অমিত শাহের সঙ্গে মুখ্য তথ্য কমিশনার সুধীর ভার্গব। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: প্রেম সিংহ
নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাজকর্ম এতটাই স্বচ্ছ যে তথ্যের অধিকার আইন (আরটিআই) প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ কমে আসছে— আজ দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের বার্ষিক অনুষ্ঠানে এমনটাই দাবি করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর বক্তব্য, সরকার নিজের থেকেই তার কাজের খতিয়ান জনসাধারণের সামনে তুলে ধরছে। ফলে আরটিআই প্রয়োগ করে তথ্য জানার জন্য আবেদনের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেকটাই কমে গিয়েছে।
সরকারি কাজে স্বচ্ছতা আনতে ও আমজনতার কাছে সে ব্যাপারে জবাবদিহি দিতে ২০০৫ সালে তথ্যের অধিকার আইন পাশ করেছিল তৎকালীন মনমোহন সিংহের সরকার। সেই আইন প্রয়োগ করে গত ক’বছরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে এনেছেন তথ্যের অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা। কিন্তু আজ আরটিআই দিবসে শাহের দাবি, যত দিন যাচ্ছে, মানুষের সরকারি তথ্য জানার আগ্রহ তত কমে আসছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছে। সমস্ত সরকারি প্রকল্পের খুঁটিনাটি এখন সেই মন্ত্রকের ওয়েবসাইটেই পাওয়া যাচ্ছে। তাই আবেদনের সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে।’’ শাহের মতে, আইন থাকা সত্ত্বেও আবেদন কমে আসাটাই হল সরকারের প্রকৃত সাফল্য।
কিন্তু শাহের এই যুক্তি মানতে নারাজ বিরোধীরা। তাঁদের মতে, মোদী সরকার দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেই যে ভাবে আরটিআই-কে লঘু করেছে, তাতে ওই আইনের উপর মানুষের আর ভরসা নেই। প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসে তথ্য কমিশনারদের বেতন ও কাজের মেয়াদ ঠিক করার ক্ষমতা নিজের হাতে নিতে বিল আনে কেন্দ্র। বিরোধীদের পাশাপাশি সে সময়ে এ নিয়ে সরব হন সাত প্রাক্তন মুখ্য তথ্য কমিশনার। অভিযোগ, এ ভাবে আসলে তথ্য কমিশনারদের হাতের পুতুল করতে চায় সরকার। বিরোধিতা সত্ত্বেও সংসদে পাশ হয়ে যায় সেই বিল।
এক কংগ্রেস নেতা আজ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করতে বললেও তা করা হয় না। তা ছাড়া, যে সরকারের অর্থমন্ত্রীর কাছে নোট বাতিল নিয়ে তথ্য থাকে না, তার কাছে তথ্যের স্বচ্ছতা নিয়ে কিছু আশা করাই অনুচিত।’’
তথ্যের অধিকার আন্দোলনের কর্মী সুভাষচন্দ্র আগরওয়াল বলেন, ‘‘সমীক্ষা বলছে, আরটিআই মেনে সরকার যদি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তথ্য প্রকাশ করে, তা হলে আবেদনের সংখ্যা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তা ছাড়া, সরকার আরটিআইয়ের যাবতীয় প্রশ্নোত্তর ওয়েবসাইটে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে নতুন করে আরটিআই করার আগে সেগুলি দেখে নেওয়া যায়। কিন্তু সেটা কখনওই সম্ভব হয় না। ফলে তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদনের সংখ্যা কমিয়ে ফেলা বাস্তবে সম্ভব নয়।’’