প্রতীকী চিত্র।
প্রথমে মানুষকে মোটা টাকা বিদ্যুতের বিল মেটাতে হবে, পরে তিনি ভর্তুকির টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাবেন— বিদ্যুৎ আইনে বদল করে কেন্দ্র এই নতুন ব্যবস্থা করতে চাইছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপত্তি তুলেছিলেন। চিঠি লিখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। আজ কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী রাজ কুমার সিংহ সেই অভিযোগ ‘অসত্য’ বলে উড়িয়ে দিলেন।
বিদ্যুৎমন্ত্রীর দাবি, কেন্দ্রের প্রস্তাব একেবারেই এ রকম নয়। কেন্দ্র বলছে, রাজ্য সরকার বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থায় গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে আগাম ভর্তুকি জমা করবে। তার পরে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ বিলের বাকি টাকা মেটাবেন। মমতা প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছিলেন, নতুন আইনে প্রথমে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল মেটাতে হবে। তার পরে তাঁরা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভর্তুকির টাকা পাবেন। আজ বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা বলছি, রাজ্য প্রথমেই ভর্তুকি দিয়ে দেবে। রাজ্য যদি ভর্তুকি দিতে দেরি করে, তার জন্য যদি কোনও গ্রাহক বিল মেটাতে না পারেন, তা হলেও চার মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ কাটা হবে না।’’
বিদ্যুৎ আইন সংশোধন করার জন্য কেন্দ্র সংসদের আগামী অধিবেশনেই বিল আনতে চাইছে। কেন্দ্রের অবস্থান হল, এই বদল বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সংস্কারের লক্ষ্যে। এতে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির লোকসান কমবে। বাজার থেকে অতিরিক্ত ধার করতে হলে রাজ্যকে যে সব শর্ত পূরণ করতে হবে, তার মধ্যেও কেন্দ্র এই বিদ্যুৎ সংস্কার কার্যকরর করার শর্ত রেখেছে।
কিন্তু মমতা এই বিলের খসড়া নিয়ে আপত্তি তুলে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ বিলকে ‘জনবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে মমতা একাধিক আপত্তি তোলেন। তাঁর মূল আপত্তি ছিল, রাজ্যের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করে কেন্দ্র বিদ্যুতের মাসুল ঠিক করার অধিকার পুরোপুরি নিজের হাতে নিয়ে নিতে চাইছে।
আজ কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রীর জবাব, ‘‘কেন্দ্র বা রাজ্য কেউই বিদ্যুতের মাসুল ঠিক করে না। রাজ্যের বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন মাসুল ঠিক করে। অনেক ক্ষেত্রে কমিশন রাজ্যের ইশারায় মাসুল বাড়ায় না। তার ফলে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলি লোকসানে পড়ে। লোকসানের ঠেলায় বিদ্যুৎ না কিনে লোডশেডিং করে। টাকার অভাবে ট্রান্সফর্মার পুড়ে গেলেও সারানো হয় না। এ সবের খেসারত আখেরে সাধারণ মানুষকেই দিতে হয়।’’
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর আরও অভিযোগ ছিল, কেন্দ্র বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির জন্য কিছু পরিমাণে অপ্রচলিত বিদ্যুৎ কেনা বাধ্যতামূলক করছে। বেশি দামে অপ্রচলিত বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে বণ্টন সংস্থাগুলির উপরে বোঝা বাড়বে। রাজ কুমারের জবাব, ‘‘মমতাদিদি কি পরিবেশ নিয়ে চিন্তিত নন? অপ্রচলিত বিদ্যুতের ব্যবহার না বাড়ালে উষ্ণায়ন বাড়বে, সমুদ্রের জলস্তর বাড়বে। পশ্চিমবঙ্গ তো এমনিতেই উপকূলবর্তী রাজ্য।’’ বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে নতুন ইসিইএ (ইলেকট্রিসিটি কনট্র্যাক্ট এনফোর্সমেন্ট অথরিটি) নামের সংস্থা তৈরির প্রস্তাব নিয়েও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আপত্তি তুলেছিলেন। বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেন, ‘‘বহু বিদেশি সংস্থা, পেনশন তহবিল বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে লগ্নি করতে আসছে। সেখানে চুক্তি রূপায়ণের ব্যবস্থা করতেই হবে।’’
বিদ্যুৎ আইনে বদল করে একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতা বলেছিলেন, এ ভাবে রাজ্যের ক্ষমতা খর্ব করতে চাওয়া কেন্দ্রের ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’র ইঙ্গিত। তা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সঙ্গে খাপ খায় না। আজ বিদ্যুৎমন্ত্রীর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রের উদ্দেশ্য বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সংস্কার। যাদের কায়েমি স্বার্থ রয়েছে, তারা এটাকে আটকাতে চাইছেন। সমস্যা হল, অফিসাররা মুখ্যমন্ত্রীদের ঠিক মতো বোঝাচ্ছেন না। অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’’ রাজ্যের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, রাজ্য চাইলে কাউকে নিখরচায় বিদ্যুৎ দিতে পারে। কিন্তু সেই টাকাটা ভর্তুকি হিসেবে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থায় ওই ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে জমা করে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার লোকসান বাড়বে না।’’
ঘটনা হল— মমতা একা নন, অন্য বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কিছু বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীও এই খসড়া বিল নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। মমতা নিজেও প্রায় এক ডজন অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী নেতাকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। পঞ্জাব-রাজস্থান-ছত্তীসগঢ়ের মতো কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে সেই তালিকায় অন্ধ্রপ্রদেশের জগন্মোহন রেড্ডি, তেলঙ্গনার কে চন্দ্রশেখর রাও, ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেনের মতো মুখ্যমন্ত্রীরাও ছিলেন। আজ রাজ কুমার জানিয়েছেন, বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লিখছেন।
রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় আজ আর কে সিংহের জবাব প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘রাজ্যের বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রী লিখিত ভাবে কেন্দ্রকে জানিয়েছেন। কেন্দ্র তার লিখিত উত্তর দিক। পরে আমাদের বক্তব্য জানাব।’’