কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ। ফাইল চিত্র।
বিতর্কিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করছেন দেশের কৃষক সমাজের বড় একটা অংশ। বিরোধীদেরও অভিযোগ, পর্যাপ্ত আলোচনা ছাড়াই পাশ করানো হয়েছে এই আইন। কিন্তু চাপের মুখেও কেন্দ্র সরকার বার বার দাবি করছিল বিভিন্ন ‘অংশীদার’দের সঙ্গে ‘পর্যাপ্ত’ আলোচনা করেই পাশ করানো হয়েছে এই আইন। কিন্তু সম্প্রতি সর্বভারতীয় এক সংবাদ মাধ্যম কেন্দ্রের কাছে আরটিআই করে জানতে চেয়েছিল আইন পাশের আগে সেই সব আলোচনার সত্যতা প্রসঙ্গে। কিন্তু তার জবাবে কেন্দ্র জানিয়েছে, এই ব্যাপারে আলোচনার কোনও রেকর্ড তাদের কাছে নেই।
আলোচনার পথে না হেঁটে নতুন তিনটি কৃষি আইন পাশ করিয়েছে মোদী সরকার— এই অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকেই। কিন্তু সরকারের পাল্টা দাবি ছিল, যথেষ্ট আলোচনা করেই এই আইন পাশ হয়েছে। সোমবার কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর একটি ফেসবুক লাইভে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, “দীর্ঘদিন ধরে এই আইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে দেশে। অনেক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরামর্শ গ্রহণ করেছে।’’ এ মাসের শুরুতে আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদও একই দাবি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘কৃষি আইন নিয়ে আলোচনার জন্য ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ওয়েবিনার এবং ট্রেনিংয়ের আয়োজন হয়েছিল। ৯২ লক্ষেরও বেশি কৃষক সেখানে অংশ নিয়েছিলেন।’’ বিভিন্ন কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলেও দাবি করেন আইনমন্ত্রী।
বিভিন্ন পরস্পর বিরোধী তথ্য সামনে আসার পর বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে ওই সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ১৫ ডিসেম্বর আরটিআই-এর মাধ্যমে, তিনটি কৃষি বিল আইন হওয়ার আগে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যে সব আলোচনা হয়েছে সেই ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে বলেছিল। সেই সব মিটিংয়ের তথ্যও জানতে চেয়েছিল। কিন্তু ২২ ডিসেম্বর এই আরটিআই-এর উত্তরে মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বলেছেন, ‘‘এই আলোচনা নিয়ে কোনও তথ্য রাখা হয়নি।’’ অর্থাৎ মুখে দাবি করলেও কৃষি আইন নিয়ে আলোচনা সম্পর্কিত কোনও তথ্যই দিতে পারল না কেন্দ্র।
কৃষি আইন পাশ হওয়ার পর থেকেই অসন্তোষ দেখা গিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। পঞ্জাব এবং হরিয়ানাতে সেই আন্দোলন দানা বেঁধেছে। গত মাসে সেখান থেকে কৃষকরা এসে জড়ো হয়েছেন দিল্লির বিভিন্ন সীমানায়। এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রবল ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। আলোচনা করতে কেন্দ্র বিক্ষোভকারী কৃষকদের নিয়ে বৈঠক করলেও তা ভেস্তে গিয়েছে একাধিকবার। সেখানে ধরনায় বসে এখনও অবধি প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩০ জন কৃষক।
আরও পড়ুন: কটাক্ষ কাম্য নয় কৃষকদের, ড্যামেজ কন্ট্রোলে আসরে এ বার রাজনাথ সিংহ