প্রতীকী ছবি।
কোভিডের প্রতিষেধকের উপরে জিএসটি কোনও ভাবেই কমানো হবে না। কোভিডের চিকিৎসার জন্য ওষুধের উপরেও নয়। দু’ক্ষেত্রেই ৫ শতাংশ হারে জিএসটি আদায় করতে চায় কেন্দ্র। পিপিই-কিটেও তাই। ভেন্টিলেটরে জিএসটি ১২ শতাংশ থেকে কমাতেও কেন্দ্র নারাজ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মাস্ক পরতে বলছেন। কিন্তু তাঁর সরকার এন-৯৫ বা তিন স্তরের মাস্কের উপর জিএসটি ৫ শতাংশ থেকে কমাতে রাজি নয়। হাত ধোয়ার স্যানিটাইজ়ার থেকে শরীরের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্রেও ১৮ শতাংশ হারে কেন্দ্র জিএসটি চাপাতে চায়।
কোভিডের সময় বিভিন্ন পণ্যে কী ভাবে জিএসটি কমিয়ে মানুষকে সুরাহা দেওয়া যায়, তা নিয়ে আজ কেন্দ্র ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের জিএসটি পরিষদের বৈঠক বসেছিল। কিন্তু কেন্দ্র জিএসটি কমাতে রাজি না হওয়ায় আজ বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিও পাল্টা রুখে দাঁড়াল। পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, তামিলনাড়ু, ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী শাসিত রাজ্যের নয় জন অর্থমন্ত্রী আজ দাবি তুললেন, ভ্যাকসিন থেকে শুরু করে কোভিডের মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় এই প্রতিটি ক্ষেত্রে জিএসটি-র হার শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে।
ঐকমত্য না হওয়ায় এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সূত্রের খবর, বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, অন্য কোনও সিদ্ধান্ত হলে তিনি ‘ডিসেন্ট নোট’ দেবেন। কংগ্রেস শাসিত পঞ্জাব, ছত্তীসগঢ়ের অর্থমন্ত্রীরাও একই অবস্থান নেন। ভিডিয়ো কনফারেন্সে ডিসেন্ট নোট-এর অর্থ বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করা। গুজরাতের অর্থমন্ত্রী নিতিন পটেলও বলেন, মানবিক দিক থেকে বিষয়টি আলোচনা করা উচিত। রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের অনড় মনোভাব দেখে পিছু হটতে বাধ্য হন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ঠিক হয়, এ বিষয়ে কিছু রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে একটি গোষ্ঠী তৈরি হবে। ৮ জুনের মধ্যে ওই কমিটির রিপোর্টের পরেই সিদ্ধান্ত হবে।
জিএসটি পরিষদের আমলাদের কমিটির প্রস্তাব ছিল, ভ্যাকসিন ও অন্যান্য বাকি পণ্যে জিএসটি কমানো যাবে না। তবে অক্সিজেন, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, পালস অক্সিমিটার ও কোভিড টেস্ট কিটে জিএসটি-র হার ১২ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হোক। কিন্তু তাতেও বিরোধী শাসিত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা রাজি হননি। বৈঠকের পরে পঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী মনপ্রীত বাদল কেন্দ্রকে দুষে বলেন, “মোদী সরকারের সহানুভূতির অভাবের জন্যই কোভিড মোকাবিলার সামগ্রীর জিএসটিতে সুরাহা দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখতে হল।” উল্টো দিকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের যুক্তি, “এমন নয় যে বৈঠকে একাংশ মানবিকতার
পক্ষে সওয়াল করেছে। অন্য পক্ষ মানবিকতার বিরুদ্ধে। কোথায় জিএসটি-র হার কত হলে আখেরে মানুষের লাভ হবে, তা নিয়েই বিচার বিবেচনা হচ্ছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে আগামিকালই মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠন হবে।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে ভ্যাকসিন থেকে জিএসটি প্রত্যাহারের দাবি তুলেছিলেন। নির্মলার পাল্টা যুক্তি ছিল, সেক্ষেত্রে টিকা প্রস্তুতকারীরা কাঁচামালে মেটানো কর ছাড় পাবেন না। টিকার দাম বেড়ে যাবে। এরপর পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাবের অর্থমন্ত্রীরা শূন্য হারে জিএসটি-র দাবি জানান। যাতে করের বোঝা কমে, কর ছাড়ও মেলে। তাতেও কেন্দ্র রাজি হয়নি। আজ অমিত, মনপ্রীতরা দাবি তোলেন, শূন্য না হলে ভ্যাকসিনে জিএসটি-র হার ০.১ শতাংশ করা হোক। কিন্তু তাতেও কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক রাজি হয়নি।
জিএসটি-তে ক্ষতিপূরণ নিয়েও মোদী সরকারের সহ্গে ফের রাজ্যগুলির বিবাদের মঞ্চ তৈরি হয়েছে। জিএসটি থেকে রাজ্যগুলির রাজস্ব আয় ১৪ শতাংশ না বাড়লে কেন্দ্রের সেই ঘাটতি পূরণের কথা। কিন্তু গত বছর কোভিডের ধাক্কার পরে কেন্দ্র নিজের অপারগতা জানিয়ে দিয়েছে। এখন কেন্দ্র নিজে ঋণ করে রাজ্যকে ঋণ দিচ্ছে। আজ নির্মলা জানিয়েছেন, চলতি অর্থ বছরেও একই ব্যবস্থা বজায় থাকবে। কেন্দ্রের অনুমান, রাজ্যগুলির রাজস্ব আয়ের ঘাটতি ২.৬৯ লক্ষ কোটি টাকা হবে। তার মধ্যে বিলাসবহুল বা ক্ষতিকারক পণ্যে সেস থেকে ১.১ লক্ষ কোটি টাকা আয় হবে। বাকি ১.৫৮ লক্ষ কোটি টাকা কেন্দ্র ধার করে রাজ্যগুলিকে ধার দেবে।
সূত্রের খবর, রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র কেন্দ্রের হিসেবে আপত্তি তুলে বলেন, গত এপ্রিল থেকে এ বছর জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থনীতির ৩ শতাংশ সঙ্কোচন হয়েছে। অথচ কেন্দ্র ৭ শতাংশ বৃদ্ধি ধরে হিসেব কষছে। বাস্তবে ধার করতে হবে ২.১৩ লক্ষ কোটি টাকা। এই হিসেবে রাজ্যগুলির কেন্দ্রের কাছে ৬৩,৫০০ কোটি টাকা পাওনা। পশ্চিমবঙ্গের পাওনা ৮,৯৮৯ কোটি টাকা। অমিত দাবি তোলেন, এই অর্থ অনুদান হিসেবে রাজ্যগুলিকে দেওয়া হোক। অন্যান্য রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরাও একই দাবি তোলায় নির্মলা তাঁদের হিসেব লিখিত ভাবে জানাতে বলেন। পঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী বলেন, “জিএসটি ক্ষতিপূরণ নিয়ে কেন্দ্রের এক জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অঙ্কের শিক্ষক প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় সরকার ঝুটো রাজস্ব দেখিয়ে প্রস্তাবিত ক্ষতিপূরণ ৩৩% কমিয়ে দিচ্ছে।” রাজস্ব সচিব তরুণ বজাজ বলেন, “আমরা রাজ্যগুলিকে চিঠি লিখে জানব, কার জন্য কত ঋণ নিতে হবে। তার পরেই চিত্রটা স্পষ্ট হবে।” অবিজেপি রাজ্যগুলির দাবি, ২০২২ সালের পরেও জিএসটি বাবদ ক্ষতিপূরণ বজায় থাকুক। কেন্দ্রের বক্তব্য, এ নিয়ে আলাদা ভাবে আলোচনা হবে জিএসটি পরিষদে।