লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী আজ বলেন, বিরোধীরা এর আগেই পূর্বাভাস করেছিলেন যে পাঁচ রাজ্যে ভোটের পরই সরকার জ্বালানির দাম বাড়াবে। তৃণমূল, বাম, এনসিপি, ডিএমকে-র সাংসদরা স্লোগান তোলেন।
প্রতীকী ছবি।
আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় রান্নার গ্যাস, পেট্রল, ডিজ়েলের দাম বাড়বে, তা জানাই ছিল। সোমবার রাতে পেট্রল, ডিজ়েল, রান্নার গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার পরে রাজনৈতিক স্তরে তার বিরোধিতা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ কী ভাবে সামাল দেওয়া হবে, তা নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করলেন।
উত্তরপ্রদেশের ভোটে আগে প্রায় চার মাস জ্বালানির দাম বাড়েনি। উত্তরপ্রদেশের ভোটগ্রহণ ৭ তারিখে মিটে যাওয়ার পরেও গত দু’সপ্তাহ দাম বৃদ্ধি ঠেকিয়ে রাখা হয়েছিল। সরকারের চিন্তা হল, এ বার দাম বাড়তে শুরু করায় তার ধাক্কা সার্বিক ভাবেই মূল্যবৃদ্ধির উপরে পড়বে। সূত্রের খবর, অন্তত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের স্বস্তি দিতে দ্রুত মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হতে পারে।
দীর্ঘ দিন শান্ত থাকার পরে আজ সংসদের দুই কক্ষই জ্বালানির দাম বৃদ্ধি নিয়ে উত্তাল হয়েছে। রাজ্যসভার অধিবেশন দু’দফায় মুলতুবি করে দিতে হয়েছে। লোকসভায় কংগ্রেসের মাণিকম টেগোর রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা চেয়ে মুলতুবি প্রস্তাব এনেছিলেন। স্পিকার ওম বিড়লা তাতে সায় না দেওয়ায় কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, এনসিপি, বাম, এমডিএমএকে, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, ন্যাশনাল কনফারেন্সের মতো বিরোধী দলের সাংসদরা একসঙ্গে ‘ওয়াক আউট’ করেন।
আর রাহুল গান্ধী আজ টুইট করে মোদী সরকারকে কটাক্ষ করে বলেছেন, গ্যাস, তেলের দামে ‘লকডাউন’ উঠে গেল। সরকার এ বার দামের ‘বিকাশ’ করবে। মূল্যবৃদ্ধির অতিমারি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে উনি থালা বাজাতে বলবেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের ধাক্কায় আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম বেড়েছে। তার জেরেই জ্বালানির দাম বেড়েছে। কংগ্রেসের পাল্টা যুক্তি, ২০১৪-র ২৬ মে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় অশোধিত তেলের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ১০৮ ডলারের ঘরে। সে সময় পেট্রলের দাম ৭১ টাকা, ডিজ়েলের দাম ৫৫ টাকার ঘরে ছিল। আজও অশোধিত তেলের দাম ১০৮ ডলারের ঘরে। অথচ পেট্রলের দাম ৯৬ টাকার উপরে, ডিজ়েলের দাম ৮৭ টাকার উপরে। ২০১৪-র ১ মার্চ রান্নার গ্যাসের দাম ছিল সিলিন্ডার প্রতি ৪১০ টাকা। আজ তা ৯৭৬ টাকা। তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন নরেন্দ্র মোদীর ২০১২-র ২৩ মে-র টুইট তুলে ধরেছেন। গুজরাতের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী লিখেছিলেন, পেট্রলের দামের বৃদ্ধি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের ব্যর্থতা। এতে গুজরাতের মানুষের উপরে বোঝা চাপবে।
লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী আজ বলেন, বিরোধীরা এর আগেই পূর্বাভাস করেছিলেন যে পাঁচ রাজ্যে ভোটের পরই সরকার জ্বালানির দাম বাড়াবে। তৃণমূল, বাম, এনসিপি, ডিএমকে-র সাংসদরা স্লোগান তোলেন। তেলের উপরে শুল্ক কমিয়ে সাধারণ মানুষকে সুরাহা দেওয়ার দাবি তোলেন বিরোধীরা। বিরোধীদের যুক্তি, ২০১৪ থেকে গত আট বছরে মোদী সরকার পেট্রল-ডিজ়েলে শুল্ক চাপিয়ে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা উসুল করেছে। এ বার শুল্ক কমিয়ে দাম কমানো হোক।
প্রতিবাদ জানিয়ে ‘ওয়াক আউট’-এর আগে লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পেট্রল, গ্যাস এবং রান্নার গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গিয়েছে। সরকারকে অনুরোধ করছি দাম কমিয়ে আগের জায়গায় নিয়ে যেতে।” এসপি-র রাজ্যসভার সাংসদ জয়া বচ্চন বলেন, ‘‘এমনই তো হওয়ার ছিল। আমরা মানুষকে বারবার বলেছিলাম,বিজেপি জিতলে তেলের দাম আকাশ ছুঁতে চলেছে। সেটাই হচ্ছে।’’
রাজ্যসভাতেও তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন কেরোসিন এবং রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে জিরো আওয়ারে আলোচনার দাবি জানিয়েছিলেন। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুও সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন। প্রতিবাদেই ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল ও অন্যান্য বিরোধীরা। দু’দফায় বেলা দুটো পর্যন্ত অধিবেশন স্থগিত হয়ে যায়।