নির্মলা সীতারামন।
লকডাউনের ধাক্কা থেকে অর্থনীতিকে উদ্ধার করতে মোদী সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করার পরেও বাজারে চাহিদা নেই। বিক্রিবাটা হচ্ছে না। মানুষের হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়ার দাবি উঠলে মোদী সরকারের যুক্তি ছিল, বাজারহাট বন্ধ। টাকা জোগালেও খরচ হবে না।
এখন লকডাউন উঠে গিয়েছে। বাজারহাটও খুলেছে। সামনেই দুর্গাপুজো, দশেরা, দীপাবলি থেকে শুরু হয়ে বড়দিন, নতুন বছর পর্যন্ত উৎসবের মরসুম। গাড়ি-বাইক থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রস্তুতকারী সংস্থা, ব্যবসায়ীরা অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর, এই তিন মাসের দিকেই তাকিয়ে থাকেন। উৎসবের মরসুমে বিক্রিবাটা বাড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে মোদী সরকার দ্বিতীয় দফায় দাওয়াই দিতে চলেছে। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, দুর্গাপুজোর আগেই ‘স্টিমুলাস প্যাকেজ’ ঘোষণা হবে। বিক্রিবাটা বাড়ানোর পাশাপাশি নজর থাকবে কর্মসংস্থান তৈরিতেও।
লকডাউনের ধাক্কা কাটাতে প্রথম দফায় মোদী সরকারের ঘোষিত আত্মনির্ভর ভারত ও প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ রোজগার যোজনার অঙ্ক ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। সরকারি সূত্রের মতে, দ্বিতীয় দফার দাওয়াইয়ের পরিমাণ প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। কেন্দ্র ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে পরিকাঠামো তৈরি করতে ১০০ লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে প্রাথমিক ভাবে অন্তত ২০টি প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেওয়ার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। যে সব প্রকল্পে অল্প সময়েই দ্রুত কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
লকডাউনের পরে পরিযায়ী শ্রমিকেরা গ্রামে ফেরায় মনরেগা বা একশো দিনের কাজের প্রকল্পই একমাত্র সহায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মোদী সরকার গ্রামের পাশাপাশি শহরের জন্যও একই রকম রোজগার গ্যারান্টি প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা করছে। দ্বিতীয় দফায় আর্থিক দাওয়াইয়ের অঙ্গ হিসেবেই তা ঘোষণা হবে। প্রাথমিক ভাবে টিয়ার-ফোর ও টিয়ার-থ্রি শহর, অর্থাৎ যে সব শহরের জনসংখ্যা ১০ থেকে ২০ হাজার এবং ২০ থেকে ৫০ হাজারের মধ্যে, সেখানেই এই সব প্রকল্প চালু হবে।
লকডাউন উঠে গেলেও কোভিডের সংক্রমণের ভয়ে এখনও সব ক্ষেত্রে ঠিক মতো কাজ শুরু হয়নি। এ দিকে এপ্রিল-জুনে জিডিপি ২৩.৯ শতাংশ সঙ্কোচন হয়েছে। দেশের অর্থনাতির প্রধান চালিকাশক্তি— বাজারে কেনাকাটা কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ। প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসুও মনে করছেন, এখন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দাওয়াই দিতেই হবে। আর্থিক বৃদ্ধি ও সংক্রমণের হার, দুই নিরিখেই দেশের খারাপ অবস্থার কথা তুলে ধরে কৌশিকবাবু টুইটারে লিখেছেন, “ভারতে বড় রকম মন্দা ধাক্কা দিচ্ছে। শুধু কোভিড ঠেকাতে গিয়ে এমন হয়েছে, এই যুক্তি খাটবে না। অর্থ মন্ত্রকের দিক থেকে দাওয়াই দেওয়া জরুরি।”