ছবি পিটিআই।
লাভ-লোকসানের অঙ্কে আটকে থাকছে পেট্রল-ডিজেলের দাম কমার আশা।
পেট্রল-ডিজেলের দাম নিয়ে আমজনতার মনে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তা মোদী সরকার ভালই টের পাচ্ছে। জ্বালানির দামের ধাক্কায় বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হারও বাড়ছে। কিন্তু মোদী সরকার পেট্রল-ডিজেলের দাম কমানোর ভাল-মন্দ বিচার করতে গিয়ে দেখছে, তাতে মূল্যবৃদ্ধির হার বিশেষ কমবে না। উল্টে পেট্রল-ডিজেলের উপর কর ছাঁটাই করতে গেলে, সরকারের আয় অনেকখানি কমে যাবে। ফলে পেট্রল-ডিজেলের দাম না-কমার দিকেই সম্ভাবনা ঝুঁকে থাকছে।
অর্থ মন্ত্রকের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘মে-জুন মাসের অনেকখানি সময় কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে লকডাউন ছিল। পেট্রল-ডিজেল বিক্রি কম হয়েছে। জ্বালানিতে উৎপাদন শুল্ক বাবদও কম আয় হয়েছে। এখন যদি আমরা পেট্রল-ডিজেলে উৎপাদন শুল্ক ১০ টাকা কমাই, তা হলে রাজকোষ ঘাটতি ০.৬ শতাংশ বেড়ে যাবে।’’
পেট্রলের দাম সেঞ্চুরি পার করে ফেলেছে। ডিজেলের দাম নম্বইয়ের ঘরে ঢুকে পড়েছে। জ্বালানির দাম বাড়ায় পরিবহণের খরচ বেড়েছে। ফলে সব জিনিসপত্রেই তার প্রভাব পড়েছে। জুন মাসেই পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার ১২.০৭ শতাংশে পৌঁছেছে। এখন পেট্রল-ডিজেলে দাম কমিয়ে কি সরকার মূল্যবৃদ্ধি কমানোর চেষ্টা করবে?
অর্থ মন্ত্রকের ওই কর্তার জবাব, ‘‘আমরা যদি কর কমিয়ে পেট্রল-ডিজেলের দাম লিটারে ১০ টাকাও কমাই, তা হলে মূল্যবৃদ্ধির হার মাত্র ০.২ শতাংশ কমবে। তাতে আর কতটুকু লাভ হবে? কিন্তু তা করতে গিয়ে রাজকোষ ঘাটতি অনেকখানি বেড়ে যাবে।’’ এমনিতেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন চলতি বছরের বাজেটে ৬.৮ শতাংশ রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রকের সকলেরই সংশয়, বছরের শেষে ঘাটতি আরও বেশি হবে। তার উপরে পেট্রল-ডিজেল থেকে কর বাবদ আয় কমে গেলে, ঘাটতি বেড়ে যাবে।
পেট্রল-ডিজেলের দাম কমানো নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বেশ কিছু দিন ধরেই সরকারের সঙ্গে দৌত্য শুরু করেছে। কারণ, জ্বালানির দামের ধাক্কায় মূল্যবৃদ্ধির হার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লক্ষ্যমাত্রার বাইরে চলে গিয়েছে। উল্টোদিকে অর্থ মন্ত্রক সংসদে যুক্তি দিয়েছে, কোভিডের বছরে জ্বালানির কর থেকে আয়ই পরিকাঠামো তৈরি, অন্যান্য উন্নয়নের কাজে খরচ হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রকের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, পেট্রল পাম্পগুলি সরকারের কাছে কর আদায় কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে কর আদায় করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। পেট্রল পাম্পে গাড়ি-বাইকে তেল ভরানো হলেই সরকারের আয় হয়। গত বছর, ২০২০-২১-এ যেমন অন্যান্য কর থেকে আয় এক শতাংশের কম বেড়েছিল। কিন্তু পেট্রল-ডিজেলের শুল্ক থেকে আয় ৮৮ শতাংশ বেড়েছিল। কারণ, গত বছরের মে মাসে পেট্রলে শুল্ক ১০ টাকা, ডিজেলে ১৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।
সূত্রের খবর, বিজেপির তরফ থেকে পেট্রল-ডিজেলের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে বলে সরকারকে জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকারি সূত্রের মতে, এখনই সামনে কোনও নির্বাচন নেই। ফলে দাম কমাতেই হবে, এমন কোনও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতাও নেই। তবে তা সত্বেও সাধারণ মানুষকে সুরাহা পাইয়ে দেওয়ার রাস্তা খোঁজা হচ্ছে।