কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও বিদেশ প্রতিমন্ত্রী মীনাক্ষী লেখি। ফাইল চিত্র।
দুর্গাপুজোকে দেওয়া ইউনেস্কোর স্বীকৃতি একসঙ্গে উদ্যাপন করতে সবাইকে ‘সঙ্কীর্ণ রাজনীতির’ ঊর্ধ্বে ওঠার আহ্বান জানালেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও বিদেশ প্রতিমন্ত্রী মীনাক্ষী লেখি। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বলে জানিয়ে তিনি আজ বলেছেন, প্রতিমা ও মণ্ডপশিল্পী, প্রতিমার অলঙ্কারশিল্পী, ঢাকি, পুরোহিত, বিভিন্ন রাজবাড়ির প্রতিনিধি-সহ ৩০ জনকে সংবর্ধনা জানানো হবে ওই অনুষ্ঠানে।
মীনাক্ষী এ দিন বুঝিয়ে দেন, দুর্গাপুজোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে বিভিন্ন মন্ত্রককে নিয়ে সার্বিক ভাবে ঝাঁপিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। তিনি বলেন, ভারতে ইউনেস্কোর নোডাল এজেন্সি কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীন সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমির সহায়তায় সংশ্লিষ্ট ডসিয়েরটি তৈরি করে ইউনেস্কোতে পাঠানো হয়েছিল। আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড়ে সক্রিয় ছিল বিদেশ মন্ত্রক। অনেকের তাই প্রশ্ন, মুখে রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠার কথা বলেও মীনাক্ষী কি আদতে কেন্দ্রের হয়ে যাবতীয় কৃতিত্ব নেওয়ার রাজনৈতিক কৌশলের পথেই হাঁটলেন না? বিজেপির হিন্দুত্বের বার্তাও কি রইল না তাতে?
এ কথা ঠিক, কলকাতার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কো ‘আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে’র স্বীকৃতি দেওয়ার পরে তার কৃতিত্বের ভাগ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের ঠারেঠোরে কিছুটা রেষারেষি রয়েছে। এর আগে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে সংস্কৃতি মন্ত্রকের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আবার গত পয়লা সেপ্টেম্বর মমতার উদ্যোগেই কলকাতা জুড়ে দুর্গাপুজোর স্বীকৃতি উদ্যাপনে বিশাল মিছিল ও অনুষ্ঠান হয়েছে। মমতা অবশ্য কলকাতার পুজোর এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির নেপথ্যে গবেষকদের অবদানও স্বীকার করেছেন।
রাজ্যের প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে কলকাতার দুর্গাপুজো। কেন্দ্র সার্বিক ভাবে দুর্গাপুজোর স্বীকৃতি চেয়েছিল, কলকাতার কথা বলেনি। ইতিহাসবিদ তপতী গুহঠাকুরতার মতো বিশেষজ্ঞেরা কেন্দ্রকে বোঝান, কলকাতার দুর্গাপুজো ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে শিল্পের আবেদনে অনন্য। তখন কেন্দ্র কতকটা নিমরাজি হয়েই সেই কথা মেনে নেয়। এ দিন মীনাক্ষী যে ভাবে প্রতিটি মন্ত্রকের কৃতিত্বের কথা বলেছেন, গণতান্ত্রিক কাঠামোয় তা যে কোনও কেন্দ্রীয় সরকারের রুটিন দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে বলে প্রশাসনিক মহলের মত। এ দিনও মীনাক্ষীর বক্তব্যের কোথাও ‘কলকাতার দুর্গাপুজো’ ছিল না। শুধু দুর্গাপুজোর কথা বলে তিনি জানিয়েছেন, এ বার গরবা নাচের জন্যও একই স্বীকৃতি আনতে চায় কেন্দ্র।