হবে, বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যে সমন্বয় করে তদন্তের দেখভাল করা। সরকারি সূত্রের খবর, কমিটিতে অর্থ মন্ত্রক, সিবিআই-এর কর্তারাও থাকবেন। শুধু গাঁধী পরিবার কেন, দেশের কোনও রাজনৈতিক পরিবারের বিরুদ্ধেই এ ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের কমিটি গড়ে তদন্ত অভূতপূর্ব।
শুধু চিনের কমিউনিস্ট পার্টি ও দিল্লিতে চিনের দূতাবাস নয়, ব্যাঙ্ক প্রতারণায় অভিযুক্ত, পলাতক হিরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসির সংস্থাও রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশনে চাঁদা দিয়েছিল বলে বিজেপি-র সভাপতি জে পি নড্ডা অভিযোগ তুলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলের টাকাও এই ট্রাস্টের কোষাগারে জমা পড়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সরকারি সূত্রের খবর, এই সব অভিযোগেরই তদন্ত হবে। রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশন ও রাজীব গাঁধী চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, দু’টিরই চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধী। ইন্দিরা গাঁধী মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাজকর্মও তিনি দেখাশোনা করেন। ফাউন্ডেশনের পরিচালন বোর্ডে মনমোহন সিংহ, রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধী, পি চিদম্বরম রয়েছেন। চ্যারিটেবল ট্রাস্টের বোর্ডে সনিয়ার সঙ্গে রাহুল আছেন।
তদন্তের মুখে
• রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশন, রাজীব গাঁধী চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, ইন্দিরা গাঁধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট
• প্রথম দু’টির চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধী
• আয়কর আইন, বিদেশি মুদ্রা অনুদান আইন, আর্থিক তছরুপ প্রতিরোধ আইন ভাঙার অভিযোগ
• তদন্তের নেতৃত্বে ইডি-র স্পেশাল ডিরেক্টর
• তদন্তের পরিচালনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তৈরি আন্তঃমন্ত্রক কমিটি
আরও পড়ুন: লক্ষ্য ভোট, সংগঠনে কি বদল বিজেপিতে
স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেস একে প্রতিহিংসার রাজনীতি বলে আখ্যা দিয়েছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, চিনা অনুপ্রবেশ, করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতা, অর্থনীতির সঙ্কট, পিএম-কেয়ার্স তহবিলে অস্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে না পেরেই মোদী সরকার তথা বিজেপি এখন নজর ঘোরানোর চেষ্টা করছে। লাদাখে চিনা অনুপ্রবেশ নিয়ে রাহুল নিয়মিত প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন। তিনি আজ দাবি করেছেন, মোদী সরকার ভয় দেখানোর চেষ্টা করলেও কোনও লাভ হবে না। তাঁর কথায়, “মিস্টার মোদী বিশ্বাস করেন, দুনিয়ার সবাই ওঁর মতো। উনি মনে করেন, সবাইকেই দাম দিয়ে কেনা যায় বা ভয় দেখানো যায়। উনি কোনও দিনও বুঝবেন না যে যাঁরা সত্যের জন্য লড়াই করেন, তাঁদের কেনা যায় না, ভয়ও দেখানো যায় না।” রাহুল আজ ফের ছোট-মাঝারি থেকে বড় শিল্প, ব্যাঙ্কের করুণ অবস্থা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন।
কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, তদন্তে গাঁধী পরিবারের ট্রাস্ট সব প্রশ্নের উত্তর দেবে। কিন্তু আরএসএস, ওভারসিজ ফ্রেন্ডস অফ বিজেপি, বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশন বা ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে একই রকম তদন্ত হচ্ছে না কেন? সেখানে একশো গুণ বেশি বিদেশি অনুদান আসে। কংগ্রেসের দাবি, এই তদন্ত শুরু করে মোদী সরকার সব বিরোধী দলকেই ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।
লাদাখে চিনা অনুপ্রবেশের পরে প্রধানমন্ত্রীর দিকে আঙুল তুলে কংগ্রেস অভিযোগ তুলেছিল, করোনা মোকাবিলায় তৈরি পিএম-কেয়ারস তহবিলে চিনা সংস্থার থেকে চাঁদা নেওয়া হয়েছে। তার পরেই খোদ বিজেপি সভাপতি রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে চিনের থেকে টাকা নিয়ে, চিনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পক্ষে সওয়াল করার অভিযোগ তোলেন। ১৯৯১-তে রাজীব গাঁধী নিহত হওয়ার পরে তাঁর নামে ফাউন্ডেশন তৈরি হয়। ২০০২-এ রাজীবের নামে চ্যারিটেবল ট্রাস্ট তৈরি হয়। দু’টিরই ঠিকানা দিল্লির রাজেন্দ্র প্রসাদ রোডের জওহর ভবন। ইন্দিরার নামাঙ্কিত ট্রাস্টের ঠিকানা ১, আকবর রোড। এই বাড়ির সামনেই দেহরক্ষীর গুলিতে ইন্দিরা নিহত হয়েছিলেন। সেখানে ইন্দিরা ও রাজীবের স্মৃতি সংগ্রহশালা রয়েছে।
নড্ডার অভিযোগ ছিল, ২০০৫ থেকে ২০০৯, চিনের মতো দেশ ফাউন্ডেশনে চাঁদা দিয়েছে। প্রতি বছর কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্য লুক্সেমবুর্গ থেকে টাকা এসেছে। ইউরোপীয় কমিশন, ইউএনডিপি, হু, ভারতে ব্যবসায়িক স্বার্থ থাকা বিদেশি এনজিও সেখানে চাঁদা দিয়েছে। কংগ্রেস নেতা, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের অভিযোগ, পিএম-কেয়ারস-এর অস্বচ্ছতা, চিনা অনুপ্রবেশ, করোনা মোকাবিলার মতো বিষয়ে প্রশ্ন হজম করতে না পেরেই এই তদন্ত।